আমাদের অনেকেরই বিদেশে ঘুরে বেড়ানোর শখ আছে। অনেকেরই শখ আছে বরফের ঘরে রাত কাটানোর বা আরামদায়ক বিছানায় শুয়ে আকাশের তারা খসা বা তুষারপাত দেখা। এরকম ইচ্ছে থাকলে আপনাদের সে ইচ্ছেও পূরণ হয়ে যাবে। কারণ আমাদের এই পৃথিবীতে এমন কিছু হোটেল আছে যা আপনার মনের ইচ্ছে পূরণ করতে পারবে। সেরকম কয়েকটি হোটেলের সন্ধান রইল এখানে। আজ তৃতীয় পর্ব।

ডে সাল : লবণ বা নুনের তৈরি হোটেল শুনলে অনেকেই অবাক হবেন জানি। কিন্তু বলিভিয়াতে আছে এই নুনের তৈরি হোটেল। প্রথমে দেখলে আপাতদৃষ্টিতে এটিকে হোটেল মনে করতে কষ্ট হতে পারে! কারণ এখানকার আসবাব থেকে শুরু করে বেশির ভাগ উপকরণই লবণ দিয়ে তৈরি। দক্ষিণ আমেরিকার বলিভিয়ায় যে-সব পর্যটকেরা বেড়াতে যান, তারা সালার ডি ইযুনিতে ডে সাল নামের এই হোটেলটিতে ছুটি কাটিয়ে যেতে ভোলেন না। সালার ডি ইযুনি হল লবণের মরুভূমি। পুরো এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে আছে লবণের চাঁই। এখানে লবণের হ্রদও দেখতে পাওয়া যায়। যেখানে আছে প্রচুর লিথিয়াম। মাত্র কয়েক বছর আগে এই লিথিয়ামের প্রাচুর্যতার  কথা জানতে পারা গেছে। আমাদের সমগ্র বিশ্বের মোট সরবরাহের প্রায় অর্ধেক লিথিয়াম এখানে মেলে।

তবে পুরো এলাকার কয়েক ফুট লবণের স্তরটি একেবারেই সমতল। সমুদ্রসীমা থেকে ৩৬৫০ মিটার উঁচুতে এই হোটেলটির অবস্থান। পর্যটকেরা এখানে এসে বিস্ময়ে মুগ্ধ হয়ে যান। যেদিকে তাকাবেন সেদিকেই খালি লবণের সাম্রাজ্য নজরে পড়বে। এই সাম্রাজ্য এতটাই বিস্তৃত যে, দূরে তাকালে বোঝার উপায় নেই আকাশ কোথায় গিয়ে মিশেছে। এরকম এক আজব জায়গাতেই গড়ে উঠেছে শুধুমাত্র নুন দিয়ে তৈরি হোটেলটি। এখানে দেওয়ালগুলো লবণ আর জল দিয়ে তৈরি ব্লক দিয়ে বানানো হয়েছে। বেডরুমের সংখ্যা ১৫টি। আশ্চর্য হবেন শুনে যে, হোটেলের আরামদায়ক বিছানাটিও কিন্তু লবণের তৈরি।

অনেক পর্যটকের বিশ্বাস করতে অসুবিধে হয় যে, এখানকার বেশিরভাগ আসবাবপত্র নুনের তৈরি। কেউ কেউ তখন জিভ দিয়ে চেটে সেগুলোর সত্যতা পরীক্ষা করেন বলেও শোনা যায়। শুধু তাই নয়, এই হোটেলটিতে আছে রেস্তোরাঁ, স্টাইল রুম, কনফারেন্স রুম, চিত্রকলা ও হস্তশিল্প কেন্দ্র এবং খেলাধূলার কক্ষ।

স্কাইওয়াকার হোটেল : বিশ্বে নানা ধরনের হোটেল আমরা দেখেছি কিন্তু মেঘফুঁড়ে আকাশের ওপরে হোটেল আছে একথা বিশ্বাস করতে খুবই অসুবিধে হয়। শুধু তাই নয় সে হোটেলে অন্যান্য হোটেলের মতো নাগরিক সুযোগ সুবিধার সবকিছুই আছে। অবাক হলেও সত্যি যে এরকম একটি হোটেল আছে এই বিশ্বে। মহাকাশে এই হোটেলটি বানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। হোটেলটি তার নিজস্ব অরবিটালে ঘুরছে যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাসের ওপরে। পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের অরবিটালে ঘূর্ণায়মান মানুষের তৈরি প্রথম হোটেল এটি। এই হোটেলের সব আয়োজনই দর্শক ও যাত্রীদের রোমাঞ্চিত করে। সেখানে যেতে হলে প্রত্যেক গ্রাহককে যেতে হয় নভোচারির প্রস্তুতি নিয়ে হোটেলের সাথে সাথে ঘুরতে হয় সব গ্রাহককেও। ঘন্টায় প্রায় ২৮ হাজার কিলোমিটার বেগে নিজের অরবিটের ওপর ঘূর্ণায়মান এই স্কাইওয়াকার হোটেল।

আমাদের পৃথিবী থেকে ৫১৫ কিলোমিটার উঁচুতে, মহাকাশে ছুটে চলেছে এই হোটেল। পৃথিবীর হোটেলগুলোতে যেসব আধুনিক সুযোগসুবিধে থাকে তার সবকিছুই আছে এখানে। তবে পার্থক্য হল যে, সেখানে সব বস্তুই বাতাসে ভেসে বেড়ায়। ঘুরপাক খায় শূন্যে। এই কারণে কম্পিউটার, টেলিভিশন, নিত্যপ্রযোজনীয় বস্তু নিজের নিজের জায়গায় আটকানো থাকে।

 

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...