দীর্ঘকালব্যাপী কোভিড অতিমারির পরিবেশ সারা বিশ্বজুড়ে সকলের জীবনকেই Mental Health কোনও না কোনও ভাবে প্রভাবিত করেছে। বাচ্চাদের জীবনে করোনা, লকডাউন ইত্যাদির প্রভাব এতটাই গভীর ভাবে ছাপ ফেলেছে, যার ফলে তাদের নিজেদেরকেই প্রতিনিয়ত এক মানসিক যুদ্ধের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যহত হচ্ছে।

বাচ্চা মানেই সে স্কুলে যাবে, পড়াশোনা করবে, সহপাঠীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব, খেলাধুলায় মাতবে। তাছাড়া স্কুলের ডিসিপ্লিন মেনে চলার ফলে তার নিজের জীবনেও একটা অভ্যাস তৈরি হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু করোনার প্রভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি একবছর ধরে বন্ধ। বাড়ির বাইরে যে-কোনও সামাজিক মেলামেশা, খেলাধুলা করার জায়গা দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকার ফলে, প্রতিটি বাচ্চাই আজ গৃহবন্দি এবং এই পরিস্থিতি তাদের Mental Health বজায় রাখবার জন্য যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিংও বটে।

বাড়িতে বসে দীর্ঘ সময় ধরে কম্পিউটার অথবা মোবাইল স্ক্রিনে চালাতে হচ্ছে স্কুলের ক্লাস, পড়াশোনা। কোনও বিকল্প নেই। ক্লাসের মাঝে গ্যাপ থাকলেও বাইরে বেরিয়ে হইহুল্লোড় করার উপায় নেই। ঘরের মধ্যেই সহপাঠীদের ছাড়াই একা সময় কাটানো। ফলে শারীরিক পরিশ্রমের ঘাটতির সঙ্গে সঙ্গে মানসিক চাপেরও মুখে পড়তে হচ্ছে বাচ্চাদের। যার কারণে খুব সহজে বাচ্চাদের Mental Health নষ্ট হচ্ছে, বাচ্চারা ধৈর্য হারিয়ে ফেলছে, বুদ্ধিও ঠিক ভাবে বিকশিত করার সুযোগ ঘটছে না। স্বাভাবিক মানসিক বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে।

সামাজিক মেলামেশা করার এই বিরতি বাচ্চাকে ঠেলে দিচ্ছে একাকিত্বের কবলে। যারা একটু বড়ো, বোঝার বয়স হয়েছে, সামগ্রিক পরিবেশ নিয়ে যথেষ্ট সচেতন তারা নিজেদের পড়াশোনা, স্কুলে যেতে না পারার দুশ্চিন্তা, অ্যাকাডেমিক প্রেশার, সঙ্গে কেরিয়ার এবং আর্থিক অনিশ্চয়তার চিন্তায় মানসিক ভারসাম্য হারাতে বসেছে। এই পরিস্থিতিতে অভিভাবকদের দাযিত্ব হচ্ছে সন্তানকে সবদিক দিয়ে বিশেষ করে মানসিক দিক থেকে পুরোপুরি সাহায্য করা।

অভিভাবকরা কীভাবে সাহায্য করতে পারেন

চারপাশের পরিস্থিতি নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করুন সন্তানের সঙ্গে। বাচ্চার মনে সুস্পষ্ট ধারণা তৈরি করতে সাহায্য করুন। তাদের বোঝান অতিমারির এই পরিস্থিতির ফলে তাদের মনের ভিতর যা অনুভতি হচ্ছে, সেটাতে কোনও অন্যায় নেই। সেটা ভয়, দুশ্চিন্তা, রাগ, দুঃখ যে-কোনও কিছুই হতে পারে। একটা ব্যাপারে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন, দীর্ঘসময় সন্তানকে একা থাকতে দেবেন না। তার সঙ্গে নানা ধরনের আলোচনা করুন।

সন্তানের মনে যা-যা প্রশ্ন রয়েছে সেগুলো মন দিয়ে শুনে সন্তানের বয়স অনুযাযী উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করুন, যাতে তারা আশ্বস্ত বোধ করতে পারে। সব উত্তর আপনারও হয়তো জানা না-ও থাকতে পারে। কথোপকথন চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন, যাতে তাদের মন শান্ত হতে পারে।

বাচ্চারা যখন বোর ফিল করবে অথবা দেখবেন অল্পতেই ধৈর্য হারাচ্ছে, তখন তাদের এনকারেজ করুন রুটিন লাইফ-এর থেকে বেরিয়ে এসে, নিজেদের পছন্দমতো কোনও অ্যাক্টিভিটি করতে। সেটা বাচ্চা বিশেষে আলাদা আলাদা হতে পারে। কেউ এক্সারসাইজ করতে ভালোবাসে তো কেউ বাইরে একটু হেঁটে আসতে পারে। পছন্দের সিনেমা দেখা থেকে গল্পের বই পড়া, রান্না বা বেকিং, ফোনে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, আঁকা, নাচ, লেখালিখি যে-কোনও কিছুই হতে পারে। এতে বাচ্চার স্ট্রেস লেভেল অনেকটাই কমবে।

বাচ্চাকে নিশ্চিত করুন এই দুঃসময় একদিন কেটে যাবে। ভরসা দিন আপনি সবসময় সন্তানের পাশে আছেন। আপনারা একত্রে এই পরিস্থিতি ঠিক কাটিয়ে উঠবেন। বাড়িতে সবকিছু স্বাভাবিক নিয়মে চালাবার চেষ্টা করুন। কোনও কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন না, যা আপনার সন্তানকে হতাশার দিকে ঠেলে দিতে পারে। বাচ্চার মনে দুশ্চিন্তা হতে পারে যে, ভালো দিন আর কখনও সে দেখতে পাবে না। তার মনের এই ভয়টাকে বোঝার চেষ্টা করতে হবে, যেটা কিনা আপনার সন্তানকে অবসাদগ্রস্ত করে তুলতে পারে। অভিভাবক হিসেবে আপনাদেরই বোঝাতে হবে প্যান্ডেমিক-এর কারণে এই পরিস্থিতি বর্তমানে চললেও, ভবিষ্যতে অবশ্যই এর থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

নিজের সঙ্গে নানা ধরনের সৃষ্টিশীল কাজে সন্তানকে ব্যস্ত রাখতে পারেন। এর ফলে চারপাশের নেতিবাচক পরিস্থিতি থেকে সন্তান দূরে থাকতে পারবে। নিজস্ব কিছু সৃষ্টির আনন্দে কিছুটা সময় হলেও বাচ্চার মন দুশ্চিন্তার গ্রাস থেকে বাইরে বেরিয়ে আসতে পারবে। এছাড়াও সর্বক্ষণ টিভি অথবা মোবাইলে খবর দেখা থেকেও বাচ্চাকে বিরত রাখুন, যাতে ক্রমান্বয়ে দেখতে থাকা নানা অঘটন এবং পরিস্থিতির ত্রাস বাচ্চাকে বিষাদগ্রস্ত করে তুলতে না পারে।

প্যান্ডেমিকের আগে যে-জীবনশৈলীতে আপনারা বাড়িতে অভ্যস্ত ছিলেন, অতিমারি আবহেও সেই নিয়ম যতটা সম্ভব মেনে চলার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। এতে বাচ্চা নিজেকে সুরক্ষিত এবং নিরাপদ বোধ করবে। যেমন সময়ে শুতে যাওয়া, ঘুম থেকে ওঠা, খাবার খাওয়া, যার যা শখ তা পূরণ করা ইত্যাদি। এছাড়াও বাচ্চাদের ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে বিরতি চলাকালীন বাড়ির কাজে বড়োদের সাহায্য করার কথাও বলতে পারেন। এতে ওরা নতুন কিছু শিখতেও পারবে আবার বড়োদের সাহায্য করতে পারছে বলে মনে মনে গর্ববোধও করবে। গার্ডেনিং-এর শখ থাকলে বিকেলে খেলার ছলে সন্তানের কাছে সাহায্য চেয়ে নিতে পারেন। বাচ্চারা গাছ, ফুল ভালোবাসে। সুতরাং তারাও সানন্দে মানসিক যাতনা Mental problems ভুলে গিয়ে নতুন উদ্যমে কাজে লেগে পড়বে।

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...