সব অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে এসে গেল দোল। তবে করোনার প্রভাব কম হয়ে গেলেও গত কয়েক বছরের মতো এবছর এখনও সে ভাবে হোলি খেলায় মেতে ওঠা যাবে না। শুধুমাত্র পরিবার ও চেনা পরিচিতির গণ্ডির মধ্যেই যথাযথ নিরাপত্তা বজায় রেখে রঙের উৎসবের আনন্দের পরিবেশ কে বজায় রাখার চেষ্টা করতে হবে। কিন্তু দোল খেলার আগে প্রতিবারের মতো এবছরও ত্বক ও চুলের জন্য কিছু প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে, যাতে ত্বকে অ্যালার্জি, জ্বালা না-হয় এমনকি চুল নষ্ট হওয়া থেকেও বাঁচানো যেতে পারে।

কীভাবে হোলির রঙের প্রতিক্রিয়ার হাত থেকে বাঁচাতে পারবেন নিজের ত্বক ও চুলকে? কীভাবে প্রস্তুত করবেন নিজের ত্বককে?

হোলি খেলার Holi Special জন্য এমন পোশাক পরা উচিত যা শরীরের অধিকাংশ অংশ ঢেকে রাখে। গলা ঢাকা পোশাক ও ফুল হাতা জামাকাপড় পরে হোলির সময় বেরোনো উচিত। শরীরের যে অংশ পোশাকে ঢাকা থাকে সেখানে রং লাগার সম্ভবনা কম এবং লাগলেও ওই স্বল্প পরিমাণে রং ওঠাতে খুব কসরত করারও প্রয়োজন পড়ে না। শরীরের উন্মুক্ত অংশে, কোল্ড ক্রিম বা তেল লাগিয়ে রং খেললে ত্বকে রং বসবে না। এ ছাড়াও ওয়াটারপ্রুফ সানস্ক্রিন লাগিয়ে দোল খেলতে বেরোতে পারেন। সূর্যের রোদে কেমিক্যাল যুক্ত রং দিয়ে দোল খেললে ত্বকে খুব বেশি ট্যান পড়তে পারে। তাই সানস্ক্রিন লোশন লাগাতে যেন ভুল না হয়। রোদে বেরোনোর আধ ঘণ্টা আগে ৩০ বা তার চেয়ে বেশি এসপিএফ যুক্ত সানস্ক্রিন লাগানোর পর ময়শ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। ঠোঁটে, কানের পিছনে ও আঙুলের টিপে মোটা পরতের পেট্রোলিয়াম জেলি লাগান।

সংবেদনশীল ত্বককে কী ভাবে তৈরি করবেন রং খেলার জন্য?

যাদের ত্বক খুব সংবেদনশীল, রং খেলতে গিয়ে যদি শরীরের কোনও অংশে চুলকানি বা জ্বালা অনুভব করেন, বা ত্বক লাল হয়ে ওঠে তা হলে শীগগিরি সেই স্থানটিকে ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলা দরকার। ঠান্ডা জল দিয়ে ধুলে জ্বালাভাব খুব তাড়াতাড়ি কম হয়ে যাবে। পরে প্রভাবিত স্থানে ক্যালামাইন লোশান বা গাঢ় ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নেওয়া দরকার। রঙে প্রচুর পরিমাণে কেমিক্যাল থাকে যা ত্বক থেকে ময়েশ্চার শুষে নেয়। তাই খেলার সময় কিছুক্ষণের অন্তরালে জল পান করে শরীরকে রি-হাইড্রেট করাটা একান্ত জরুরি।

যাদের ত্বক খুব শুষ্ক তারা রং খেলার আগে ভালো করে সারা শরীরে অলিভ অয়েল লাগান। শুষ্ক ত্বকে কেমিক্যাল যুক্ত রঙের কারণে বেশি জ্বালা অনুভূত হয় এবং অ্যালার্জি হওয়ার প্রবণতাও বেশি দেখা যায়। রং খেলার সময় চোখে যাতে কোনও ভাবে রং না ঢোকে সে বিষয়ে সতর্ক থাকাটা একান্ত প্রয়োজন।

দোল খেলার পর বাড়ি ফিরেই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রং তুলতে শুরু করা বাঞ্ছনীয়। রং শুকিয়ে যাওয়ার আগেই ধুয়ে ফেলতে পারলে ভালো হয়। হালকা গরম জল ব্যবহার করুন মুখের রং ওঠাতে। Holi Special এর পর সি সল্ট, নারকেল তেল ও গ্লিসারিনের মিশ্রণ তৈরি করে মুখে লাগান। রঙে থাকা কেমিক্যালের তীব্র প্রতিক্রিয়ার হাত থেকে এটি ত্বককে রক্ষা করবে এবং উল্লেখ্য, এই মিশ্রণটি অ্যান্টি ব্যাক্টিরিয়াল ও অ্যান্টি ফাঙ্গাল। রং তোলার জন্য ত্বকে সাবান একদম লাগাবেন না এতে ত্বকের আরও বেশি ক্ষতি হবে। ফেসিয়াল ক্লিনজার বা বেবি অয়েল লাগিয়ে রং তোলার চেষ্টা করুন। চাইলে, লেবুও ত্বকে ঘসতে পারেন। পাতিলেবুতে উপস্থিত প্রাকৃতিক ব্লিচিং উপাদানগুলি রঙের দাগ তুলতে সাহায্য করে। কিছুক্ষণ লেবু ঘসার পর জল দিয়ে সেটিকে পরিষ্কার করে দিন। রং উঠে গেলে খুব ভালো করে ত্বকে ময়েশ্চারাইজার লাগান।

হোলির কয়েকদিন আগে ও পরে ব্লিচিং, ওয়্যাক্সিং অথবা ফেসিয়াল করাবেন না। এতে ত্বকের পোরগুলি উন্মুক্ত হয়ে যায় এবং হোলির রঙ ত্বকের ভিতরের স্তরে পৌঁছে যায়।

চুলের যত্ন নিতে কী করবেন

দোল খেলার আগে চুল ভালো করে বেঁধে নিন। একটা টাইট করে বিনুনি বা খোঁপা করে নিন। একটা স্কার্ফ দিয়ে চুল ঢেকে নেওয়াটাও ভালো বিকল্প হতে পারে। রঙের ক্ষতিকারক কেমিক্যালস থেকে চুলকে বাঁচাতে চুলে হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করুন। ২-৩ টেবিল চামচ অলিভ অয়েলের সঙ্গে ৪ টেবিল চামচ মধু এবং কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে নিন। এছাড়াও নারকেল তেল ও জোজোবা অয়েলও চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারী উপাদান।

রং খেলতে যাওয়ার আগে কখনও শ্যাম্পু করবেন না এতে স্ক্যাল্প শুষ্ক হয়ে পড়বে। মাথায় তেল লাগানো অবস্থায় রং খেলে বাড়ি ফিরলে তারপর শ্যাম্পু করুন। দোলের পর চুল যদি বেশি পড়তে আরম্ভ করে তাহলে মেথি ভিজিয়ে পেস্ট তৈরি করে চুলে মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করুন, উপকার পাবেন।

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...