বাংলাদেশের জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী নিয়ে নির্মিত ছবি ‘মুজিব’– দ্য মেকিং অফ এ নেশন ছবির পোস্টার লঞ্চ করলেন পরিচালক শ্যাম বেনেগল।
‘বঙ্গবন্ধু’ নিয়ে এই ছবি তৈরি হয়েছে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে অডিও-ভিস্যুয়াল যৌথ প্রযোজনা চুক্তির মাধ্যমে। শেখ মুজিবুর রহমানের ১০২ তম জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে ১৭ই মার্চ ২০২২ মুম্বাইতে ন্যাশনাল ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন-এ (এনএফডিসি) পোস্টার প্রকাশ করলেন এই ছবির পরিচালক শ্যাম বেনেগল।
বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে ভারত এবং বাংলাদেশ শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী চিত্রের ঘোষণা করেছিল। মুজিব শতবার্ষিকী উদযাপনের শেষ লগ্নে চলচ্চিত্র নির্মাণ সম্পূর্ণ হওয়া উপলক্ষ্যে ছবির পোস্টার প্রকাশিত হল।
ছবি সম্পর্কে পরিচালক শ্যাম বেনেগাল জানিয়েছেন, ‘পর্দায় শেখ মুজিবুর রহমানের মহান জীবন তুলে ধরা কঠিন কাজ ছিল। ‘মুজিব’– দ্য মেকিং অফ এ নেশন আমার কাছে একটি হৃদয়স্পর্শী চলচ্চিত্র। বঙ্গবন্ধুর সুউচ্চ জীবন রিলে ধরে রাখা একটি কঠিন কাজ। আমরা তাঁর চরিত্রটি তুলে ধরতে কোনও সমঝোতা করিনি। মুজিব ভারতের মহান বন্ধু ছিলেন। আমাদের আশা পোস্টারটি দর্শকদের ছুঁয়ে যাবে।’ ভারতের ন্যাশনাল ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন এবং বাংলাদেশ ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের যৌথ প্রযোজনা নিয়ে বলতে গিয়ে বেনেগাল আরও জানিয়েছেন, ‘আমি এই কাহিনীচিত্রটি নিয়ে কাজ করতে পেরে খুশি। এনএফডিসি-র সূচনা থেকে তাদের সঙ্গে কাজের মাধ্যমে ফলপ্রসূ সম্পর্ক হয়েছে এবং বিএফডিসি-র সঙ্গে কাজ করে একটি আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা হল।’
এনএফডিসি-র ম্যানেজিং ডিরেক্টর শ্রী রবীন্দর ভাকার জানান যে, ‘এনএফডিসি কিংবদন্তী চলচ্চিত্রকারদের নিয়ে ছবি তৈরি করেছে, যাঁরা সারা বিশ্বে এখন বিখ্যাত। এই প্রকল্প নিয়ে শ্যাম বেনেগলজির সঙ্গে আরও একবার কাজ করতে পারা কর্পোরেশনের পক্ষে অত্যন্ত আনন্দদায়ক ঘটনা। মুজিব- দ্য মেকিং অফ এ নেশন, এনএফডিসি-র ইতিহাসে একটি পথপ্রদর্শক ছবি হিসেবে পরিগণিত হবে। নিশ্চিতভাবে এই দৃষ্টান্তমূলক চলচ্চিত্রের জন্য কাজ করা আনন্দদায়ক।’
এনএফডিসি-র ম্যানেজিং ডিরেক্টর শ্রীমতী নুজহাত ইয়াসমিন জানান ‘ ছবিটি দিনের আলো দেখতে পাওয়ায় আমি অত্যন্ত খুশি। মুজিব- দ্য মেকিং অফ এ নেশন আমাদের কাছে একটি ভাবাবেগপূর্ণ বিষয়। এএফডিসি-র পক্ষ থেকে আমি বিএফডিসি-কে আমার অভিনন্দন জানাতে চাই যাঁরা এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। বাংলাদেশ আগ্রহের সঙ্গে শ্যাম বেনেগল-জির ছবি দেখার জন্য অপেক্ষা করছে। তিনি একজন কিংবদন্তী চলচ্চিত্র নির্মাতা, আমাদের সকলের কাছেই অত্যন্ত শ্রদ্ধেয়।’
শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকাভিনেতা আরিফিন সুভি বলেন, ‘মুজিবের ভূমিকায় অভিনয় করা খুবই চমকপ্রদ ব্যাপার। এটা স্বপ্ন পূরণ হওয়ার মতো ঘটনা। আমি এই দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে সম্মানিত বোধ করছি। শ্যাম বেনেগল জির মতো কিংবদন্তীর কাছে কাজ করতে পেরে সম্মানিত। এই কাহিনীচিত্র আমার এবং আমার দেশের কাছে কতটা তা ভাষায় বোঝানো যাবে না। ভারতে এই ছবি তৈরি হওয়ার সময় আমি উষ্ণতা এবং মহান আতিথেয়তা অনুভব করেছি। আমি আশাবাদী যে, আমি চরিত্রের প্রতি সুবিচার করেছি এবং দর্শক আমাকে গ্রহণ করবেন।’
চলচ্চিত্রটির শ্যুটিং হয়েছে ভারত এবং বাংলাদেশে কোভিড-১৯ অতিমারীর সময় সবরকম স্বাস্থ্যবিধি মেনে। ছবি তৈরির কাজ শেষ হয় ২০২১এর ডিসেম্বরে।
শেখ মুজিবুর রহমান- বাংলাদেশের জাতির পিতা।
মুজিব ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য রাজনৈতিক নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। রাজনৈতিক জীবনের শুরুতে মুজিবের সঙ্গে মহাত্মা গান্ধীর দেখা হয়েছিল। মানুষের ক্ষমতায়ণের জন্য তিনিই ছিলেন মুজিবের অনুপ্রেরণার উৎস। এই অনুপ্রেরণা সারা জীবন বজায় ছিল। এছাড়াও এই জীবনীচিত্র মুজিবের জীবনের উদযাপন। এটি নিয়ে যায় আমাদের ইতিহাসের পথে যা জীবন্ত হয়ে ওঠবে দর্শকদের দ্বারা। এই চলচ্চিত্র সেই মহান নেতার সাফল্যকে জীবন্ত করে তুলতে চলেছে।
মুজিব জন্মেছিলেন একটি অভিজাত মুসলিম পরিবারে। বড়ো হয়েছিলেন ধর্মীয় এবং সম্প্রীতির আবহে। তিনি গরিবের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু ছিলেন এবং তাদের জন্য তাঁর সমবেদনা ছিল। তিনি হুসেন সুরাবর্দীকে শ্রদ্ধা করতেন। পশ্চিম পাকিস্তান এবং পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্য এবং বঞ্চনার বিরুদ্ধে এবং পাকিস্তানি সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে তিনি লড়াই করেছিলেন। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১এর মধ্যে তিনি প্রায় ১১ বছর কারাবন্দী ছিলেন। তিনি স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশ গঠনে সফল হন। সেইজন্যই তাঁকে বাংলাদেশের জাতির পিতা বলা হয় বঙ্গবন্ধু হিসেবে। তিনি একজন আদর্শ ব্যক্তিত্ব। তাঁর ভাষণ এবং সাহস বাংলাদেশের ইতিহাসের গতিপথ বদলে দিয়েছিল।
মুজিব- দ্য মেকিং অফ নেশন ছবির কলাকুশলীরা বাংলাদেশী চলচ্চিত্রাভিনেতা এবং জনপ্রিয় টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব আরিফিন সুভি শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। অন্যান্য শিল্পীদের মধ্যে আছেন নুসরত ইমরোজ তিশা, ফজলুর রহমান বাবু, চঞ্চল চৌধুরী এবং নুসরত হারিয়া। ছবির কাহিনীটি রচনা করেছেন শ্রী অতুল তিওয়ারী এবং শ্রীমতী শ্যামা জায়দি।
ডিরেক্টর অফ ফোটোগ্রাফি আকাশদীপ, সম্পাদনা অসীম সিনহা, সংগীত পরিচালক শান্তনু মৈত্র, শিল্প নির্দেশক বিষ্ণু নিশাদ, অ্যাকশন পরিচালক শ্যাম কৌশল, কোরিওগ্রাফার মাশুম বাবুল, সাজসজ্জা পিয়া বেনেগল, সহযোগী পরিচালক দয়াল নিহালনি, প্রোডাকশন ডিজাইনার নীতীশ রায়, কাস্টিং শ্যাম রাওয়াত এবং বাহারুদ্দিন খেলন, লাইন প্রোডিউসার সতীশ শর্মা।