অবসাদ বলতেই আমাদের মনে বড়োদের কথাই আগে মনে হয়। শিশুমনে যে অবসাদ শিকড় গাড়তে পারে এ ধারণা সচরাচর কারও মনেই আসে না। অথচ জানা দরকার যে বড়োদের মতো বাচ্চারাও অবসাদের শিকার হতে পারে। অবসাদের কারণ আলাদা আলাদা হয়। যদি কোনও বাচ্চা বহুদিন ধরে বিমর্ষ বা খিটখিটে স্বভাবের হয়ে পড়ে, সেটার কারণ অবসাদ না-ও হতে পারে। কিন্তু বাচ্চা যদি সবসময় উদাস হয়ে থাকে, কারওর সঙ্গে মিশতে বা কথা বলতে না চায়, খিদে এবং ঘুমের ওপর এর প্রভাব পড়া শুরু হয় তাহলে অভিভাবকদের সাবধান হতে হবে। তাদের নিশ্চিত হতে হবে যে তাদের সন্তান অবসাদের শিকার হয়ে পড়েনি তো? সন্তানদের ব্যাপারে মা-বাবাকে সচেতন থাকতে হবে এবং জানতে হবে কী কী কারণে ডিপ্রেশন হতে পারে এবং তার লক্ষণগুলি।
বাচ্চাদের মধ্যে Depression এর কারণ
অনেক বাচ্চা স্কুলে অন্যান্য বাচ্চা কিংবা বড়োদের উৎপীড়নের শিকার হয় এবং মাত্রাতিরিক্ত উৎপীড়নের কারণে বাচ্চা অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়তে পারে। স্কুলে অথবা যে-কোনও পাবলিক প্লেস-এ বাচ্চা যদি প্রতিনিয়ত উৎপীড়িত হতে থাকে, তাহলে তার আত্মবিশ্বাস তলানিতে এসে ঠেকে। চুপচাপ, বিষণ্ণ হয়ে পড়াতে ধীরে ধীরে তাকে অবসাদ গ্রাস করে। এছাড়াও সব সময় বাচ্চাকে মানসিক ভাবে প্রেশার দিতে থাকলেও বাচ্চার মধ্যে অবসাদ জন্মাতে পারে। এটা পড়াশোনারও চাপ হতে পারে।
(ক) বংশানুগত কারণ : যে-শিশুর পরিবারে কোনও সদস্যের অবসাদগ্রস্ত হওয়ার ইতিহাস আছে, তাদের তুলনামূলক ভাবে অবসাদের শিকার হওয়ার ভয় বেশি থাকে, অন্যান্য বাচ্চাদের তুলনায়। তবে পরিবারে কারও যদি ডিপ্রেশন-এর ইতিহাস না-ও থাকে তাহলে ওই শিশুর কোনও দিনই ডিপ্রেশন হবে না, এমন ধারণা রাখাও ভুল। যদি বড়োদের মনে হয় সন্তানের মধ্যে অবসাদের লক্ষণ দেখা দিচ্ছে তাহলে, তার ক্রিয়াকলাপ, মানসিকতা এবং ব্যবহারের উপর কড়া নজর রাখতে হবে।
(খ) জীবনশৈলীতে পরিবর্তন : বয়স্কদের মতোই বাচ্চরাও চট করে কোনও পরিবর্তন স্বীকার করে নিতে পারে না। নতুন বাড়ি বা নতুন স্কুলে যাওয়া, মা-বাবার মধ্যে ঝগড়া বা বিচ্ছেদ দেখলে, ভাই-বোনের থেকে আলাদা হয়ে পড়লে, দাদু-ঠাকুমার স্নেহছায়া থেকে দূরে যেতে হলে, বাচ্চার মস্তিষ্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। যদি মনে হয় আপনার সন্তান এর ফলে প্রভাবিত হয়ে পড়ছে তাহলে যত শীঘ্র সম্ভব এই ব্যাপারে আপনার সন্তানের সঙ্গে কথা বলুন। যদি কোনও দুর্ঘটনার পর বাচ্চার ব্যবহারে কোনও পরিবর্তন লক্ষ্য করেন, তাহলে তৎক্ষণাৎ ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে সন্তানের মধ্যে অবসাদের লক্ষণগুলি ফুটে উঠছে কিনা খেয়াল রাখুন এবং প্রযোজনে শীঘ্রই চিকিৎসা শুরু করে দিন।
(গ) রাসায়নিক ভারসাম্যহীনতা : কোনও কোনও বাচ্চার শরীরে রাসায়নিক ভারসাম্যহীনতার কারণে, সেই বাচ্চা অবসাদের শিকার হয়ে পড়ে। বাচ্চার গ্রোযিং এজ-এ হরমোনাল পরিবর্তন-এর কারণেও অনেক সময় রসায়নের ভারসাম্য নষ্ট হয় শরীরে। অপুষ্টি এবং শারীরিক গতিবিধি সীমিত হওয়ার ফলেও এই সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। বাচ্চার সঠিক বিকাশ হচ্ছে কিনা পরীক্ষা করতে বাচ্চার রেগুলার চেক-আপ করান। এর ফলে অবসাদের হাত থেকে বাচ্চাকে সুরক্ষিত রাখতে পারবেন।
বাচ্চার মধ্যে Depression এর লক্ষণ
- খিটখিটে স্বভাবের হয়ে ওঠা, কথায় কথায় রেগে ওঠা
- সবসময় বিমর্ষ, বিষণ্ণ হয়ে থাকা
- বাইরের জগৎ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া
- কথাবার্তা, মেলামেশা বন্ধ করে দেওয়া
- অপরের কাছে স্বীকৃতি না পাওয়ার ভয় মনের মধ্যে পোষণ করা
- খিদে, ঘুম অনিয়মিত হয়ে পড়া এবং এগুলির ঘাটতি
- কথায় কথায় কেঁদে ফেলা
- মনোযোগের অভাব
- এনার্জির অভাব এবং ক্লান্তি
- কোনও কারণ ছাড়াই পেটব্যথা এবং মাথাব্যথা
- যে-কোনও কাজ করার অনিচ্ছা প্রকাশ
- মনের মধ্যে অপরাধবোধ জন্ম নেওয়া
- আত্মহত্যার মতো মারাত্মক চিন্তাধারার শিকার হয়ে পড়া।
বাচ্চার মধ্যে এর যে-কোনও একটি লক্ষণ প্রকট হয়ে উঠলেই অভিভাবকদের সাবধান হতে হবে এবং সেই মতো ডাক্তারের সঙ্গে তৎক্ষণাৎ পরামর্শ করে নিয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার রাস্তা বেছে নিতে হবে। বাচ্চা যাতে অবসাদের শিকার হয়ে না পড়ে সেটা খেয়াল রাখার গুরুদাযিত্ব অভিভাবকদেরই নেওয়া দরকার।