শহরে শিক্ষিত মহিলারা নিজেদের অধিকার সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন এবং চাইলেই তারা নিজেদের স্বামীর জীবনও নরক করে তুলতে পারে। বিয়ের ১২ বছর পর, হাইকোর্ট দিল্লির এক দম্পতির বিবাহবিচ্ছেদের মামলায় ডিভোর্সকে স্বীকৃতি প্রদান করে। কারণ স্ত্রী বিয়ের পর দুই বছর বাড়ি থেকে দূরে থেকে স্বামীর উপর মিথ্যা (সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট এবং নিষ্ঠুর আচরণের) আরোপ লাগান। হাইকোর্টের মতে এই ধরনের মিথ্যা মোকদ্দমা নিষ্ঠুরতারই নামান্তর মাত্র।

সত্যি কথা বলতে কি স্বামী-স্ত্রী এবং বিয়ে এই তিনটির মধ্যে প্রধান খলনায়কটি হল দেশের আইন ব্যবস্থা। স্বামী-স্ত্রী তো আইনের দ্বারস্থ হন নিজেদের মধ্যে ঝামেলা মেটাতে। কিন্তু আইন ঝামেলা মেটাবার বাহানায় স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে প্রোরোচিত করে, নিজেদের মধ্যে ঝামেলা-ঝঞ্ঝাট আরও বাড়াতে। স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই বলা হয় আইনের সাহায্য নিয়ে কীভাবে অপরকে নীচু সাব্যস্ত করা যায়। অথচ আইন একথা বলে না যে, একবার এই চক্করে ফাঁসলে স্বামী-স্ত্রী উভয়কেই অসহায়ত্বের শিকার হতে হবে।

দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকা Divorce কেসে সাধারণত দুপক্ষের একজন এটাকে অহংকারের লড়াই হিসেবে ধরে নেয়। ভেবে নেয়, ডিভোর্সের পর তার নিজের জীবন তো নষ্ট হবেই, তাহলে অপরজনকে কেন আনন্দে থাকার সুযোগ করে দেওয়া হবে। অপরকে দণ্ড দেওয়ার সময়, দণ্ড দিতে ইচ্ছুক মানুষটি ভুলে যায় সে নিজেও এই একই প্রহসনের ও অসহায়ত্বের শিকার। যে ডিভোর্স দিতে চায় না তারও চটি-জুতো আদালত আর উকিলদের পিছনে চক্কর লাগাতে লাগাতে ক্ষয়ে যায় এবং জীবনটাও মাঝপথে শূন্যে লটকে থাকে।

মেয়েদের মনে একটা ভুল ধারণা রয়েছে যে-ছেলেরা Divorce পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে আবার বিয়ের পিঁড়িত বসে পড়ে। আসলে ডিভোর্স পাত্র-পাত্রীকে, বিয়ে করার মতন নারী বা পুরুষের সংখ্যা খুবই কম। সবাই ভয় পায়। যদি কোনও তৃতীয় কারণবশত ডিভোর্স হয় তাহলে অন্য কথা কিন্তু ডিভোর্সের পর জীবনসঙ্গীর খোঁজ যারা করে তাদের বেশি ধাক্কা খেতে হয়। হিন্দু ম্যারেজ অ্যাক্ট ১৯৫৬ থাকা সত্ত্বেও নিম্ন আদালত মনে করে ডিভোর্স করা মানে পাপ। অথচ এই ক্ষেত্রে বেশিরভাগই বিচ্ছেদ চায় কারণ স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে থাকে না অথবা দুজনেই অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে বা আলাদা আলাদা বাড়িতে থাকছে। কখনও কখনও উদার মনস্ক জজম্যাজিস্ট্রেট উচ্চ বা সর্বোচ্চ ন্যায়ালয়ে বসে নৈতিক বা ব্যবহারিক নির্ণয় দেন ঠিকই কিন্তু নিম্ন সেশন কোর্ট সেটাকে অগ্রাহ্য করে স্বামী-স্ত্রীকে ডিভোর্স ততক্ষণ দেয় না যতক্ষণ না দুই পক্ষই চুক্তিবদ্ধ হচ্ছে। এখনও যেসব মামলায় দুই পক্ষেরই অনুমতির প্রয়োজন পড়ে সেখানে পিটিশন-এর উপর দ্বিতীয়বার ভেবে দেখার আর্জি জানিয়ে জজসাহেব এক-দুবছর মামলার সময় দীর্ঘ করে তোলেন।

স্বামী বা স্ত্রীর বদনাম করে কোনও দম্পতি কখনও একসঙ্গে থাকতে পেরেছে? যখন এটা পরিষ্কার যে স্বামীর উপর নিষ্ঠুরতার মিথ্যা মোকদ্দমা করা সত্ত্বেও হাইকোর্ট পর্যন্ত ১২ বছরের দীর্ঘ সময় ধরে কেন কেসটি চলল? স্ত্রী যদি সুপ্রিম কোর্ট অবধি কেসটি নিয়ে যেতে চায় তাহলে আরও ৫-৭ বছরের ব্যাপার। সুতরাং যখন ডিভোর্স শেষমেশ পাওয়া যাবে তখন দুজনেই বৃদ্ধ। অবশ্য এতে আমাদের মহান হিন্দু সংস্কৃতির রক্ষা অবশ্যই হবে যারা বিয়েকে সাতজন্মের বন্ধন ভাবে। এই দীর্ঘ সময় নারীকে থাকতে হয় তার বাপের বাড়ির ভরসায় আর পুরুষরা নানা ধরনের নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে। শাস্ত্রের প্রবচন সর্বদা আমাদের প্রণম্য অথচ আইনের নির্দেশাবলী সবই মা গঙ্গার জলে।

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...