জায়গাটা প্রাকৃতিক ভাবে একটা বাটির মতো। চারদিক পাহাড় দিয়ে ঘেরা, মাঝখানে গভীর উপত্যকা। সেই গভীরেই সব হিংস্র শাপদদের বাস। সেখানে মানুষের পদধুলি তো দূরের কথা, গাছপালার বুক চিরে রোদ পর্যন্ত ঢোকে না৷ এতটাই গভীর এই সবুজ যে, ক্যামেরায় ছবি তুলতে গেলেও মুশকিলে পড়তে হয়।
এই রকম একটা জায়গায় পাহাড়ের দেয়াল বেয়ে সরু হয়ে আছড়ে পড়ে বরেহিপানি জলপ্রপাত৷ আপনি তার বিপরীতে দাঁড়িয়ে ১৭০০ ফুট উঁচু পাহাড়ের চূড়া থেকে দেখতে পাবেন সেই জলরাশি। ভারতের দ্বিতীয় উচ্চতম জলপ্রপাত হল বরেহিপানি। অবস্থান – ওডিশার ময়ুরভঞ্জের সিমলিপাল জাতীয় উদ্যানের মাঝামাঝি। দুর্গম কিন্তু রোমাঞ্চকর। ভয়ঙ্কর অথচ সুন্দর।
ওড়িয়া ভাষায় বরেহি কথার অর্থ দড়ি। আর পানি মানে সবাই জানি জল। দড়ির মতো পাহাড় বেয়ে সরু এবং লম্বা হয়ে আছড়ে পড়ে জলরাশি। তাই এর ডাকনাম বরেহিপানি। শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নয়, পাশাপাশি এলাকার আদিবাসী মানুষের ধর্মীয় সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে যুক্ত আছে এই সুন্দরী ঝরনা। আদিবাসী মানুষদের পরব চলে এই জলপ্রপাত ঘিরে। হলুদ সবুজ পতাকা নিয়ে তারা জমায়েত হন অভয়ারণ্যের মাঝে। তারা সেরেঙ (গান) গাইতে গাইতে বন্দনা করেন লোকজ দেবতার৷
সিমলিপালের সবচেয়ে বড়ো আকর্ষণ চাহলা- যা একসময় ময়ূরভঞ্জের রাজাদের মৃগয়াভূমি ছিল। এখানেই রয়েছে বনবিভাগের বনবাংলো, ওয়াচটাওয়ার। চাহলাতেই আছে সল্ট পিট, যেখানে বন্য পশুরা আসে নুন খেতে। ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে শেখায় জঙ্গল। দেখা মিলতে পারে বন্য প্রাণীর আবার নাও মিলতে পারে দেখা। অপেক্ষাটুকু থেকে যায় আজীবন তাইতো ফিরে আসা বারবার, অদেখার সন্ধানে।
দেশের অন্যান্য অভয়ারণ্যে বেড়ানোর পরিবেশ অনেক বেশি সাজানো গোছানো, পর্যটকদের সুব্যবস্থাও আছে। কিন্তু সিমলিপাল সেরকমটা নয়। অগছালো। তবে সিমলিপাল এর এই কেয়ারলেস বিউটিটাই পর্যটকদের নেশার মতো টানে। এই জঙ্গলের মধ্যেই আছে অনেক চেনা, অচেনা নদী- বুড়িবালাম, পলপলা, সাঁকো, খৈরি, সারান্ডি, থাকথাকি, ইস্ট ডেও , ওয়েস্ট ডেও প্রভৃতি নদী। নদী, পাহাড়, ঝরনা, জঙ্গল সব মিলিয়ে সিমলিপালের সৌন্দর্য অতুলনীয়।
সম্প্রতি এখানে বাঘ গণনার কাজ শেষ হয়েছে। রাজ্য বন দফতর এখানে ৩২টি বাঘের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সংস্থা যখন সেই রিপোর্ট ভেরিফাই করতে এলে, তাদের প্রাথমিক রিপোর্টে দাবি, ৩২ কেন? সংখ্যাটা তার কয়েকগুন বেশি।
কীভাবে যাবেন?
কলকাতা কেওনঝড় বাসে জসিপুর নেমে (এদিকে রাস্তা খুব খারাপ সময় এবং দূরত্ব অনেক বেশি। ঝাড়গ্রামের দক্ষিণে নয়াগ্রাম বা বারিপাদার দিক দিয়ে আসাই শ্রেয়। আবার ভদ্রক স্টেশনে নেমে গাড়িতে করে বালেশ্বর হয়েও চলে আসতে পারেন সিমলিপালে।
জরুরি পরামর্শ
জঙ্গলে সঙ্গে রাখুন শুকনো খাবার, জল। আর খুব সকালের দিকে জঙ্গলে প্রবেশ করতে পারলে বন্য প্রাণ চাক্ষুষ করার সুযোগ থাকে সবচেয়ে বেশি। জঙ্গলে খুব উজ্জ্বল রঙের জামাকাপড় পরে না যাওয়াই শ্রেয়। জঙ্গলে প্রবেশের পর গাইডের পরামর্শ মেনে চলাই উচিত।