সদ্যজাত শিশুর ত্বক কোমল এবং অত্যন্ত স্পর্শকাতর হয়। সাবান, শ্যাম্পু, ডিটারজেন্ট, তেল, পাউডার, জামাকাপড়ে থাকা রাসায়নিক পদার্থ শিশুর ত্বকের ক্ষতি করে। এর ফলে শিশুর ত্বকে জ্বালা ভাব, ড্রাইনেস, ফুসকুড়ি ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও সুগন্ধিযুক্ত অন্যান্য বেবি-প্রোডাক্টসও ব্যবহার করা উচিত নয়। বাচ্চার ত্বক কোমল রাখতে নীচে দেওয়া টিপসগুলি মেনে চলুন।
স্নান : জন্মের প্রথম মাসে শিশুকে সপ্তাহে তিন থেকে চারবার স্পঞ্জ বাথ দেওয়া উচিত। প্রতিবার দুধ খাওয়ার পর বাচ্চার মুখ নরম পরিষ্কার কাপড় দিয়ে ভালো করে মুছিয়ে দিন। ডায়াপার বদলাবার পরেও স্পঞ্জ বা পরিষ্কার কাপড় দিয়ে ভালো করে ত্বক পরিষ্কার করে দিন। দ্বিতীয় মাস থেকে বাচ্চাকে স্নান করাবার সময় ঈষদুষ্ণ জল দিয়ে স্নান করান। মাইল্ড অথবা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সাবান একেবারেই ব্যবহার করবেন না যা, বাচ্চার সংবেদনশীল ত্বকের ক্ষতি করতে পারে। স্নানের পর সুতির নরম তোয়ালে দিয়ে শিশুর ত্বক মুছে নিন ধীরে ধীরে, যাতে ত্বক কোনওভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
পাউডারের ব্যবহার : বাচ্চাদের জন্য তৈরি ট্যালকম পাউডারই খালি ব্যবহার করুন, যেটা কিনা শিশুর ত্বকের জন্য উপযুক্ত। ডায়াপার পরাবার সময় শিশুর ওই অংশে পাউডার লাগাবেন না এবং বড়োদের পাউডারও বাচ্চার ত্বকে ব্যবহার করবেন না।
মাসাজ : নবজাত শিশুর শরীর খুব স্পর্শকাতর সুতরাং বাচ্চার মালিশ করার আগে মালিশের নিয়ম, কোন তেল লাগানো উচিত, কতক্ষণ মালিশ করা উচিত অথবা কখন মালিশ করা উচিত নয়– এইসব তথ্য ভালোমতো জেনে নেওয়া প্রয়োজন। বাচ্চার বিশেষ বিশেষ প্রয়োজনীয়তা অনুসারে মাসাজের আলাদা আলাদা টেকনিক ব্যবহার করাটা বাঞ্ছনীয়।
মাসাজ বাচ্চার জন্য খুবই উপকারী এবং বাড়িতেই শিশুর মা বা অন্য কোনও সদস্যও এই কাজটা সহজে করতে পারবেন। রসায়ন-মিশ্রিত তেল শিশুর ত্বকের ক্ষতি করতে পারে, তাই সরষে তেল বা অলিভ অয়েল শিশুর মালিশের জন্য সবথেকে ভালো। মোটা তোয়ালের উপর শুইয়ে বাচ্চার মালিশ করুন।
ডায়াপার ও ন্যাপির প্রয়োগ : ভেবেচিন্তে বাচ্চার জন্য ন্যাপি কেনা উচিত। ন্যাপি কেনার সময় দেখতে হবে সেটি বাচ্চার সঠিক মাপের কিনা, জলীয় পদার্থ শুষে নেওয়ার ক্ষমতা কতটা উন্নত এবং ওতে ব্যবহৃত ফ্যাব্রিক বাচ্চার সংবেদনশীল ত্বকের উপযুক্ত কিনা।
যে-কোনও মরশুমেই সুতি বা লিনেন-এর ন্যাপি ব্যবহার করা সবথেকে ভালো। এই ধরনের ফ্যাব্রিক আর্দ্রতা শুষে নিতে সক্ষম। এখন ভালো কোয়ালিটির ডিসপোজেবল ন্যাপি বাজারে এসে গেছে। ৩-৪ ঘন্টা অন্তর ন্যাপি বদলানো দরকার হয়। যত তাড়াতাড়ি ন্যাপি বদলানো হবে, সংক্রমণ হওয়ার ভয় ততই কমে যাবে।
কাপড়ের ন্যাপি বাচ্চাকে শুকনো এবং আরামে রাখে। এগুলো মসৃণ এবং মোলায়েম মাইক্রোফাইবার দিয়ে তৈরি হয়। যার শোষণক্ষমতা অনেক উন্নত।
আরও কিছু জিনিস খেয়াল রাখুন
পোশাক : পোশাক কেনার সময় খেয়াল রাখতে হবে যে শিশুকে শুধু সুন্দর দেখালেই চলবে না, তার ত্বকের জন্যও পোশাক আরামদায়ক হওয়াটা বাঞ্ছনীয়। বাচ্চার জন্য মোলায়েম এবং সুতির পোশাক কেনাটাই উচিত এবং এটাও দেখতে হবে পোশাকটি ধোয়া যাতে সহজ হয়।
ফ্যাব্রিক দেখে বাছতে হবে যাতে বাচ্চার ত্বকের ক্ষতি না হয়। বাচ্চার জন্য উপর এবং নীচের আলাদা আলাদা পোশাক কেনার থেকে ওয়ানপিস পোশাক পরানো সবচেয়ে ভালো।
মরশুম অনুযায়ী বাচ্চাকে পাজামা পরানো যেতে পারে যাতে পা পুরোটা ঢাকা থাকে ফলে পোকামাকড় কামড়াবার ভয় থাকবে না। গরমে পাতলা কাপড়ের পাজামা এবং শীতে একটু মোটা কাপড়ের পাজামা পরাতে পারলে ভালো হয়। শুধু খেয়াল রাখতে হবে এতে টাইট রাবার বা ইলাস্টিক যেন লাগানো না থাকে।
ধোয়ার পদ্ধতি : শিশুদের ত্বক যেহেতু খুব স্পর্শকাতর হয় তাই সাধারণ ডিটারজেন্ট ব্যবহার না করাই ভালো। রঙিন এবং সুগন্ধিত ডিটারজেন্ট একেবারেই ব্যবহার করবেন না। উলের পোশাক ধোয়ার জন্য যে ডিটারজেন্ট ব্যবহৃত হয় সেটাই এই ক্ষেত্রে ব্যবহার করা উচিত। ডিটারজেন্ট দিয়ে ধোয়ার পর পরিষ্কার জল দিয়ে ভালো করে বাচ্চাদের জামাকাপড় ধুয়ে নিন যাতে এতটুকুও ডিটারজেন্ট লেগে না থাকে। বাচ্চাদের পোশাকের জন্য বেবি স্পেসিফিক ডিটারজেন্টও বাজারে পাওয়া যায়।
র্যাশ হওয়ার কারণ : সারাক্ষণ ডায়াপার পরে থাকার জন্য ওই অংশে বাচ্চাদের প্রায়শই র্যাশ বেরিয়ে থাকে। র্যাশ বেরোবার প্রধান কারণ হল আর্দ্রতা। এছাড়াও ন্যাপি টাইট করে বাঁধার জন্যও র্যাশ হতে পারে। জায়গাটা পরিষ্কার করে না ধুলে বা ন্যাপিতে ডিটারজেন্ট থেকে গেলেও বাচ্চার ত্বকে র্যাশ বেরোতে পারে।
র্যাশ প্রতিরোধ করার উপায় : র্যাশ প্রতিরোধ করার সবথেকে ভালো উপায় হল ন্যাপির জায়গার ত্বক সবসময় পরিষ্কার ও শুকনো রাখা। ভিজে ন্যাপি তৎক্ষণাৎ বদলানো অত্যন্ত জরুরি। ডায়াপার বদলাবার সময় শিশুর ওই জায়গাটা হালকা গরম জল দিয়ে ধুয়ে দিন।
- বাচ্চাকে ঈষদুষ্ণ জল এবং বাচ্চাদের জন্য তৈরি সাবান দিয়েই স্নান করান।
- ত্বক পুরো শুকিয়ে গেলে তারপর শিশুকে পোশাক এবং ন্যাপি পরান।
- ২ বছর বয়স থেকে বাচ্চাকে ৮ ঘন্টা ন্যাপি ছাড়া রাখার অভ্যাস করান যাতে ত্বক নিঃশ্বাস নিতে পারে।
র্যাশ ঠিক করার ঘরোয়া উপায়
- র্যাশে অ্যালোভেরা জেল লাগান বা পেট্রোলিয়াম জেল লাগান।
- র্যাশের জন্য ট্যালকম পাউডার ব্যবহার করতে পারেন, তবে অধিক মাত্রায় নয় কারণ এটি বাচ্চার ফুসফুসে ঢুকে বাচ্চার ক্ষতি করতে পারে।
ঘরোয়া উপায়ে যদি র্যাশ প্রতিরোধ করা না যায় এবং ৭ দিনের মধ্যে যদি র্যাশ না কমে, ক্রমাগত জ্বালা, চুলকানি এবং রক্ত বেরোতে থাকে, বাচ্চার জ্বর এসে যায়— তাহলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া বাঞ্ছনীয়।