পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে বয়ে চলেছে চঞ্চলা কিশোরীর মতো বিয়াস নদী, ঘন সবুজ গাছে ঘেরা, বরফে ঢাকা একের পর এক পর্বতশৃঙ্গ, আকাশের দিকে মাথা উঁচু করে আছে। পাইন, ফারের দল, বৌদ্ধ মঠ, গির্জা ও বিভিন্ন রকমের মন্দির দিয়ে সাজানো হিমাচল প্রদেশ।
প্রথম যাওয়া আমার সিমলায়। সিমলাতে ব্রিটিশদের সময়কার স্থাপত্যের বেশ কিছু নিদর্শন এখনও আছে। সাতটা পাহাড়ের উপর গড়ে উঠেছে সিমলা শহর, যার মধ্যে সবচেয়ে উঁচু স্থানটি হল জাখু পাহাড়ের উপরের অংশটি। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে দুহাজার চারশো চুয়ান্ন মিটার উচ্চতায়। স্থানীয় মানুষদের কথায় সিমলা শহরের নাম হয়েছে দেবী কালীর শ্যামলা রূপের নামে।
সিমলায় প্রচুর দর্শনীয় স্থান আছে। যারা সিমলায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখার জন্য আসেন তাদের সব থেকে ভালো লাগবে ম্যাল, গ্রিন ভ্যালি, আর ফাগু ভ্যালি। ম্যালটা এতো সুন্দর যে, দিনের অনেকটা সময় সেখানে কাটানো যায়।
সিমলার রাস্তা বেশ সুন্দর, চওড়া, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে রাস্তার একপাশে রয়েছে নিও গথিক স্থাপত্যে ১৮৫৭ সালে তৈরি সুউচ্চ সাদা রঙের ক্রাইস্ট চার্চ। এটি সিমলার একটা উল্লেখযোগ্য ল্যান্ডমার্ক এবং উত্তর ভারতের সবচেয়ে পুরোনো চার্চগুলোর মধ্যে অন্যতম। রাস্তার ওপর থেকে নীচে ও চারপাশে তাকালে পাহাড়ের গায়ে গায়ে ছড়িয়ে থাকা শহরটাকে খুব সুন্দর দেখায়। তবে সন্ধ্যার সময় যখন আলো জ্বলে ওঠে, তখন সত্যিই অপূর্ব সুন্দর দেখায় সিমলাকে। ম্যাল রোডেই সিমলার যত দোকানপাট। স্থানীয় বেকারির দোকান, শাল, টুপি, গরম জামা-কাপড়ের অনেক দোকান আছে এখানে।
ফাগু : সিমলার একটি ছোট্ট গ্রাম। ফাগুর অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখার জন্যই কুফরি যাওয়ার আগে সবাই এখানে কিছুক্ষণ সময় কাটায়। আমরাও কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে ছিলাম। কুফরি যাওয়ার রাস্তাতেই পড়ে গ্রিন ভ্যালি। যতদূর চোখ যায় সবুজে মোড়া পাহাড়। কোথাও হালকা সবুজ আবার কোথাও গাঢ় সবুজ চারিদিকে যেন নানারকমের সবুজের মেলা বসেছে। আশেপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে চমরি গাই। তাদের পিঠে চড়ে উৎসাহী পর্যটকেরা ফটো তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আমরাও বেশ কিছু ফটো তুললাম।
কুফরি : সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে আড়াই হাজার মিটারের মতো উচ্চতায় অবস্থিত, একটা ছোটো হিল স্টেশন। ওপরে ওঠার সময় অনেকে ঘোড়ায় করে যায়, চাইলে পায়ে হেঁটে ট্রেক করেও যেতে পারেন। আমরা অবশ্য ঘোড়ার পিঠে চড়ে গিয়েছিলাম। শীতকালে কুফরির পাহাড়ের উপরে বরফের আস্তরণ দেখার মতো। পাহাড়ের উপরে এবং ঢালে যখন বরফ পড়ে তখন নানা রাইড ও অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের ব্যবস্থা থাকে এখানে। এছাড়া কুফরিতে আছে চিড়িয়াখানা, হিমালয়ান নেচার পার্ক।
সিমলা কালীবাড়ির কথা না বললে সিমলার Travelogue অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। ১৮৪৫ সালে তৈরি হয়েছিল এই বিখ্যাত মন্দিরটি। জাখু পাহাড়ের উপর আছে হনুমান মন্দির। একশো আট ফুট উঁচু হনুমানের মূর্তি আছে এখানে। সিমলার অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে আছে চ্যাডউইক ফলস, সংকটমোচন মন্দির ইত্যাদি। দুদিনে সিমলা ভালো ভাবেই ঘোরা হয়ে যাবে। এরপর চলে যেতে পারেন মানালির দিকে।