এবার অপেক্ষা করতে থাকি অন্য একটা পরিবারের জন্য। আমরা একসঙ্গেই যাব Kotumsar Caves দেখতে। Jungle Safari বুকিং অফিসে গিয়ে জানলাম, ফরেস্ট ডিপার্টমেন্ট-এর ৬-আসনের জিপ ভাড়া ১৫০০ টাকা। আমরা সাকুল্যে পাঁচ জন, দুই ফ্যামিলি শেয়ার করে নেব ভাড়াটা। ভিড় নেই, তাই কয়েক মিনিটের মধ্যেই আমরা টিকিট কেটে নির্দিষ্ট জিপে গিয়ে বসলাম।
মিনিট দশেক চলার পরেই আমাদের জিপ আবার জঙ্গলে ঢুকে পড়ল। কোটুমসার কেভস আরও প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে। যাত্রার শুরুতেই মনে আনন্দ জাগিয়ে আমাদের গাড়ির সামনে দিয়ে উড়ে গেল এক পাহাড়ি ময়না, যা ছত্তিশগড়ের স্টেট বার্ড। বহু প্রজাতির পাখির বাস এই জঙ্গলে স্পটেড প্যাঁচা, জংলি মোরগ, ময়ূর, রাকেট-টেইল্ড ড্রঙ্গো, টিয়া, ঈগল, ট্রিপাই, হেরন ইত্যাদি।
আগের পথেই মিনিট ১০-১২ গাড়ি চলার পরে গাড়ি বাঁক নিল বাঁদিকে। পথের পাশে গাছের ডালে ডালে অসংখ্য বাঁদর। একটু পরেই গাড়ি এসে পৌঁছোল এক নদীর কাছে। জিপ থেকে নেমে কয়েক পা এগোতেই দেখি, রূপসী কাঙ্গের নদী বয়ে চলেছে আপন ছন্দে। নদীর বুকে বড়ো বড়ো প্রস্তরখণ্ডের মাঝে তীব্র জলধারায় সৃষ্ট হয়েছে ছোটো, শুভ্র এক প্রপাতের। তারপরেই নদী এগিয়েছে শান্ত লয়ে৷ আমরা সবাই কাঙ্গের ধারার ছবি তুললাম নিজের নিজের মোবাইলে ও ক্যামেরায়। আবার উপরে উঠে এসে চড়ে বসলাম জিপে।
গাড়ি এগিয়ে চলল জঙ্গলপথে। একটু এগোতেই পথের ধারে অপেক্ষায় বসে থাকা গাইড এসে উঠল জিপে। প্রায় ১০ মিনিট পরে গাড়ি এসে থামল কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা এক চারণভমির পাশে। গাইড হার্দিককে জিজ্ঞেস করে জানলাম, এটাই ডিয়ার পার্ক? হরিণ ও নীলগাইদের জন্য সুরক্ষিত বিচরণভমি। সকলেরই ইচ্ছে, যদি একটি নীলগাইয়েও দর্শন পাওয়া যায়!
আমরা কিন্তু একটিও নীলগাই দেখতে পেলাম না। বরং দূরে দুটি চিতল হরিণ দেখতে পেয়ে খুশি হলাম। নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে তারা আমাদের দিকেই লক্ষ্য রাখছিল। হার্দিক ও শিবশঙ্কর দুজনেই জানাল, কয়েক বর্গকিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত এই ঘেরা চারণভমির অন্য জায়গায় তারা আছে, যদিও সংখ্যায় কম। গাড়ি আবার এগিয়ে চলল কোটুমসার কেভস-এর পথে। আরও প্রায় ১০ মিনিট চলার পরে গাড়ি এসে থামল এক পার্কিং প্লেস-এ। গাড়ি থেকে নেমে কিছুদূর হেঁটে আমরা পৌঁছে গেলাম গুহার মুখে।
গিন্নি জিজ্ঞেস করলেন, কোটুমসার কেভস জগদলপুর থেকে ঠিক কত দূরে? আমি জানাই, এই গুহাসমষ্টি জগদলপুর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। গুহাগুলি মাটি থেকে প্রায় ৩৫ মিটার নীচে এবং তাদের মিলিত দৈর্ঘ্য প্রায় ১৩৭১ মিটার। ভূগর্ভস্থ এই গুহাগুলি চুনাপাথরে তৈরি, যার অবস্থান জাতীয় উদ্যানের পশ্চিমাংশে কাঙ্গের নদীতীরের কাছে।
১৯০০ সালে গুহাগুলি আবিষ্কৃত হয় স্থানীয় অধিবাসীদের দ্বারা এবং ১৯৫১ সালে বিখ্যাত ভুগোলবিদ শঙ্কর তিওয়ারি এই গুহাসমষ্টিকে পরিচিত করান সমগ্র ভারতে। অতুলনীয় এই গুহাগুলি অতি প্রাচীন। সংকীর্ণ প্রবেশমুখ থেকেই রেলিং দেওয়া লোহার ও সিমেন্টের সরু সিঁড়ি পাক দিয়ে নীচে নেমে গেছে। মাথা নীচু করেই নামতে হচ্ছে, নইলে পাথরের ছাদ থেকে আঘাত পাবার সম্ভবনা। গুহার মাঝে নিচ্ছিদ্র অন্ধকার। গাইড চলেছে সামনে টর্চের আলো ফেলে, আর তার পিছনে আমরা। অন্য টর্চটা দেওয়া হয়েছে মি. ভূপেন্দ্রকে, তিনি রয়েছেন একেবারে পিছনে।