অস্থিসন্ধি প্রতিস্থাপনে ‘ক্যাস’-এর প্রয়োগ বাড়ছে। এই ‘ক্যাস’ হল চিকিৎসা পদ্ধতির শর্ট ফর্ম বা সংক্ষিপ্তসার। ‘ক্যাস’ বা ‘CAS’-এর ফুল ফর্ম– ‘Computer Assisted Surgery’। শল্য চিকিৎসার ক্ষেত্রে এটি খুবই উন্নত এবং কার্যকরী প্রযুক্তি।

কে, কবে, কোথায় এই প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়েছিলেন?

ক্যালিফোর্নিয়ার স্যাকরামেন্টোনিবাসী উইলিয়ম বার্গার ১৯৯২ সালে প্রথম এই প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়েছিলেন হিপ্ রিপ্লেসমেন্ট-এর সার্জারিতে। আর ১৯৯৭ সালে এই প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে হাঁটু প্রতিস্থাপন করেছিলেন ক্যালিফোর্নিয়ারই ফ্রেডেরিক পিকার্ড। তবে আমদের দেশে এই প্রযুক্তির ব্যবহার খুব বেশি দিন আগে শুরু হয়নি।

ম্যানুয়াল সার্জারির পরিবর্তে ‘ক্যাস’-এর প্রয়োজন হল কেন?

অস্থিসন্ধি শরীরের খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কোনও দুর্ঘটনা কিংবা ক্যালসিয়ামের অভাবে হাড় ক্ষয়ে যাওয়ার কারণে যদি অস্থিসন্ধির ক্ষতি হয়, তাহলে অনেকসময় সার্জারির প্রয়োজন হয়। আর অস্থিসন্ধি, বিশেষকরে হাঁটু কিংবা নিতম্বের হাড়ে চোট লাগলে কিংবা ভেঙে গেলে, সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা না করালে বড়ো ধরনের শারীরিক ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। সোজা ভাবে দাঁড়াতে না পারা, বিকলাঙ্গ হয়ে পড়া, এমনকী ইনফেক্শন হয়ে গিয়ে পচন ধরে রুগির জীবনহানিও ঘটতে পারে। অতএব শরীরের এইসব গুরুত্বপূর্ণ অংশে ম্যানুয়াল সার্জারি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল এতকাল। বর্তমানে ক্যাস বা সিএএস, অর্থাৎ কম্পিউটার-অ্যাসিস্টেড সার্জারির সুবিধে নিয়ে সঠিক চিকিৎসা করা যাচ্ছে এবং ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব হচ্ছে।

‘ক্যাস’ কীভাবে কাজ করে? অর্থাৎ, কম্পিউটারের সাহায্যে কীভাবে ‘নী’ এবং ‘হিপ্’ রিপ্লেসমেন্ট করা হয়?

এই টেকনোলজি বিশেষভাবে বিজ্ঞান ও কম্পিউটারের ক্ষেত্রে সর্বাধুনিক গবেষণার ফসল। এই ডিজিটাল টেকনোলজির মাধ্যমে দেহের বিভিন্ন ধরনের অস্থির সঠিক অবস্থান জানা যায় এবং এই ধারণা সার্জারির ক্ষেত্রে দারুণ ভাবে কাজে লাগে। অস্থিগুলির সঠিক অবস্থান জানার পর প্রয়োজন অনুযায়ী অস্থিসন্ধিগুলিকে জুড়ে দেওয়া যায় নিখুঁত ভাবে। ফলে, সন্ধি সঞ্চালনের প্রক্রিয়া বাধাপ্রাপ্ত হয় না। বিশেষকরে, হাঁটু এবং নিতম্বের অস্থিতে নিখুঁত অপারেশন করার জন্য অস্থি এবং অস্থিসন্ধির সঠিক অবস্থান জানাটা অত্যন্ত জরুরি। এই টেকনোলজি আমাদের সেই সুবিধেই দেয়। আর এই কম্পিউটার-অ্যাসিস্টেড সার্জারির সময় আমরা (শল্য চিকিৎসকরা) জয়েন্টের সঠিক অবস্থান জানার জন্য একটি পিন ব্যবহার করি। ওই পিনের সঙ্গে কম্পিউটারের সংযোগ থাকায়, শল্য চিকিৎসার জন্য সমস্ত তথ্য প্রকাশ পায়। ফলে, সার্জারির পর রোগি স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে।

কম্পিউটার-অ্যাসিসেটড সার্জারি বা ক্যাস-কে মাধ্যম করে জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট করলে কী কী সুবিধে পাওয়া যাবে?

  • ‘ক্যাস’ টেকনিক জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট-এর ক্ষেত্রে অসংখ্য অস্থি প্রতিস্থাপনে সার্জনকে সাহায্য করে
  • অস্থি প্রতিস্থাপন সিংহভাগ সফল হয়
  • ভুল জায়গায় অস্থির সংযোগ, ঝুঁকি কিংবা পুনরায় অপারেশন প্রভৃতি সমস্যার সম্ভাবনা প্রায় থাকে না বললেই চলে
  • অস্থি সন্ধি সঞ্চালনের মাত্রাকে সঠিক রাখতে সাহায্য করে
  • জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট-এর পর সামগ্রিক ভাবে দেহের উন্নতি ঘটাতে সাহায্য করে
  • রক্তক্ষরণের মাত্রাকে কমিয়ে দেয়
  • অপারেশনের পর সুস্থ হতে সময় কম লাগে
  • সার্জারির জন্য কম কাটাকাটি করতে হয় এবং সার্জারির পর স্টিচের দাগ প্রায় মিলিয়েই যায়
  • ইনফেকশন-এর সম্ভাবনা কমে যায়

কম্পিউটারের সাহায্যে নী এবং হিপ্ রিপ্লেসমেন্ট-এর জন্য খরচ কত?

‘ক্যাস’ সিস্টেম-এ নী এবং হিপ্ রিপ্লেসমেন্ট-এর জন্য খুব বেশি খরচ নেই। ম্যানুয়াল সার্জারির তুলনায় এই পদ্ধতিতে খরচ সামান্যই বেশি। অপারেশনের পরে হাসপাতালে কম সময় থাকতে হয় বলে, বেড ভাড়ার খরচও অনেকটাই কমে যায়।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...