ন-মাস-বচ্ছরকাল ধরে এখানে কলাপ মেলে দাঁড়িয়ে থাকে পথের বাঁকে বাঁকে। চলতে চলতে মনে হচ্ছিল এখানে কি বসন্ত ফুরোয় না? কী জানি? আমাদের ঘিরে উলটোদিকে ছুটতে থাকা সবুজের উজাড় করা আলিঙ্গন মাঝে মাঝেই বুনোফুলের রংমজলিসে ভরে উঠছে। গুচ্ছ গুচ্ছ ফুলের দল কখনও-সখনও ইনোভার উইন্ডস্ক্রিনে ঝাঁপিয়ে পড়ছে। জনহীন পাকদণ্ডি। দ্বিতীয় কোনও গাড়ি তো দূরস্থান, পথের দুপাশে ঘন অরণ্যের বাহারি ঘেরাটোপ ছাড়া কিচ্ছু নেই। মনে সন্দেহ জাগছিল ভুল রাস্তায় চলে এলাম কি না!
গাড়ি এগিয়েই চলেছে। তবু কারও দেখা নেই। কাছে-দূরে পাহাড়ের তরঙ্গমালা। শরীরে তার সবুজ-ধূসর-মেটে কত রকমের রং। তারই খাঁজে খাঁজে খেলনা-বাড়ির মতো বসতির চিহ্ন। যেখানে যাচ্ছি তার নাম জানি, তবু যেন মনে হচ্ছে এ যাত্রা বুঝি দিকশূন্যপুরের। রাস্তার মানচিত্রে বিপুল প্যাঁচ। গাড়িটা এক মুহূর্তের জন্যেও সোজা চলছে না। ডাঁয়ে-বাঁয়ে হেলেদুলে পাড়ি দিচ্ছে পাহাড়ি বাঁকে। হরিয়ানার একমাত্র হিলস্টেশন।
অচিন ঠিকানা মোরনি পাহাড়। নামটা শোনামাত্রই মন আমার ময়ূরপঙ্খি নাও। নিজের কাছেই নিজে দাবি করে বসলাম, সেখানে গেলে নির্ঘাত অনেক ময়ূরীর দেখা মিলবে। নইলে এই শৈলগহনের এমন নামই বা কেন? এখনও পর্যন্ত তেমন একটা পর্যটকদের পায়ের চিহ্ন পড়েনি মোরনি পাহাড়ে। তবু শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা মায়াবিনী মোরনির সিংহদরজা খোলা থাকে অনাহুত পথিকের জন্য।
এখানেই আছে টিক্বর তাল। মোরনি হিলস থেকে প্রায় সাড়ে দশ কিলোমিটার। পঞ্চকুলা এখান থেকে কিছুটা দূরে। পঞ্চকুলা জেলাতেই এমন মৌনী মোরনির অবস্থান। চারিদিকে শান্তির স্তব্ধতা। নরম আলোয় ভেজা প্রকৃতির বুকে আত্মগোপন করে থাকা এমন একটি জায়গায়, একা একা পথ হাঁটতেও মন্দ লাগত না। বরং মনে হয়, এই বুঝি সেই জায়গা যেখানে নিজেকে হারিয়ে আবার খুঁজে পাওয়া যাবে।
হরিয়ানার নাডা সাহিব গুরুদ্বোয়ারার উলটোদিকের রাস্তায় ঢুকে খানিকটা যেতেই দু’দিকে রাস্তা ভাগ হয়েছে। বাঁ হাতের রাস্তাটি অসমান পাথুরে। গাঁয়ের মধ্যে দিয়ে গেছে। অন্যটি সোজা পিচ বাঁধানো সড়ক। এখান থেকে মোরনি পাহাড় কিছুটা দূরে। আঁকাবাঁকা রাস্তা বেয়ে পাহাড়ের অনেকটা উপরে ওঠার পরেই চোখে পড়ল অন্য একটি রাস্তা আমাদের চলার পথে এসে মিশেছে। ওটাই মোরনি আসার সেই দ্বিতীয় পথ যেটা গাঁয়ের মধ্যে দিয়ে এসেছে। ওপথে এলে দূরত্ব কিছু কমত ঠিকই কিন্তু এমন এঁকেবেঁকে উঠে আসা পাহাড়ি রাস্তা চলার দুরন্ত মজাটাই অধরা থেকে যেত। এপথে পুলিশের প্রতিপত্তি খুব। বেশ খানিক সময় ধরে চলল জব্বর চেকিং। যাই হোক, যতই মোরনির মৌবনে প্রবেশ করতে লাগলাম, ততই মনের নন্দনকানন অদ্ভূত পুলকে শিউরে উঠতে লাগল। অসাধারণ! অপূর্ব! না কি আরও বেশি কিছু?
হরিয়ানার হোটেলে ফোন পাওয়া বলা যায় ভাগ্যের ব্যাপার। অনেক কষ্ট করে তিনজনে মিলে হপ্তাখানেক গুঁতোতে গুঁতোতে একদিন পেলাম। যদি কেউ নাক সিটকে এ সময় বলে ওঠেন যে, ‘ধুর! হোটেল বুক করে বেড়াতে এলে বেড়ানোর রোমাঞ্চটাই তো মাটি’। তাঁদের জন্য বলি, এসে হোটেল বুক করার প্ল্যান থাকলে পাহাড়ি রাস্তাতে বাসররাত্রি কাটানো ছাড়া উপায় না-ও থাকতে পারে। বিড়ালের ভাগ্যে শিকে খুব কমই ছেঁড়ে। তাই ঘর গোছানো বাঙালির মতো আগেভাগেই হরিয়ানা পর্যটনের হোটেল ‘মাউন্টেন কোয়াইলস’ বুক করে রেখেছিলাম। পাহাড়ের মাথায় আদিগন্ত সবুজ আর নীল ক্যানভাসকে ব্যাকড্রপ করে দাঁড়িয়ে আছে মাউন্টেন কোয়াইলস। বারান্দায় দাঁড়ালে নীলাচল প্রকৃতির অবাধ হাট। কেয়ারিবাগানে হলুদ গাঁদা ফুলের দলে দোলা দিয়ে যাচ্ছে আলতো শীতল হাওয়া। সবজে রঙা দোলনাটি এখন চুপটি বসে, পড়ে-আসা সকালের ঘ্রাণ নিচ্ছে। ঘরগুলো খাসা।
পৌঁছোতে পৌঁছোতে বেলা গড়িয়ে গেল। তাই আর এক মুহূর্তও হোটেলে নয়। দ্বিপ্রাহরিক আহারের হুকুম ছুড়েই ক্যামেরা কাঁধে বেরিয়ে পড়া। লনের সবুজ কার্পেটের ওপর গাড়ি রইল পড়ে। এখন এগারো নম্বরই ভালো। পিচ বাঁধানো উতরাই পাহাড়ি পথ ধরে নেমে চললাম। পাহাড়ি পথে নামবার সময় শরীরের ভেতর অদ্ভুত এক নাচন লাগে। খালি মনে হয় এই বোধহয় গড়িয়ে গেলাম। আসলে সবই মাধ্যাকর্ষণের তাল। বেশ লাগে ব্যাপারটা। বেলা বাড়লে ছবি তুলে শান্তি নেই। তবু একটু পাহাড়, খাদ, স্থানীয় জনজীবনের ছবি বন্দি করেই ফিরে আসা। হিমাচলের ভয়ংকর বিরিয়ানি খেয়ে মুখের সাথে মনটাও ঘেঁটে গিয়েছিল। দুবেলা পেটপুরে খেয়েও মনটা আমাদের উপোসি ছিল গত পাঁচদিন ধরে। কিন্তু হরিয়ানায় এসে গরম গরম বাসমতী ভাত, চমৎকার ডাল, সুস্বাদু মটর পনির আর সঙ্গে গ্রিন স্যালাড মুখে পড়তেই উদরের অভ্যন্তরে ফুরফুরে দখিন হাওয়া।
কথাতেই বলে ভেতো বাঙালি। পেটে ভাত পড়লেই দুচোখে কালঘুম হাই তোলে। কিন্তু বেড়াতে এসে এই ঘুমকে প্রশ্রয় দিলেই সব পণ্ড। সূয্যিমামা শুয়ে পড়লে না ঘোরা না ছবি, কোনওটাই হবে না। তার ওপর মাত্র একটি দিনের জন্যে মোরনি আসা। তাই সময়ের স্রোতে নোঙর বেঁধে দলবেঁধে বেরিয়ে পড়া। হোটেলের ম্যানেজার বললেন, কাছেই একটা ফোর্ট আছে। হাঁটাপথ। দারুণ ব্যাপার! ভাবিনি এখানেও রাজারাজড়ার নিদর্শন পাব।
রাস্তাটা নেমে গিয়ে আবার উঠেছে। আকাশছোঁয়া চিরগাছের চালচিত্রে ছাওয়া রাজ্যে সেই দুর্গ। রাস্তাপাশে এলোমেলো সবুজে জড়ানো সরু পথ। সকলের চোখের সামনেই আছে। তবু খুঁজে নিতে হবে তাকে। সেটা ধরে দু’পা উঠতেই ঘন হয়ে জাপটে থাকা গাছগাছালির ফাঁক দিয়ে পোড়া ইট রঙের কিছু অংশ।
রাস্তা কই? ইতিউতি চেয়ে আমিও হতবাক। চোখের সামনে ধুমসো গতরখানা নিয়ে দিব্যি দাঁড়িয়ে আছে দুর্গ। কিন্তু দুর্গের অন্দরে ঢোকার কোনও পথই নেই। লম্ফঝম্প করে এদ্দূর এসে ফিরে যেতে হবে? পিচের রাস্তাটা তো অনেক নীচে নেমে গেছে। আর দুর্গের দিকে উঠে যাওয়া পথ দূর্গের গায়েই শেষ। তাহলে ভিতরে যাবার পথ? রাস্তায় একটি-দুটি গাড়ি আর মাঝেমধ্যে একটি করে বাস ছাড়া কারও দেখা নেই। দোকানের চৌহদ্দি কিছুটা আগেই ফেলে এসেছি। আবার হয়তো আমরা ভুল পথে চলে এসেছি। অগত্যা, পেছোনো ছাড়া আর পথ নেই।ঞ্জআরে, ওই তো দুটো স্থানীয় ছেলে আর একটা বউ আসছে। ওদের জিজ্ঞেস করতেই মোরনি দুর্গে পেৌঁছোনোর সঠিক পথটা বাতলে দিল। পুলিশ চৌকির গা ঘেঁষে রাস্তা উঠেছে। খানিকটা চড়াই উঠতেই বাঁ-হাতে লাল-হলুদ-সবুজের তুলিটানে শিবমন্দিরের অবস্থান। পাশেই দুর্গের বিরাট ফটক।
দুর্গের গায়ে প্রস্তরফলকে মোরনি ফোর্টের জন্মবৃত্তান্ত। এই দুর্গটি মিরজাফর আলির উত্তরসূরিদের। কিন্তু কোনও এক কারণে দুর্গটি হস্তচ্যুত হয়। হরিয়ানার ফরেস্টস টুরিজম, এনভায়রনমেন্ট, স্পোর্টস অ্যান্ড ইউথ অ্যাফেয়ার্সের মাননীয় মন্ত্রী শ্রীমতী কিরণ চৌধুরি এই দুর্গটিকে নতুন করে সাজিয়ে তোলেন।
বিশাল ফটকের গায়ের ছোট্ট পাল্লাটা খুলতেই শিশু-বুড়োর কলতানে মুখরিত এক অন্য জগৎ। কেয়ারি সবুজ, রঙিন চেয়ার, বাহারি সোয়েটার-জামা-টুপিতে মোড়া মানুষের এ এক আনন্দ উদ্যান। সত্যি বলতে কী, প্রথম চোটে একটু ধাক্বাই খেয়েছি। ‘দুর্গ’ শব্দটা শুনলেই মনের মধ্যে ছায়া ছায়া কিছু ঐতিহাসিক মুহূর্ত ভেসে ওঠে। সেসব দিন চোখে দেখিনি ঠিকই। ইতিহাসের পাতায় তো পড়েছি। আর তখনই মনের ক্যানভাসে সিপিয়া টোনে আঁকা হয়ে গেছে যুদ্ধ, ঢাল, তরোয়াল, বল্লম আর শত্রুর মোকাবিলা করার জন্য যোদ্ধা রাজাদের দুর্গে এসে লুকিয়ে থাকা। কিন্তু ময়ূরীমহলের এই দূর্গের বাইরের প্রাচীন পাথুরে শরীরটার সাথে ভিতরমহলের বিশেষ সাদৃশ্য নেই। হাতে হাতে বল, উড়ে চলেছে দুর্গের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত। পুরোনো ঘরগুলো হাল আমলের রংবাহারে কোনও সাজানো হোটেলকে মনে করিয়ে দেয়। কিন্তু ইতিহাস কই? বর্তমানের চাকচিক্যে কি সবই কালের কবলে? নাহ্! সবটা নয়। চোখ পড়ল একদিকে। কেউ যেন বলল, ‘এদিকে আয়, আমাকে পাবি’। ইতিহাসের ছাত্র বলেই কি না জানি না, প্রাচীন ভাঙা ইটের স্তূপ দেখলেই কেমন যেন অতীতের ছায়ামানুষের গন্ধ পাই। মূল ফটকের বাঁ-হাতের সোজাসুজি হেঁটে কিছুটা সিঁড়ি বেয়ে উঠে এক হাওদামহল।উঁকি দিতেই হারাদিনের ইতিকথারা ফিরে এল। মেটেরঙা দেয়ালে ছোটো ছোটো খোপ কাটা। সেইসময় ভিতর থেকে বন্দুক তাক করে শত্রুর সঙ্গে মোকাবিলা করা হতো। ইতিহাসের সুবাস গায়ে মেখে চৌকোমতো দোতলা মহলটা এখনও দাঁড়িয়ে। মাঝখানের সবুজ চাতালে ঝুরি নামা প্রাচীন বৃক্ষ। হাল আমলের জীবনযাপনের মাঝে সে যেন ধম্মের ষাঁড়ের মতোই তার অস্তিত্বকে টিকিয়ে রেখেছে। বিকেলের রোদ ছিটোনো নবীন-প্রবীণের মিলনচত্বরটায় ঘুরে বেড়ালে, ধীরে ধীরে মন শান্ত হয়। এখানে ইতিহাসের সাথে বর্তমানের কানাকানি চলে অবিরাম।
শিবমন্দিরের পাশে দাঁড়ালে পাখির চোখে দেখা হয়ে যায় মোরনি গ্রামটিকে। পাহাড়ের মাথা থেকে এক-দেড় কিলোমিটার। স্থানীয় মানুষের মুখের ভাষায় মোরনি ‘গাঁও’ হলেও, বাড়িঘর ইট-কাঠের তৈরি। রাস্তা আর খাদের সীমারেখা ধরে হাঁটতে থাকলে বেশ কয়েকটা হোটেল মিলবে। ঢলে পড়া বিকেলের কাঁচা হলদে আলোয় মাথায় কাঠবোঝাই করে মানুষজন এখন গাঁয়ের পথে। পশ্চিমের আকাশে আগুন গোধূলি। এখানে কয়েক দণ্ড দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত না দেখলে জীবনের রসাস্বাদনের অনেকটাই অধরা থেকে যাবে।
মাউন্টেন কোয়াইলসের চৌহদ্দি থেকে অস্তগামী কুসুমসূর্যটা এক্বেবারে আমাদের চোখের উপর চোখ রেখে যেন মেঘের সাগরে ডুব দিল। সন্ধে যত নামল, জংলি ঝিঁঝিঁ শব্দটাও দিকদিগন্তে চারিয়ে বসল। আকাশভরা তারার নীচে চলল আমাদের নিশ্চুপ আড্ডা। মাঝে মাঝে কয়েকটা কথার আলাপ। রাতের পাতে খোলা আকাশের নীচেই লাচ্চা পরোটা আর কড়াই চিকেনের আমেজ। সঙ্গে চিকেন তন্দুরির স্যাঁকা উষ্ণতায় জবুথবু ক্লান্তি নামল ঘুম হয়ে।
পুবদিগন্তে আলোর ঢেউ। ঘুম জড়ানো চোখের তারায় ভোর আকাশের মায়া। ঘরে কাচের জানলাটা হাট করতেই পাহাড়ের ঘুম ভাঙল। ধীরে ধীরে স্বর্গের আলো নেমে এল মোরনি পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে। মনে হল, স্বপ্নপুরীর রাজকন্যে সোনার কাঠি ছুঁইয়ে দিল। ফুটে উঠল ছোটো ছোটো বসতি। হঠাৎ খেয়াল হল, একটাও ছবি তুলিনি। অথচ এর জন্যেই এতো সক্বাল-সক্বাল উঠে আয়োজন। মোহিনী রূপের জাদু বুঝি একেই বলে!
লোটাকম্বল গুটিয়ে সাড়ে সাতটায় ইনোভার গদিতে হেলান। দিল্লি ফেরার পথে মোরনি পাহাড়ের টিক্বর তাল দেখব। সেখানেই কী ময়ূর-ময়ূরীর দল নেচে বেড়ায়? কে জানে? রায়পুরানির রাস্তাটা আগেই ডানহাতে বেঁকে যাবে। কিন্তু সে পথে গেলে টিক্বরের টিকিটিও ছোঁয়া যাবে না। তাই সাড়ে দশ কিলোমিটার পাহাড় নেমে পাশাপাশি দুটি তাল বা লেক। প্রথমটিতে মাছের চাষ। এটা ছোটা টিক্বর তাল। পাশেই প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক সবুজ টিলা। তাকে টপকালে বড়া টিক্বর তাল। পাহাড়মেশা দিগন্তজুড়ে তালের বিস্তার। কুয়াশায় আবছা ঘন সবুজের চাদর মোড়া লেক-পাড়ের তরঙ্গায়িত নাতিউচ্চ পাহাড়। পাড়ে হরিয়ানা টুরিজমের টিক্বর তাল টুরিস্ট রিসর্ট। সংলগ্ন অঞ্চলটায় জলখাবার খাওয়ার এক নিরিবিলি বসার জায়গা। ওখানেই ব্রেকফাস্টের অর্ডার দিয়ে সোজা তালের কাছে। জলের পাড়ে নাম-না-জানা পাখির চরাচর। বোটিংয়েরও সুব্যবস্থা আছে। হরেক রঙের হংসমুখী জলবিলাসী তরণিগুলো তালের তীরে থমকে আছে। ধূমায়িত চায়ের কাপে একটা আলতো চুমুক। ঠিক সেই মুহূর্তে ডানায় হাওয়া কেটে ভেসে যাবে হালকা শীতে উড়ে আসা পরিযায়ীর দল। দূরের জনপদ, সবুজের ঢেউ খেলানো পাহাড়ি টিলা, ভেসে চলা মেছো নৌকো আর সদ্যফোটা সকালের শিরিন আলো– তিরতিরিয়ে কাঁপতেই থাকবে টলটলে অতলে। মোরনির অথৈ রূপের ঢালা লাবণ্যে সত্যিই মনে হবে, ‘হূদয় আমার নাচে রে আজিকে…’। রঙে রূপে এই অচেনা ঠিকানা সত্যিই যেন বন্য মোরনি। বুঝলাম, মন আমার ভুল দাবি করেনি। লম্বা কোনও টুরের শেষে ভ্রমণক্লান্ত বেলা কিংবা কর্মসূত্রে দৌড়ে আসা রাজধানীর পাট চুকিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে আসার। তারপর দুটো দিন, জল-জঙ্গল-পাহাড়ের মিলমিশে হরজাই হরিয়ানার মন ভোলানো এ নিরালা ময়ূরীগহন… এখন আপনার অপেক্ষায়।