কুসংস্কার বা অন্ধবিশ্বাস মানুষকে অনেকটা পিছিয়ে দেয় বাস্তবিক জীবনবোধ থেকে। আমাদের প্রচলিত ধর্মগুলোই মানুষের Superstition, দুর্বলতা, দারিদ্র, অজ্ঞানতা, অশিক্ষা, অজানার প্রতি ভয়, কুশিক্ষার উপর ভর করে মানুষকে মানসিক ভাবে দুর্বল বানিয়ে রেখেছে। সবচেয়ে হতাশার ব্যাপার হচ্ছে বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় সর্বচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত বিপুলসংখ্যক মানুষ এইসব কুসংস্কারে বিশ্বাস করেন। সুতরাং নতুন প্রজন্মকে সচেতন ও কুসংস্কার মুক্ত করে তুলতে এই গুরুদাযিত্ব পালন করতে হবে অভিভাবকদেরই।

শহর হোক কিংবা গ্রাম, আমরা প্রতিনিয়ত কিছু Superstition মেনে চলি, যার পিছনে রয়েছে যুক্তিগত এবং বিজ্ঞানভিত্তিক কিছু তথ্য, অথচ সেগুলি আমরা শিক্ষার আওতায় আনি না। কিন্তু কুসংস্কারটা মেনে চলতে সন্তানকে প্ররোচিত করি। যেমন—

  • কালো বেড়াল রাস্তা পেরোলে গাড়ির চালক গাড়ি বন্ধ রেখে দাঁড়িয়ে পড়েন। অন্ধবিশ্বাস হল বেড়াল রাস্তা কাটলে যাত্রা অশুভ হয় অথচ আসল কারণ হল বেড়ালকে তাড়া করে থাকতে পারে বড়ো কোনও প্রাণী। সেটি গাড়ি বা মশরব সামনে এসে পড়লে বড়ো দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
  • সূর্যাস্তের পর বড়োরা নখ কাটতে বারণ করেন। অন্ধবিশ্বাস, সন্ধেবেলায় নখ কাটলে বড়ো অসুখ ধরা পড়ে। আসলে সন্ধেবেলায় আলোর অভাবে নখ কাটতে গিয়ে হাত-পা কেটে যেতে পারে।
  • গায়ে টিকটিকি পড়া মানে অসুস্থতা বা মৃত্যু। আসলে টিকটিকি বিষাক্ত প্রাণী। সেটি শরীর থেকে দূরে থাকাই শ্রেয়।
  • পিছন থেকে যাত্রার সময় কেউ ডাকলে সেটা অশুভ মানা হয়। আসল কারণ হল পিছন থেকে ডাকলে মানুষ অন্যমনষ্ক হয়ে পড়তে পারে। ফলে যে-কোনও দুর্ঘটনার শিকার হওয়া অস্বাভাবিক নয়।
  • রাত্রে গাছের ফুল পাতা ছিঁড়তে নেই তাতে নাকি শারীরিক ক্ষতি বা অমঙ্গল হয়। গাছের নীচে দাঁড়ালে ভতে ধরে। আসলে গাছে বিষাক্ত কীটপতঙ্গ থাকতে পারে, যা রাত্রে দেখা যায় না। ফুল ছিঁড়তে গেলে সেগুলোর কামড়ানোর আশঙ্কা থাকে। এছাড়াও রাত্রে গাছ কার্বনডাই অক্সাইড ছাড়ে তাই রাত্রে গাছের নীচে দাঁড়াতে বারণ করা হয়।
  • ভাঙা আয়নায় মুখ দেখতে নেই, তাতে বাড়ির অমঙ্গল হয়। প্রিয়জন অসুস্থ হতে পারে। আসলে ভাঙা কাচে দুর্ঘটনাবশত হাত কেটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • শুভ কাজে যাওয়ার আগে দই আর চিনি খেয়ে বেরোনোটাকে শুভ মনে করা হয়। অথচ এর বৈজ্ঞানিক কারণ হল দই পেট ঠান্ডা রাখে আর চিনি তৎক্ষণাৎ গ্লুকোজ যোগ করে শরীরে। ফলে শরীর ভরপুর এনার্জি পায়।
  • তুলসীপাতা না চিবিয়ে গিলে ফেলতে শেখান মা-ঠাকুরমারা। বৈজ্ঞানিক ভিত্তি হল, তুলসীপাতায় সামান্য পরিমাণে আরসেনিক থাকে যা দাঁতের এনামেল নষ্ট করে দিতে পারে।
  • গ্রহণের সঙ্গেও নানা কুসংস্কার জড়িয়ে আছে। গ্রহণের সময় গর্ভবতীরা বাইরে বেরোলে বাচ্চার মধ্যে শারীরিক বিকৃতি ঘটতে পারে। গ্রহণ চলাকালীন কোনও খাদ্য বা জল খাওয়া বড়োরা সর্বদা নিষেধ করে এসেছেন। অনেকে রান্না করা খাবার থাকলে গ্রহণ কেটে গেলে তা ফেলে দেন বা কেউ কেউ তুলসীপাতা দিয়ে খাবার ঢেকে রাখেন। এর পিছনে বৈজ্ঞানিক কারণ আছে। গ্রহণ চলাকালীন সূর্যের ক্ষতিকারক অতি বেগুনি রশ্মির প্রভাব যাতে কোনওরকম ক্ষতি না করতে পারে। ওই সময় নানা ধরনের জীবাণু অত্যন্ত সক্রিয় হয়ে ওঠে। ফলত তাতে মানবশরীরে ক্ষতির সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
  • পশ্চিমি দেশগুলিকে অনুসরণ করতে গিয়ে আজ আমাদের দেশেও নাম্বার থার্টিন-কে অশুভ মেনে চলা হয়। বহুতল ফ্ল্যাটে ১৩ তলা বলে কিছু থাকে না। এমনকী ফ্ল্যাটের নম্বরও ১৩ কোথাও দেওয়া হয় না। ১৩ তারিখে শুভ কাজে বেরোনো হয় না। নাম্বার থার্টিন অশুভ মেনে চলার একটা কারণ হল যিশুখ্রিস্টের শেষ নৈশভোজের টেবিলে তাঁর সঙ্গে আরও বারোজন অতিথি বা শিষ্য ছিলেন, যাদের মধ্যে একজন তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। এছাড়াও ১৩০৭ সালে ফ্রান্সের রাজা চতুর্থ ফিলিপ ১৩ অক্টোবরই তাঁর নাইট টেম্পলারদের বন্দী করার আদেশ দেন এবং পরবর্তীকালে তাদের নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়।

এরকম বহু কুসংস্কার যেগুলো আজও আমরা মেনে চলি সেগুলির পিছনেও বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব আজ প্রতিষ্ঠিত সত্য। সুতরাং ভবিষ্যত্ আলোকিত করতে এবং কুয়াশাচ্ছন্ন বর্তমানের অনিশ্চয়তা কাটিয়ে তুলতে অভিভাবকদেরই এগিয়ে আসতে হবে সন্তানকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করে তুলতে।

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...