সতেরো বছর বয়সে, অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর হিসাবে তাঁর বলিউড ফিল্ম ইন্ডস্ট্রিতে পদার্পণ। রক অন তাঁর অভিনীত প্রথম ছবি। ফিল্মি পরিবার-এ জন্মগ্রহণ করার কারণেই, ফারহান শৈশব থেকেই খুব ক্রিয়েটিভ। ছবির জগতের সঙ্গে সম্পর্কটাও খুব অনায়াসে গড়ে উঠেছিল। নেপোটিজম নিয়ে যখন বলিউডে জমে গেছে বিতর্ক ফারহান তখনও জোরের সঙ্গে বলেন, তিনি সাহায্য নেননি কারও, নিজের কেরিয়ারে প্রতিষ্ঠিত হতে। সেই ট্যালেন্ট য়ে তাঁর রয়েছে একথা অস্বীকার করার উপায় নেই। সেই জন্যই ভালো অভিনেতা হওয়ার পাশাপাশি, ফারহান একজন সুদক্ষ নির্দেশক, প্রযোজক, স্ক্রিনপ্লে রাইটার এবং গায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন।

‘টেক লাইফ অ্যাজ ইট কামস’ এই মন্ত্রে দীক্ষিত ফারহান। তাই জীবনের সাফল্যের পাশাপাশি, অসফল মুহূর্তগুলোর কথাও কখনও ভোলেন না। দুই কন্যার পিতা ফারহান, সেই শিক্ষাই দেন তাঁর সন্তানদের, যাতে তারাও কখনও জীবনে হার না মেনে এগিয়ে য়েতে পারে। তাঁর সাম্প্রতিক ছবি ‘দ্য স্কাই ইজ পিংক’-এ তিনি একজন টিনএজার কন্যার বাবার চরিত্রেই অভিনয় করেছেন। ফলে ব্যক্তিগত জীবন আর ফিল্ম-এর চরিত্র কোথাও য়েন মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। এই সিনেমার প্রসঙ্গ টেনেই তাই তাঁকে জিগ্যেস করা হল,

স্কাই তো বরাবর ‘ব্লু’ বলেই আমরা জানি। পিংক বলা হল কেন ছবির শিরোনামে?

আসলে এই ছবির গল্প এক দূরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত একটি মেয়ে ও তার মা-বাবাকে ঘিরে। কীভাবে এই রোগের সঙ্গে যুঝেছেন গোটা পরিবার, যখন স্বাভাবিকটা আর স্বাভাবিক থাকছে না— এই তাৎপর্যই ছবির নামের মধ্যে লুকিয়ে আছে।

এরকম কোনও ইমোশনাল ট্র‌্যাক কি নিজে অতিক্রম করেছেন কখনও?

এটা সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা ইমোশনাল ট্র‌্যাক। সত্যি বলতে কী, চাই না কোনও মা-বাবাই এই পর্যায়ের মধ্যে দিয়ে যান। কারণ সন্তানের এই দূরারোগ্য ব্যাধি হলে, তাদের কোল শূন্য হয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। ফলে বাস্তবে যাঁদের এই রোগের সঙ্গে যুঝতে হয়, তারাই জানেন এই যন্ত্রণার দিকটি।

বাস্তবিক জীবনে একজন বাবা হওয়ার সুবাদে, নিজেকে এই চরিত্রের সঙ্গে কতটা আইডেন্টিফাই করতে পেরেছিলেন?

আমি প্রথম যখন এই ছবির গল্পটা শুনি, তখন মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে যায়। নির্দেশক খুব দক্ষ ভাবে চরিত্রগুলোর মধ্যে সেই যন্ত্রণার রূপ ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন। তাঁর আবেগ ও সহানুভতি মিশে চরিত্রগুলো এতটাই জীবন্ত হয়ে উঠেছে য়ে, আমি চরিত্রটার মধ্যে নতুন ভাবে নিজেকে মোল্ড করে ফেলতে পেরেছিলাম। সন্তানের পিতা হয়ে বুঝতে পারি তাদের ঘিরে কী ধরনের আবেগ কাজ করে। কোনও মা-বাবাই চান না তাঁদের সন্তানকে কোনও রোগ-ব্যাধি, বিপদ-আপদ স্পর্শ করুক। কিন্তু সবসময় যা চাওয়া হয়, তা ঘটে না।

জীবনকে আপনি কীভাবে দেখেন? কীভাবে খারাপ পর্যায়গুলোকে অতিক্রম করেন?

আমি বর্তমান ও ভবিষ্যতের মধ্যে একটা সংযোগ রক্ষার চেষ্টা করি। আজ যা করব, ভবিষ্যতে সেটার ফলই প্রতিফলিত হবে জীবনে এটা অনুভব করি। তাই বর্তমান সময়টাতেই ভালো ভাবে বাঁচার চেষ্টা করি। আমার কাছে বর্তমানটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সাফল্য পাওয়ার জন্য আমরা অনেক সময় অনেক কিছু ত্যাগ করে ফেলি। সেটা না করে নিজের পছন্দটাকেই গুরুত্ব দেওয়া ভালো। তাই যা ঘটে গেছে আর যা ঘটতে পারে দুটোর কোনওটা নিয়ে বেশি ভাবি না।

‘স্কাই ইজ পিংক’-কি আপনার চিন্তাভাবনাকে প্রভাবিত করেছে?

হ্যাঁ অনেকাংশে করেছে। ছবিটা করতে করতে আমার বারবার আনন্দ ছবিটার কথা মনে পড়েছে। ওখানে একটা ডায়লগ ছিল না? জিন্দগী বড়ি হোনি চাহিয়ে লম্বি নেহি। এই কথাটা ভীষণ দামি সেটা এখন রিযোইজ করি।

প্রিযংকা চোপড়ার সঙ্গে দ্বিতীয়বার অভিনয় করে কেমন লাগল?

ডন-২ ছবির পর থেকেই প্রিযংকার সঙ্গে আমার বন্ডিং খুব ভালো। আমরা একসঙ্গে বহুবার বেড়াতেও গেছি। এই বন্ডিংটা পর্দাতেও প্রতিফলিত হয়।

পরিবার-কে কতটা সময় দিতে পারেন?

আমার কাছে প্রত্যেকটা সম্পর্কই খুব গুরুত্বপূর্ণ। পরিবারের সাপোর্ট ছাড়া জীবনের পথে এগোনো যায় না। কাজের সূত্রে ব্যস্ত থাকলেও আমার বন্ডিং-টা ওদের সবার সঙ্গে খুব ভালো।

আপনার মতে সাফল্যের সংজ্ঞা কী?

সাফল্য জিনিসটা ব্যক্তিগত পরিশ্রমের দ্বারা অর্জন করা হলেও এটা শেয়ার করার জন্য অনেকে আপনার সঙ্গে থাকে। কিন্তু ব্যর্থ মানুষরা একা হয়ে যান। এই ধরনের মানুষদের পাশে থাকা সবচেয়ে জরুরি। তাঁদের জীবনের ওই কষ্টকর পর্যায়ক্রমে অতিক্রম করতে সাহায্য করা উচিত। প্রত্যেকটা মানুষকে সাফল্য ও ব্যর্থতা পর্যায়ক্রমে পেরোতে হয়। কারও ভেতরের শক্তি সাহায্য করে, কারও কোনও একজন বন্ধুর প্রযোজন হয়, নেতিবাচক মনোভাব ও পরিস্থিতিটা পেরিয়ে আসার জন্য।

আপনার ছবি তুফান সম্পর্কে কিছু বলুন?

একজন ন্যাশনাল লেভেল বক্সার-এর জীবন নিয়ে রাকেশ ওমপ্রকাশ মেহরার নির্দেশনায় অভিনয় করেছি ওই ছবিতে। স্পোর্টস ফিল্ম-এর প্রতি মানুষের একটা ভালোবাসা আছে এটা আগেও প্রমাণ পেয়েছি।

বহুদিন হয়ে গেল আপনাকে নির্দেশক হিসাবে দেখা যাচ্ছে না, এটা কেন?

আমার য়ে-কোনও ক্রিয়েটিভ কাজই ভালো লাগে। তাই নির্দেশনা বন্ধ করে অভিনয়ে মন দিয়েছিলাম। তারপর মাঝে অভিনয় বন্ধ রেখে গান গাওয়ায় মনোনিবেশ করি। আসলে আমার মধ্যে যখন যেটা ন্যাচারালি আসে, সেটাই করি।

সমাজসেবার সঙ্গেও আপনি যুক্ত। সে ব্যাপারে কিছু বলুন?

উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট-এর পাশাপাশি পুরুষদের জন্য তৈরি সংস্থা মর্দ-এর সঙ্গেও আমি সক্রিয় ভাবে যুক্ত। ফিল্ম-এর মতোই, কিছু ভালো সামাজিক কাজও করতে চাই।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...