জগদলপুর শহরে সাইট সিয়িং সেরে হোটেলে ফিরলাম সন্ধে সাড়ে ৬টায়। ঘরে এসে হাতমুখ ধুয়ে নিলাম ভালো করে। দুপুর ৩-টেরও আগে বার হওয়ায় রোদ লেগে গিয়েছিল বেশ। অটো ড্রাইভারের কথামতো বিকেল ৪-টেয় বার হলে যাত্রাটা আরও মনোরম হতো। যাই হোক, জানুয়ারির শেষ দিকে সন্ধের পরে আবহাওয়ায় বেশ ঠান্ডা ভাব। তাই, পরপর দু’কাপ চায়ে তৃপ্তি পেলাম বেশ, ক্লান্তি দূর হল।
রাত ৮টা নাগাদ গাড়ির ড্রাইভার অজয় অবস্থি-র ফোন। রিসিভার তুলতেই শুনলাম, স্যার, অজয় বোল রহা হুঁ।
আমি উত্তর দিই, বোলো অজয়, ক্যা বাত হ্যায়? ওপাশ থেকে কণ্ঠস্বর ভেসে আসে, কল সুবে কিতনা বজে নিকলেঙ্গে?
—তুমহি বতাও। পহলে তো জঙ্গল কি তরফ জানা হ্যায় না?
—হাঁ জি। তো কল ম্যায় সুবে ন’বজে হোটেল মে আ জাউঙ্গা।
—ঠিক হ্যায়। হাম তৈয়ার রহেঙ্গে।
অজয়ের সঙ্গে কথা বলে খুশি হলাম, কারণ পরদিন প্রথমেই Jungle safari। বহুদিনের ইচ্ছে ছিল, ছত্তিশগড় রাজ্যের কাঙ্গের ভ্যালি ন্যাশনাল পার্ক-এ সাফারি করার। রাতে ডাইনিং রুমে গেলাম ডিনার করতে। শাকাহারি হোটেল কিন্তু রান্নার স্বাদ একেবারে লা-জওয়াব। ডিনার শেষ করে শুয়ে পড়লাম, পরের দিন তাড়াতাড়ি উঠতে হবে।
স্নান করে প্রাতরাশ সেরে নিলাম। ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে আগেই চলে এসেছে। ঠিক সকাল ৯.১০ মিনিটে সুইফ্ট ডিজায়ার-এ চড়ে যাত্রা শুরু হল আমাদের। গাড়ি চলেছে জাতীয় সড়ক ৩০ ধরে। বাঁ-পাশে পেরিয়ে গেলাম বলিরাম মেডিকেল কলেজ। এবার ডান পাশে জগদলপুর আকাশবাণী। এনএইচ-এর দুপাশেই চাষের জমি। শুরু হল হালকা জঙ্গল পর্ণমোচী বৃক্ষের। ছোটো ছোটো কুঁড়েঘর জঙ্গলের পাশেই। শীতশেষে পাতা-ঝরানো শুষ্ক আবহাওয়া। ৯টা ৪৫ মিনিটে আমরা কাঙ্গের ঘাটি ন্যাশনাল পার্ক-এর প্রবেশ-মুখে এসে পৌঁছোলাম।
অজয়ের কাছ থেকে আগেই জেনেছিলাম, প্রাইভেট গাড়িকে জঙ্গলের মধ্য দিয়ে তিরথগড় ফলস পর্যন্ত যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু জঙ্গলের কোর এরিয়ায় অবস্থিত কোটুমসার গুহা ও কাঙ্গের ধারা দেখতে হলে ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের জিপেই যেতে হবে। মাথা পিছু ৫৫ টাকার টিকিট কিনে আমরা গাড়ি নিয়ে জঙ্গলে প্রবেশ করলাম।