‘গোয়ায় কিন্তু সানগ্লাস পরা ছেলেদের থেকে সাবধান।’ ফ্লাইট থেকে নেমে মোবাইল খুলতেই অভির মেসেজ। আমার বন্ধু অভি ছোটোবেলায় ঠাকুমার সঙ্গে গোয়া গিয়েছিল। বিকিনি পরিহিতা সুন্দরীদের দেখে তার চোখ তো ছানাবড়া। ঠাকুমা বললেন, ‘কী দেখছস্?’ পরদিন থেকে সানগ্লাস চোখে অভির সুন্দরী দর্শন। ঠাকুমা টেরও পেতেন না। মোবাইল থেকে চোখ সরিয়ে দেখি আমার দুই বান্ধবীর চোখে রোদচশমা। নিজের চোখ সানগ্লাস-এ ঢেকে অভিকে উত্তর দিলাম, ‘সানগ্লাস পরা মেয়েদের থেকেও সাবধান।’ এবার গরমটা টের পাচ্ছি। ৩৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। গোয়ায় সারাবছর এরকমই গরম থাকে। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি একটু ঠান্ডা। বন্ধুরা বলেছিল, গোয়া, শীত আর বর্ষায় সবথেকে মনোরম। কিন্তু সবার সবরকম উপদেশ উপেক্ষা করে আমরা তিন কন্যা এসেছি Travel Diary অক্টোবরের শেষে।
ডাবোলিন এয়ারপোর্ট ছোটো, কিন্তু সুন্দর। ভারতবর্ষের ক্ষুদ্রতম রাজ্যের মাঝামাঝি জায়গায়। প্রিপেড ট্যাক্সি ড্রাইভারকে আমাদের গন্তব্যস্থল ক্যালানগুটে বলতেই, তিনি জানালেন দেড় ঘণ্টা লাগবে। গরম, খিদে সব মিলিয়ে নাজেহাল অবস্থা, আরও দেড় ঘণ্টা! মাঝে একটা রেস্তোরাঁ থেকে গোয়ান বিরিয়ানি (আসলে মাংস-ভাত) প্যাক করে নিলাম, গাড়িতে খেতে খেতে চললাম ক্যালানগুটে। সুন্দর মসৃণ রাস্তা, দুপাশে পাহাড় আর সবুজ। পার হলাম মাণ্ডবী নদী। দুপাশে কখনও ধান খেত, কখনও সারি সারি নারকেল গাছ। কখনওবা মাঠের মাঝে ছোট্ট একটা গির্জা। সাইন বোর্ড-এ লেখা ক্যালানগুটে রোড, ব্যস্ত রাস্তা, অনেক গাড়ি আর মানুষের ভিড়।
একটা বিরাট পর্তুগিজ স্ট্রাকচার-এর বাংলোর সামনে গাড়ি এসে দাঁড়াল। দরজায় দুই বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, ডা. রাউল বারবারা আর ডা. মিসেস প্রিসিলা বারবারা। এঁরা দুজনেই ডাক্তার। একদিকে নিশ্চিন্ত, অচেনা জায়গায় বাড়িতে দুজন ডাক্তারও আছেন। আছে এখানে অনেককিছুই। ক্যালানগুটে উত্তর গোয়ার ব্যস্ততম জায়গা। প্রচুর দোকানপাট, খাওয়ার জায়গা, আর বিচ পাঁচ মিনিটের হাঁটা পথ। এই বিরাট বাংলো সংলগ্ন বেশ কয়েকটা কটেজ, যার একটা আগামী পাঁচ দিন আমাদের। গোয়ায় এরকম অনেক বাড়িই গেস্টহাউস হিসাবে ভাড়া দেওয়া হয়। এছাড়া ছোটো-বড়ো হোটেল তো আছেই। গোয়ানদের সঙ্গে থাকব অথচ বড়ো হোটেলের সবরকম সুবিধা থাকবে, এই ভেবেই বারবারার গেস্টহাউস-এ থাকার সিদ্ধান্ত। একটা বড়ো ঘর, তাতে সবরকম আধুনিক ব্যবস্থা আর সুন্দর অ্যাটাচড বাথ। বাড়তি পাওনা ছোট্ট বারান্দা আর সামনের বাগান।