শরীরের নানা অংশে যদি মেদ জমে, তাহলে পুরো শরীর বেমানান রূপ নেয়। নষ্ট হয় ব্যক্তিত্ব। শরীরে রোগের উপদ্রবও বাড়ে। কিন্তু যদি বিয়ের প্রস্তুতি নিতেই হয়, তাহলে প্রথম এবং প্রধান কাজ হবে শরীরের বাড়তি মেদ ঝরানো। কারণ, বেঢপ চেহারা অন্যের চোখে দৃষ্টিনন্দন হয় না, তাই আকর্ষিত করে না। যা মোটেই কাম্য নয়। অতএব, নির্মেদ মোহময়ী রূপ থাকা দরকার, যা জীবনসঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্কের ৱুনিয়াদ শক্ত করতে সাহায্য করবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, আজকাল ২৪-২৫ বছর বয়সি মেয়েদেরও মেদ জমতে দেখা যায়। অথচ, নিয়মমাফিক খাওয়াদাওয়া, নিয়মিত শরীরচর্চা আর জীবনশৈলীর সামান্য পরিবর্তনেই আপনি হয়ে উঠতে পারেন নির্মেদ সুন্দরী।

খানাপিনায় নিয়ন্ত্রণ

আজকাল আমরা অনেকেই, বিশেষ করে,  নাগরিক জীবনে অভ্যস্তরা খানাপিনায় কোনও নিয়মনীতি মানি না। না আমরা সঠিক সময়ে খাই, না খাই সঠিক খাবার। কোন খাদ্য কিংবা কোন পানীয় আমাদের শরীরে কী প্রভাব ফেলে, তা আমরা বেশিরভাগ লোকই জানি না কিংবা জানার চেষ্টা করি না। কোন খাবারে ফ্যাট, কোন খাবারে প্রোটিন কিংবা কোন খাবার খেলে কতটা কার্বোহাইড্রেট তৈরি হবে শরীরে, তা অনেকেই সঠিকভাবে জানেন না, কিন্তু জানাটা জরুরি। অতএব, খানাপিনায় লাগাম টানুন আর নিয়ন্ত্রণে রাখুন আপনার ওজন এবং শরীরকে।

বিয়ের আগে আবার বাড়তি বোঝা হয় আত্মীয়দের বাড়িতে আইবুড়োভাতের নিমন্ত্রণ। কিন্তু লোভে পড়ে আমরা প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার (বিশেষকরে ভাজাভুজি এবং মশলাযুক্ত খাবার) খেয়ে নিয়ে মেদ জমিয়ে ফেলি। কেক, প্যাটিস, বার্গার, পিত্জা, নডুলস প্রভৃতি কেউ-কেউ এত বেশি খান যে, এতে শুধু মেদ জমার সমস্যাই নয়, হৃদরোগ, পেটের অসুখ প্রভৃতিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

তাই নিমন্ত্রণ রক্ষা করার সময় নিয়ন্ত্রণ রেখে খান। এখন অনেকে তো শাকসবজি খাওয়ার কথা প্রায় ভুলে যেতে বসেছেন। তাছাড়া, রেস্তোরাঁয় কিংবা সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে অনেকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে শুয়ে পড়েন। এরফলে পাচনযন্ত্র পুরো খাবার হজম করাতে পারে না এবং অতিরিক্ত খাবার শরীরে মেদ হয়ে জমে যায়। তাই যদি মেদহীন সুস্থ শরীর চান, তাহলে খাওয়ার লোভ সংবরণ করুন। খিদে না পেলে খাবার খাবেন না। ফাস্ট ফুড খাওয়া বন্ধ করুন। ঠান্ডা পানীয় ত্যাগ করুন। যতটা ক্যালরি শরীরে দেবেন, সেই ক্যালরি ঝরানোর জন্য উপযুক্ত পরিশ্রম করুন। অন্তত বিয়ে ৬ মাস আগে থেকে খানাপিনায় সংযম বজায় রাখুন।

সঠিক খাদ্যাভ্যাস জরুরি

বেশি ভাজাভুজি, কোল্ডড্রিংক্স প্রভৃতি অত্যন্ত ক্ষতিকারক। তবে বেশি খাওয়াও যেমন ক্ষতিকারক, ঠিক তেমনই দীর্ঘ সময় খালি পেটে থাকাও ঠিক নয়। কারণ, খালি পেটে অনেকক্ষণ থাকলে পেটে বায়ু জমবে এবং অসুস্থ হয়ে পড়বেন। অতএব, ভেবেচিন্তে খাওয়া জরুরি।

সকালে ঘুম থেকে উঠে মুখ ধোয়ার পর এক গেলাস ঈষদুষ্ণ জলে পাতি লেৱুর রস এবং এক চামচ মধু মিশিয়ে পান করুন। এরপর কিছুটা হাঁটুন বা হালকা ব্যায়াম করুন। তিরিশ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা বাদে একমুঠো অঙ্কুরিত ছোলা খান। ঘণ্টাদুয়ে বাদে ব্রেড-বাটার, ডিম, কলা ইত্যাদি খান পরিমাণ মতো। দুপুরে সামান্য ভাত, ডাল, সবজি, একপিস মাছ এবং স্যালাড খান। খাওয়া শেষ হওয়ার একঘণ্টা পর এক গেলাস জল পান করে সামান্য টকদই খান। বিকেলে দুটো বিস্কুট এবং এক কাপ চা খান। এরপর সন্ধে সাতটা-আটটা নাগাদ যদি খিদে পায় তাহলে একপিস স্যান্ডউইচ খেতে পারেন। আর রাতে খান রুটি-সবজি। এইভাবে যদি নিয়মমাফিক খাবার খেতে পারেন নিয়মিত, তাহলে দেখবেন, বিয়ের আগেই নির্মেদ ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল হয়ে উঠছেন।

জীবনশৈলীর পরিবর্তন

বেশিরভাগ মানুষই এখন আরামের জীবনযাপন করেন। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে থাকেন, গাড়ি চড়েন। এরফলে পরিশ্রম প্রায় হয় না বললেই চলে। আর যদি ঘামঝরানো পরিশ্রম না করা হয়, তাহলে খাবার হজম হবে না। তাই, অফিসে দীর্ঘ সময় একনাগাড়ে বসে কাজ না করে, মাঝেমধ্যে একটু পায়চারি করে নেবেন। হাতে সময় থাকলে লিফ্ট ব্যবহার না করে সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করুন। সকাল-সন্ধে কিছুটা হাঁটুন, খেলাধুলো করুন এবং পারলে নিয়মিত সাঁতার কাটুন।

জরুরি পরামর্শ

– সঠিক সময়ে ঘুম জরুরি। রাতে অন্তত সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমোন।

– খেতে-খেতে কিংবা খাওয়া শেষ করে সঙ্গে সঙ্গে বেশি জল পান করবেন না।খাওয়ার পর অন্তত এক ঘণ্টা বাদে জল পান করুন।

– যদি আপনার হজমের গোলমাল থাকে তাহলে সপ্তাহে একদিন কিছুটা সময় উপোস থাকুন এবং তারপর হালকা খাবার খান।

– ফুলকপি কিংবা বাঁধাকপি যেহেতু পেটে বাযু তৈরি করে, তাই এগুলি কম পরিমাণে খান কিন্তু বাদ দেবেন না। কারণ, এগুলি ফাইবার জাতীয় খাবার এবং পেট পরিষ্কার রাখার জন্য এগুলি মঝেমধ্যে খাওয়া জরুরি।

– গাঁটি কচু এবং রাজমা রাতে খাবেন না। কারণ এগুলি সহজে হজম হয় না এবং কার্বোহাইড্রেট তৈরি করে, যা শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক।

– আলুর চিপ্স, কোল্ড ড্রিংক্স প্রভৃতি খাদ্য তালিকার বাইরে রাখুন, ফ্যাট জমবে না।

– প্রতিদিন অন্তত তিন থেকে চার লিটার জল পান করবেন। এতে শরীর থেকে বর্জ্য বেরিয়ে যাবে এবং শরীর সুস্থ থাকবে।

– সপ্তাহে একদিন হালকা গরম জল পান করলে শরীর মেদমুক্ত থাকবে।

– অলিভ অয়েল দিয়ে সপ্তাহে দু’দিন পেটের অংশ মালিশ করলে চর্বি জমবে না।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...