মডেলিং দিয়ে কেরিয়ার Acting Career শুরু করেছিলেন অভিনেত্রী কৃতি শ্যানন। এরপর অভিনয় জীবন শুরু করেন তেলুগু ছবি নেনোক্কাদিন কে মাধ্যম করে। এই ছবিটির পর তিনি মুম্বই যান হিন্দি ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ নিতে। কিছুদিন অডিশন দেওয়ার পর, ২০১৪ সালে তিনি অভিনয়ের সুযোগ পান হিরোপন্তি ছবিতে। সাব্বির খান পরিচালিত এই অ্যাকশন-রোমান্স ছবিতে, কৃতি অভিনয় করেছিলেন টাইগার শ্রফের বিপরীতে। আর এই ছবির সাফল্যই বলিউডে প্রতিষ্ঠা দেয় কৃতিকে। সম্মান এবং পুরস্কার দুই-ই পান তিনি। জিতে নেন দুটো বিশেষ অ্যাওয়ার্ড।

হিরোপন্তি করার পর আবার তিনি একটি তেলুগু ছবিতে অভিনয় করেন। সেই ছবিটির নাম ছিল দোচায়। এরপর আবার কৃতি ফিরে আসেন মুম্বইতে। তাঁর অভিনয়ে সমৃদ্ধ হয় দিলওয়ালে এবং বরেলি কি বরফি। ২০১৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই দুটি ছবিই বক্স অফিস সাফল্য পায়।

২০২১ নেটফ্লিক্স এর ওটিটি প্ল্যাটফর্মে ২৬ জুলাই মুক্তি পায় কৃতির অভিনীত মিমি ছবিটি। ছবিটির বিষয়বস্তু যেমন আধুনিক তেমনি তাঁর অভিনয় আপামর জনসাধারণের মন জয় করে নেয়। ২০২২ এ আসতে চলেছে আদিপুরুষ, শেহেজাদা, ভেদিয়া ও গানাপাথ। আদিপুরুষ রামায়ণ এর কাহিনি নির্ভর পৌরাণিক গল্প নিয়ে তৈরি ছবি যেখানে কৃতিকে সীতার চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যাবে এবং ছবিটির ভবিষ্যৎ নিয়ে কৃতি যথেষ্ট আশাবাদী।

কৃতি দিল্লির মেয়ে তাঁর জন্ম, বেড়ে ওঠা এবং লেখাপড়া সব দিল্লিকে কেন্দ্র করে। প্রাথমিক পাঠ দিল্লি পাবলিক স্কুলে। এরপর ইলেক্ট্রনিক্স অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং-এ স্নাতক হন নয়ডার জয়াপি ইন্সটিটিউট অফ ইনফর্মেশন টেকনোলজি প্রতিষ্ঠান থেকে।

কৃতির বাবা রাহুল শ্যানন একজন চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট এবং মা গীতা শ্যানন দিল্লি ইউনির্ভাসিটির ফিজিক্স-এর প্রফেসর।

২০১৯ সালে কৃতি অনেকগুলি ছবিতে অভিনয় করেছেন। আর ২০২০ সালের লকডাউন পরবর্তী নিউ নর্মাল আবহে আবার অভিনয় শুরু করেছেন বেশ কয়েকটি ছবিতে। আর এই অবসরে কৃতি তাঁর কেরিয়ার নিয়ে শোনালেন আরও অনেক কথা।

‘অর্জুন পাতিয়ালা’ ছবিতে সাংবাদিকের চরিত্রে অভিনয় করেছেন আপনি। কীভাবে প্রস্তুত করেছিলেন নিজেকে? কার সাহায্য নিয়েছিলেন?

এই ছবির চরিত্রের জন্য কাউকে রোল মডেল বানাতে হয়নি। কারণ, ছবির বিষয়ও সিরিয়াস ছিল না এবং সাংবাদিকতার বিষয়টিও সিরিয়াস ছিল না। ফিরোজপুরের ক্রাইম রিপোর্টার-এর চরিত্রটি খুবই মজাদার। ছোটো শহরে মিডিয়া রিপোর্টিং কেমন হয়, তারই প্রতিফলন দেখতে পাবেন এই ছবিতে। যখন চন্ডীগড়-এ ছিলাম, তখন আমি রিপোর্টার-দের কাজ কিছুটা দেখেছি। ওদের কথা কিছুটা মাথায় রেখে কাজ করেছি এই ছবিতে।

এই ছবিতে আপনি এক লড়াকু মহিলার চরিত্রে অভিনয় করেছেন। আসল জীবনেও কি আপনি এরকমই?

আমি সব সময়ই খুব স্ট্রং নেচার-এর। আমার বিচার বিবেচনাও বেশ স্ট্রং। যুক্তি ছাড়া কোনও কাজ করি না আমি। ঠিক-বেঠিক বিচার বিবেচনা করে তবেই কাজ করি। অন্যায় দেখলে আমি ঠিক থাকতে পারি না, প্রতিবাদ করি।

হালকা কমেডি ছবিতে আপনি অভিনয় করেছেন সাফল্যের সঙ্গে। কীভাবে এই কমেডি চরিত্রগুলিকে এত আকর্ষণীয় করে তোলেন?

পরিচালকের নির্দেশ মতো কাজ করি আমি। অবশ্য আমার যদি মনে হয়, চরিত্রটিকে আরও সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্য কিছু নিজের ভাবনা যোগ করা দরকার, তখন আমি পরিচালকের সঙ্গে আলোচনা করে কাজ করি। কোনও চরিত্র যাতে দুর্বল মনে না হয় দর্শকদের, সেই ভাবনা আমায় মাথায় রাখতে হয়। আসলে কমেডি হল পারফেক্ট রি-অ্যাকশন। সহ-অভিনেতার সংলাপের পর যথাযথ রি-অ্যাকশন-ই, দর্শকদের আনন্দ দেবে। তাই, মজাদার সংলাপের সঙ্গে সঠিক এক্সপ্রেশন দিয়ে কমেডি অ্যাম্বিয়েস ক্রিয়েট করার চেষ্টা করি। তবে, ছবিতে যতটা মজাদার চরিত্রে আমাকে দেখেছেন, রিয়েল লাইফ-এ ততটা প্রাণোচ্ছল নই আমি। তাই হয়তো কমেডি চরিত্রে অভিনয় করে এত আনন্দ পাই।

২০১৯ এ আপনি অনেকগুলি ছবিতে অভিনয় Acting করলেন। কতটা খুশি এর জন্য?

মোট পাঁচটি ছবিতে অভিনয় করেছি ২০১৯-এ। লুকাছুপি, কলঙ্ক, অর্জুন পাতিয়ালা, হাউসফুল ৪ এবং পানিপথ। একই বছরে এতগুলি ছবি দর্শকদের উপহার দিতে পেরে খুবই আনন্দ পেয়েছি।

কোনও ছবিতে অভিনয় করতে রাজি হওয়ার আগে কী কী বিষয়ের উপর গুরুত্ব দেন?

চিত্রনাট্য শুনে আকষর্ণীয় লাগলে তবেই অভিনয় করতে রাজি হই। আর যখন চিত্রনাট্য শুনি, তখন আমি নিজেকে দর্শকের আসনে বসিয়ে নিই। তখন পুরো ছবির চিত্রনাট্য যেমন গুরুত্ব পায় আমার কাছে, তেমনই আমার জন্য বরাদ্দ চরিত্রটাও দর্শকদের ভালো লাগবে কিনা, সেই ভাবনাও আমার মাথায় থাকে। কারণ, এটা মনে রাখা দরকার যে, আজকের এই ডিজিটাল দুনিয়ায়, মুঠো ফোনে ভালো ভালো ছবি দেখার সুযোগ পাওয়া দর্শকরা প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে ছবিটা তখনই দেখবেন যখন ছবিটার মধ্যে ভালোলাগার রসদ থাকবে। আর ছবিটা ভালো কিনা, তা দর্শকমুখে প্রচারিত হয়ে যায় ছবিটা মুক্তির দু-তিন দিনের মধ্যে। অতএব, সাফল্য ধরে রাখার জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত জরুরি।

 সম্প্রতি মিমি ছবিটির সাফল্য আপনার জনপ্রিয়তাকে আরও অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে। কী বলবেন এই বিষয়ে?

আধুনিক বিষয়বস্তু নির্ভর এই ছবিটি তে আমার অভিনয় প্রশংসিত হয়েছে এটাই আমার সব থেকে বড় পাওনা। এর জন্য ১৫ কিলো ওজন আমাকে বাড়াতে হয়েছিল। সম্প্রতি পৌরাণিক একটি স্টোরিলাইনের উপর সীতার চরিত্রে অভিনয় শুরু করেছি এবং ছবিটির ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি যথেষ্ট আশাবাদী।

পারিবারিক ভাবে কেউ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে না থাকা সত্ত্বেও, আপনি সাত বছরেরও কম সময়ের মধ্যে এতটা সুযোগ এবং সাফল্য পেয়েছেন। কী বলবেন এই প্রসঙ্গে?

যা পেয়েছি, তার জন্য আমি সন্তুষ্ট। এমন একটা সময় ছিল যখন আমি কোনও পার্টিতে যেতে কিংবা স্টেজ-এ উঠতেই লজ্জা পেতাম। সেই লাজুক মেয়েটি কখনও অ্যাক্টিং কেরিয়ার সফল করতে পারবে, এটা আমার মা-বাবাও ভাবতে পারেননি। কারণ, ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির অভিধানে লজ্জা শব্দটাই নেই। পারিবারিক কোনও ফিল্মি ব্যাকগ্রাউন্ড না থাকা সত্ত্বেও যে আমি এতদূর পৌঁছোতে পেরেছি, এটা আমার কাছেও অভাবনীয়। নির্মাতা, নির্দেশকরা আমার উপর আস্থা রেখে অভিনয়ের সুযোগ দেওয়ার জন্য তাঁদের কাছে যেমন কৃতজ্ঞ, ঠিক তেমনই দর্শকদের কাছেও আমি কৃতজ্ঞ। প্রতিটা ছবিতে অভিনয় Acting করতে গিয়ে আমি অনেক কিছু শিখেছি। তবে কাজের চাপে কিছু ছবির অফার অ্যাকসেপ্ট করতে পারিনি বলেও দুঃখ পেয়েছি।

সুপারস্টারদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?

সুপারস্টারদের সঙ্গে কাজের সুযোগ পাওয়া সত্যিই সুখপ্রদ এবং শিক্ষণীয়। আসলে ওঁদের সান্নিধ্য পেলে নিজেকে আরও সমৃদ্ধ করা যায়। শাহরুখ খান এবং অক্ষয় কুমারের সঙ্গে কাজ করে আমি অনেক কিছুই শিখেছি। তাই আবারও, শাহরুখ খানের বিপরীতে থেকে আরও একটা রোমান্টিক ছবিতে কাজ করার ইচ্ছে আছে আমার। কারণ, রোমান্টিক চরিত্র খুব ভালো করেন শাহরুখ।

রূপচর্চায় কতটা সময় ব্যয় করেন আপনি?

উইদাউট মেক-আপ এবং পাজামা কুর্তিতেই বাড়ির বাইরে চলে যাওয়ার অভ্যাস আছে আমার। কিন্তু তা সবসময় সম্ভব হয়ে ওঠে না। বিকজ, আই অ্যাম অ্যান অ্যাক্ট্রেস। তাই, প্রেজেন্টেবল থাকতেই হয়। এটা কোনও চাপের বিষয় নয়, পেশাগত সৌজন্যরক্ষাও বলতে পারেন। অতএব, রূপচর্চার জন্য কিছুটা হলেও সময় ব্যয় করতে হয় বইকি। (হাসি)

২০২১ সালে আর কোন কোন ছবির কাজ করছেন?

আশা করি আগামী বছর দর্শকরা আমার অভিনীত পাঁচটি ছবি দেখতে পাবেন বচ্চন পান্ডে, আদিপুরুষ, শেহজাদা, ভেদিয়া ও গনপাথ।

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...