যতক্ষণে আমরা রিসর্টে ফিরলাম, ততক্ষণে আমাদের খিদেয় পেটে ছুঁচোয় ডন মারছে। যতক্ষণ প্রকৃতির কোলে ছিলাম, ততক্ষণ সেরকম কিছু মালুম হয়নি। গাড়িতে উঠতেই বুঝলাম, যে-প্রকৃতি আমাদের প্রাকৃতিক সত্তাতে থাবা বসিয়েছিলেন। কিন্তু খেতে যাওয়ার আগে স্নান সারতে হবে। আমাদের লাগেজ তখনও রিসর্টের রিসেপশনেই রাখা। সেগুলোকে নিয়ে আমরা আমাদের দুটি পরিবারের জন্য বুক করা দুটো পাশাপাশি তাঁবুতে প্রবেশ করলাম।
আগে কখনও বেড়াতে গিয়ে আমি তাঁবুতে থাকিনি। তবে Jhargram ট্রিপ-এ এসে এইটুকু বুঝলাম যে, তাঁবু বলতে সাধারণ ভাবে যা মাথায় আসে, এগুলো তা নয়। বরং সিনেমায় আমরা রাজা-রাজড়াদের যুদ্ধক্ষেত্রে যেরকম তাঁবু দেখেছি, প্রায় সেরকম। পনেরো ফুট বাই কুড়ি ফুটের তাঁবু। মধ্যভাগের উচ্চতা পনেরো ফুটের মতো। পাখা নেই। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র আছে। বাথরুম বেশ বড়ো, বাথটাব আর গিজার সমেত। দরজা বলতে, চেন টানা একটা আয়তাকার মুখ। বেশ উত্তেজনা অনুভব করলাম, এরকম রাজকীয় তাঁবুতে থাকব ভেবে। কপাল খারাপ, এতটা দেরি হয়ে গিয়েছে ফিরে আসতে! ফলে বাথটাবে সময় নিয়ে ফ্রেশ করার আয়ে থেকে নিজেকে বঞ্চিত রাখতে হল। কোনওরকমে স্নান সেরে চললাম ডাইনিং হলের দিকে।
এলাহি খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল সেদিন, খাসির মাংস সহযোগে। ডাইনিং-টাও পেল্লায়। উচ্চতায় কুড়ি ফুটের মতো হবে এবং মোটা পুরোনো দেয়াল, আর কাঠের কড়ি-বরগা। কবজি ডুবিয়ে গলা পর্যন্ত খেলাম সকলে। তারপর তাঁবুতে ফিরে আরাম করে শুয়ে ক্যামেরায় তোলা ছবি ল্যাপটপে ডাম্প করতে করতে কখন যে-ঘুমিয়ে পড়লাম, টের পেলাম না। চোখ খুলে দেখি প্রায় সন্ধে সাতটা বাজে। সান্ধ্যকালীন স্ন্যাক্স অর্ডার করে ফ্রেশ হয়ে তাঁবুর সামনের উঁচু চাতালের ওপর বসে শুরু হল আড্ডা।
আমি এক সময়ে তাক বুঝে রিসর্টের মালিকের সঙ্গে গল্প করার জন্য তাঁকে আমাদের কাছে আসতে অনুরোধ করেছিলাম। তিনি রাজি হয়েছিলেন, সানন্দে। সাড়ে সাতটা নাগাদ তিনি এলেন। বয়স পঁচিশ-ছাব্বিশ হবে। চা আর স্ন্যাক্স খেতে খেতে জানা গেল যে গত বছরে জুলাই মাস নাগাদ ওনারা এই রিসর্ট-টি চালু করেছেন।