সন্দেহের একটা কাঁটা আপনার মনে বিঁধে রয়েছে। কিছুদিন ধরেই আপনি লক্ষ্য করছেন, আপনার স্বামীর আচরণ যেন একটু অন্য রকম। আগের মতো তিনি আর মনযোগী নন আপনার ব্যাপারে। হতেও পারে আপনার সন্দেহ অমূলক নয়। আপনার স্বামীর জীবনে হয়তো জায়গা করে নিয়েছেন অন্য কোনও নারী। এই তৃতীয় ব্যক্তিই হয়তো আপনাদের সম্পর্কের মাঝে এসে একটা নিঃশব্দ দূরত্ব তৈরি করছে আপনার সঙ্গে আপনার স্বামীর।

এরকম ঘটনা অস্বাভাবিক নয়। পুরুষকে প্রকৃতি সেভাবেই তৈরি করেছে, যা তাদের নতুনকে আবিষ্কার করার দিকে ঠেলে দেয়। তাদের প্রবণতা থাকেই চেনা দেউড়ির বাইরে গিয়ে নতুনত্বের স্বাদ গ্রহণ করার। প্রকৃতিগত ভাবে লালন করার প্রবণতা মেয়েদের স্বভাব। ফলে তা সম্পর্কই হোক বা সন্তান, তাকে লালন করতেই মেয়েরা পছন্দ করে। তবে ব্যতিক্রম উভয়ের ক্ষেত্রেই আছে। এই লেখায় যে-টিপস দেওয়া হচ্ছে সেগুলির পরিবেশ, পরিস্থিতির সাপেক্ষে পরিবর্তন হতে পারে। কিন্তু কী কী আচরণ দেখলে স্ত্রীয়ের সতর্ক হওয়া উচিত সেটাই এখানে আলোচ্য।

একঘেয়েমি                              

দাম্পত্যের পৌনঃপুনিকতা কিছু স্বামীকে একঘেয়েমির দিকে ঠেলে দেয়। একটা ক্লাসরুমে যেমন একঘেয়ে পড়ার ফাঁকে কোনও অমনোযোগী ছাত্র অকাজে মন দেয়, ঠিক তেমনই এই একঘেয়েমির বিকল্পে কিছুটা এক্সাইটমেন্টের খোঁজেই কোনও পুরুষ এক্সট্রাম্যারিটাল সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এ এক এমনই রহস্যময় পথ, যাতে অনৈতিক হাতছানি আছে, অন্যায়ের প্রলোভন আছে, এসব জেনেও পুরুষটিকে একটি অজানা ক্ষেত্র এক্সপ্লোর করার নেশা পেয়ে বসে। আর এই সময়ে তৃতীয় ব্যক্তির প্রশ্রয় থাকলে তো কথাই নেই। সম্পর্কের অন্য একটি কোণ তৈরি হয়।

দাম্পত্যে কখন একঘেয়েমির অনুভব তৈরি হচ্ছে স্বামীর মনে, সেটা যে-কোনও স্ত্রীরই খেয়াল করা উচিত। খোঁজা উচিত সেই একঘেয়েমির কারণ। এর জন্য তিনি, নাকি তার স্বামীই দায়ী সেটাও ভেবে বের করা দরকার। তারপর স্ত্রীর উচিত সেটাকে দূর করার জন্য উদ্যোগী হওয়া। মৌখিক আলোচনা এক্ষেত্রে সবসময়ই সুফলদায়ী। ইন্টার‌্যাকশন কখনও বন্ধ করবেন না, তাহলেই সমাধানের রাস্তা সুগম হবে।

অকারণে স্বামী অতিরিক্ত উৎফুল্ল

এটাও একটা লক্ষণ, যে স্বামীর আনন্দের উৎস অন্য কোনও কারণ, বা ব্যক্তি যা আপনার কাছে অজ্ঞাত। আপনার তখনই সচেতন হওয়া উচিত যখন আপনি নিজে অনুভব করছেন আপনাদের। দাম্পত্য কেমন যেন নিরুত্তাপ হয়ে গেছে। আপনি বিষয়টি নিয়ে যতটা বিষাদগ্রস্ত, উলটো দিকে আপনার স্বামী যেন অকারণেই উৎফুল্ল থাকেন সবসময়। অকারণ নয় বুঝতে হবে এটার মধ্যে লুকিয়ে আছে কোনও কারণ। সেই তৃতীয় ব্যক্তিই নয় তো, আপনার স্বামীর সুখের উৎস? যে-হাসিটা আপনার উদ্দেশ্যে তিনি ঠোঁটে সাজিয়ে রেখেছেন, সেটা আসল নাকি কৃত্রিম, সেটা স্ত্রী হিসাবে আপনিই বেশি ভালো বুঝবেন।

দাম্পত্যে-আবেগ ভাগ করে নেওয়া, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের ক্ষেত্রে অতি স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু বুঝতে হবে সমস্যা হয়েছে, যখন সেই ইমোশনাল শেয়ারিং-টাই আর আগের মতো হয় না। তার মানে আপনার সচেতন হবার সময় এসেছে। বুঝতে হবে স্বামী তাহলে অন্য কোথাও তার মনের ভার লাঘব করছেন। মানুষের স্বাভাবিক প্রবণতা হল, কোনও একটি ক্ষেত্র যখন তার মনের চাহিদা মেটায় না, তখন অন্য কিছুকে অবলম্বন ভেবে নেওয়া। এক্ষেত্রে একটি বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক আনন্দের আধার হিসাবে ধরা দেয়, কারণ এই সম্পর্কের দরুন কোনও বাড়তি দায়-দায়িত্ব ঘাড়ে চেপে যায় না, অথচ একঘেয়েমি কাটিয়ে খানিকটা নিশ্চিন্তে নিশ্বাস নেবার জায়গা পাওয়া যায়। তাই স্ত্রী এবং স্বামীর মধ্যে ইমোশনাল ব্যালান্স বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি দাম্পত্যের সাফল্যের জন্য।

দাম্ভিক মনোভাব তৃতীয় ব্যক্তি

কর্মক্ষেত্রে সাফল্য যে-কোনও পুরুষের জীবনে একটি বহু আকাঙিক্ষত লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যে যখন পুরুষটি পৌঁছে যায়, তখন স্বাভাবিক ভাবে তাকে ঘিরে প্রচুর স্তবক জুটে যায়। তারা ক্রমাগত তার সাফল্যকে বিরাট আকারে তুলে ধরার চেষ্টা করে, যা ক্রমশ পুরুষটির মনে অহংকার তৈরি করে ও অচিরেই সে দাম্ভিক হয়ে ওঠে। ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় তার মনে হতে থাকে কোনও কিছুই তার অধরা নয়। তাই অন্য কোনও নারীকে পাওয়াও তার জন্য খুব পরিশ্রমলব্ধ ব্যাপার নয়। নিজের সামনে সে যুক্তি সাজাতে থাকে যে এর মধ্যে কোনও অন্যায় নেই, তাকে বোঝার জন্য তারা যথেষ্ট

স্ত্রীরও বোঝা উচিত স্বামীর সাফল্য কখন তার ও তার স্বামীর মাঝখানে একটি প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাফল্যের জন্য স্বামীর ব্যস্ততা কীভাবে দূরত্ব বাড়িয়েছে। কবে থেকে সে আর তার স্বামীর মধ্যে শেয়ারিং-এর জায়গাটা লোপ পেতে শুরু করেছে। এই পরিস্থিতিতে আন্দাজ করা যায় যে স্ত্রীকে স্বামী অবহেলা করছেন কারণ তার জীবনে হয়তো বা দ্বিতীয় কোনও নারীর আবির্ভাব। হয়েছে। তাই শুরু থেকেই সচেতন থাকুন যাতে স্বামীর জীবনে আপনার অপরিহার্যতা না হারায়। সাফল্যের লক্ষ্যে যখন তিনি বদ্ধপরিকর, তখন তার পাশে দাঁড়ান, যাতে সাফল্য পাওয়ার পরও তিনি আপনার প্রয়োজন বোধ করেন।

অন্যমনস্কতা

আপনার স্বামী কি হঠাৎই খুব অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছেন? ভুলে যাওয়ার সমস্যা দেখা দিচ্ছে? কোনও প্রয়োজনীয় কথাও কি তিনি মনে রাখতে পারছেন না? না অ্যালজাইমার নয়— হতে পারে তিনি আর আপনার কথাকে ততটা গুরুত্ব দিয়ে শোনেনই না। তার অমনোযোগিতাই তাকে ভুলো স্বভাবের করে তুলছে। তিনি আপনার পাশে থেকেও যদি অন্যমনস্ক হয়ে থাকেন— বুঝবেন নিশ্চিত ভাবে তার মন অন্য কোথাও পড়ে আছে।

চাবি হারানো, আলো-পাখা না নিভিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়া, জরুরি ওষুধপত্র মনে করিয়ে দেওয়ার পরও আনতে ভুলে যাওয়া, সন্তানের প্রয়োজনীয় জিনিসের কথা মনে না থাকা— এগুলো প্রায়শই ওই সমান্তরাল সম্পর্কের কারণে ঘটে থাকে। হতে পারে তিনি ওই সম্পর্কটাকে ততটাই গুরুত্ব দিয়ে দেখছে, যতটা আপনাদের দাম্পত্যকে মনে করেন। বা হতে পারে ওই সম্পর্ক তাকে কোনও একটা চাপের মুখে দাঁড় করিয়েছে, যার জন্য তিনি সংসারে আর ততটা মন দেন না। কোনও বিশ্বস্ত বন্ধুর কাছে শেয়ার করুন আপনার সমস্যাটা, তারপর খুঁজে দেখার চেষ্টা করুন আপনার আন্দাজ সঠিক কিনা।

মিথ্যাচার

আপনার স্বামী কি ইদানীং আপনার কাছে মিথ্যে বলছেন? আপনি কি সত্যিই প্রমাণ পেয়েছেন যে তার বলা কথাগুলো অসত্য, বা যুক্তির ফঁাক থেকে যাচ্ছে। এটা যদি লাগাতার ঘটতে থাকে, তবে বুঝতে হবে তিনি সঠিক পথে চলছে না। তার জীবনে এমন কিছু ঘটছে, যার কারণে তিনি মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছেন। খুঁজে দেখুন এর কারণ কোনও সমান্তরাল সম্পর্ক নয় তো?

বস্তুত দাম্পত্য বিশ্বাসের উপর দাঁড়িয়ে থাকে। তাই বিষয়টা অত্যন্ত স্পর্শকাতর। নিছক সন্দেহের বশে স্বামীকে অপবাদ দেওয়াও যেমন ঠিক নয়, আবার সব কিছু বুঝতে পেরে বিষয়টাকে এড়িয়ে যাওয়াও ঠিক নয়। আলোচিত লক্ষণগুলি যদি স্বামীর মধ্যে দেখেন, এমন ভেবে নেওয়া সঠিক হবে না যে উনি এক্সট্রাম্যারিটালে জড়িয়ে পড়েছেন। উপযুক্ত প্রমাণ খোঁজার চেষ্টা করুন। আপনার পর্যবেক্ষণ এবং বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সমস্যাটা ডিল করার উপরেই কিন্তু দাঁড়িয়ে আছে দাম্পত্যের এই জটিল রসায়ন।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...