পিসিওডি (পলিসিস্টিক ওভারি ডিজিজ) বর্তমানে অল্পবয়সি মেয়েদের জন্য একটি সাধারণ রোগে পরিণত হয়েছে।

১৮-৪৫ বছরের মহিলাদের মধ্যে সবথেকে বেশি এই রোগ দেখা যায়। অল্পবয়স্ক মেয়েদের এই বিষয়ে সচেতনতা খুবই প্রয়োজন, তাহলে শুরুতেই এই রোগের চিকিৎসা করানো যায়।

পিসিওডি কেন হয় এবং কী কী প্রভাব ফেলে শরীরে?

পিসিওডিতে দুটি হরমোন এন্ড্রোজেন ও ইস্ট্রোজেন শরীরে বেশি ক্ষরণ হয় এবং ওভারি বা ডিম্বাশয়ে ছোটো ছোটো সিস্ট হয় যা ডিম্বাশয়কে বড়ো করতে পারে। যার ফলে শরীরে নানা সমস্যা দেখা যায়।

যদিও চিকিৎসা বিজ্ঞান পিসিওডির কারণ সম্পর্কে এখনও উত্তর দিতে পারেনি, তবে জিনগত কারণ, ওবেসিটি, ডায়াবিটিস, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন এবং পরিবেশ দূষণ এই রোগের মূল কারণ।

সাম্প্রতিককালে অনেক বিজ্ঞানী মনে করছেন যে, পিসিওডির জন্য মূল অবদান ইনসুলিন রেজিস্টেন্স-এ। আমাদের শরীরে ইনসুলিনের কাজ হল কোশগুলি যাতে ঠিকঠাক মতন রক্তের থেকে গ্লুকোজ গ্রহণ করে, তা নিশ্চিত করা। কিছু মানুষের ক্ষেত্রে ইনসুলিন নিজের কাজ ঠিক মতন করতে পারে না। এই কারণে আমাদের শরীর আরও বেশি করে ইনসুলিন ক্ষরণ করতে থাকে এবং রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকে। রক্তে অতিরিক্ত মাত্রায় ইনসুলিন ওভারিকে স্টিমুলেট করে এবং ওভারি অতিরিক্ত মাত্রায় হরমোন ক্ষরণ করতে থাকে। এই অতিরিক্ত হরমোনগুলি অনিয়মিত ঋতুচক্র, ওজন বৃদ্ধি ইত্যাদি লক্ষণের জন্য দায়ী।

কীভাবে বুঝব পিসিওডি হতে পারে?

  • মুখে অতিরিক্ত ব্রণ
  • গায়ে বিশেষত গলায়, কালো ছোপ ছোপ দাগ
  • পুরুষালী কার্যকলাপ
  • শরীরে বা মুখে চুলের প্রাদুর্ভাব
  • মাথা ব্যথা
  • মানসিক অবসাদ
  • ২-৩ মাস, অনিয়মিত ঋতুচক্র হওয়া বা বন্ধ থাকা
  • মাসিকের সময় প্রচুর রক্তক্ষরণ
  • গর্ভধারণে অসুবিধা
  • ওজন বেড়ে যাওয়া
  • রক্তে সুগারের পরিমাণ বেশি।

এই লক্ষণগুলো আসলে, নিজে নিজে ডায়াগনোসিস না করে, অভিজ্ঞ চিকিত্সকের পরামর্শ নিতে হবে। ওষুধের সঙ্গে সঙ্গে যেগুলো দরকার তা হল নিয়মিত ব্যায়াম, পুষ্টিকর খাবার, ৬-৮ ঘণ্টা ঘুম ও মনে আনন্দ রাখা।

পলিসিস্টিক ওভারি ডিজিজ এবং পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম-এর মধ্যে তফাৎ কী?

পিসিওডি-এর সঙ্গে আরেকটি রোগ অনেকে গুলিয়ে ফেলেন, সেটি হল পিসিওএস।

মনে রাখতে হবে, যদিও পিসিওডি একটি রোগ, তবে অধিকাংশ সময়ে তা গুরুতর হয় না। অন্যদিকে পিসিওএস একটি গুরুতর অবস্থা যা বিনা চিকিত্সায় ক্রমে বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে।

পিসিওডি একটি রোগ, যা হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে হয়। কিন্তু পিসিওএস মূলত একটি এন্ডোক্রিন সিস্টেমের ব্যাধি।

পিসিওএস রোগীর ক্ষেত্রে থাইরয়েড-এর রোগ, বিশেষত হাসিমোটোজ থাইরয়েডআইটিসও দেখা যায়। হাইপোথাইরইডিজম অনেক ক্ষেত্রে টেস্টোস্টেরন হরমোনের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়, যা পিসিওএস এর লক্ষণগুলি বাড়িয়ে তোলে।

খুব স্বল্প সংখ্যক রোগীর ক্ষেত্রে পিসিওডি বা পিসিওএস, বয়সকালে এন্ডোমেট্রিয়াল ম্যালিগ্যানন্সির কারণ হতে পারে। তাই একজন অভিজ্ঞ চিকিত্সকের পরামর্শ সবসময় নিতে হবে।

গর্ভধারণে পিসিওডি ও পিসিওএস এর প্রভাব

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পিসিওডির রোগীদের গর্ভধারণে কোনও অসুবিধা হয় না। কিছু ওষুধ, জীবনযাত্রার পরিবর্তন করেই মহিলারা সামান্য সহায়তার সঙ্গে গর্ভধারণ করতে পারেন। তবে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা এবং মূলত এন্ড্রোজেন হরমোনের অতিরিক্ত আধিক্যের কারণে, পিসিওএস রোগীদের গর্ভধারণে অসুবিধা হতে পারে।

পিসিওডি-র চিকিত্সা কীভাবে করা হয়?

চিকিত্সা বলতে সঠিক নির্ধারণ, সঠিক কারণ বুঝে চিকিত্সা করা দরকার। কিছু পরীক্ষা যেমন আল্ট্রাসোনোগ্রাফি, রক্ত পরীক্ষা যেমন সুগার, থাইরয়েড, প্রোল্যাকটিন, এফএসএইচ, এলআইএল, টেস্টোস্টেরন ইত্যাদি করা হতে পারে।

হোমিওপ্যাথিতে এর খুবই ভালো চিকিত্সা হয় এবং অনেকে একদম সুস্থ হয়ে ওঠেন। তবে যেহেতু হোমিওপ্যাথি একটি লক্ষণভিত্তিক চিকিত্সা পদ্ধতি, তাই রোগীর শারীরিক ও মানসিক অবস্থা বোঝা খুবই জরুরি। তাই সর্বদা একজন ক্লাসিক্যাল হোমিওপ্যাথি চিকিত্সক যিনি কিনা সর্বদা সঠিক কেস ট্র‌্যাকিং-এর মাধ্যমে একটি ওষুধ নির্বাচন করেন, তার পরামর্শ নেওয়া উচিত।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...