দিল্লির ক্রমবর্ধমান দূষণ নিয়ে উদ্বিগ্ন ‘কমিশন অন এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট’ এবং ‘দিল্লি দূষণ নিয়ন্ত্রণ কমিটি’। এই দুই ক্ষেত্র থেকে তিরস্কার করা হচ্ছে যে, শহরের ‘রেসিডেন্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’ শীতের রাতে প্রহরীদের হিটার সরবরাহ করে না। যার কারণে তারা কাঠ, পাতা, গাড়ির টায়ার ইত্যাদি পোড়ায় এবং পরিবেশে বায়ুদূষণ ছড়ায়। কৃষকরাও নাকি আবর্জনা জমা করে পরিবেশকে দূষিত করছে। আসলে, নৈশপ্রহরী, কৃষক এবং ‘রেসিডেন্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-কে সফট টার্গেট করে, তাদের দোষারোপ করা হচ্ছে।
এই কমিশন এবং কমিটির যদি সাহস থাকে, তাহলে তাদের উচিত সেইসব ভণ্ড ধার্মিকদের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠা, যারা প্রতিদিন শহরের কোণায় কোণায় ধর্মের নামে যজ্ঞ করে ঘি, কাঠ, তেল পোড়ায়। রাস্তার ধারে অবৈধ ভাবে নির্মিত ধর্মক্ষেত্রগুলোতে বৈদ্যুতিক বাল্বের নীচেও প্রতিমার সামনে দিনরাত বর্জ্য তেল দিয়ে জ্বালানো হয় প্রদীপ। জ্বলতে থাকে অসংখ্য ধূপকাঠি এবং মোমবাতিও। এইসবের মাধ্যমেও যে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে, সেই বিষয়ে কারও কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই। আসলে, ধর্মের নামে যে দূষণ হয় এবং সেই দূষণও যে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, তা কখনও দূষণ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের নজরে পড়ে না। সেইসঙ্গে, পুজোয় ব্যবহৃৎ ফুলপাতা এবং অন্যান্য সামগ্রী জলে বিসর্জন দিয়ে জলকে যেভাবে দূষিত করা হচ্ছে, তা নিয়েও ভাবার সময় এসে গেছে।
পরিবেশে কার্বন ডাই-অক্সাইড যতটা সম্ভব কমানোর চেষ্টা করতে হবে, এটাই তো আশা করা যায় ‘দূষণ নিয়ন্ত্রণ’ কমিশন-এর থেকে। আসলে ধর্মের মোহর লাগানো থাকায়, সবার মুখ বন্ধ। কিন্তু মনে রাখতে হবে, অপকর্ম করে হাজার-লক্ষ প্রদীপ জ্বালিয়েও ভগবানকে খুশি করা যাবে না। এর ফলে শুধু দূষিত হবে পরিবেশ।
বাড়িতে খাবার রান্না হলে গ্যাস জ্বালাতেই হবে, এটুকু বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন কিন্তু ধর্মস্থানে দিনরাত মোমবাতি জ্বালিয়ে রাখা বোকামি। এ শুধু বাতিক বা কুসংস্কার ছাড়া আর কিছু নয়। এর ফলে যে কতটা দূষণ ছড়াবে, সেই হিসেব করার সাহসও কারও নেই। আর নৈশপ্রহরীদের ঠান্ডার হাত থেকে বাঁচানোরও বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে। নয়তো কাঠ, পাতা কিংবা গাড়ির টায়ার জ্বালানো বন্ধ করা যাবে না।
মনে রাখতে হবে, পোশাক আবিষ্কৃত হওয়ার আগেও বিশ্বজুড়ে মানুষ কয়েক শতাব্দী ধরে উষ্ণতার জন্য কাঠ, পাতা জ্বালিয়ে আগুনের প্রয়োজন মেটাতো। কিছু প্রাণী মাটির নীচে গিয়ে ঘুমোয়, কিছু প্রাণীর গায়ে এত লোম থাকে যে, তারা প্রবল ঠান্ডায়ও বেঁচে থাকতে পারে। তাই, নৈশপ্রহরী কিংবা কৃষকদের বেঁচে থাকার বিষয়টিও সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত।