কর্মক্ষেত্রের পরিবেশের উপর বহুলাংশে নির্ভর করে পারফর্মেন্স। ওয়ার্কপ্লেস যা আপনার নিত্যদিনের অনেকটাই দখল করে থাকে, সেখানেই আপনার পরিশ্রম ও সময়ের যথার্থ মূল্যায়ন হওয়া দরকার। কিন্তু অনেক সময়ই দেখা যায় সেখানকার পরিবেশ যথেষ্ট বন্ধুত্বপূর্ণ না হওয়ার দরুণ, কিংবা সহকর্মীরা যথেষ্ট সহযোগিতার মনোভাব পোষণ না করার জন্য, রোজ সেখানে যাওয়াটাই আপনার কাছে যথেষ্ট কষ্টকর হয়ে ওঠে। শারীরিক না হোক, তখন মানসিক নির্যাতনেরই প্রকারান্তর হয়ে দাঁড়ায় ওই ওয়ার্কপ্লেস অর্থাৎ কর্মস্থল।
এতে সবচেয়ে বেশি যা প্রভাবিত হয়, তা হল আপনার মন। আপনার নিজেকে ডেলিভার করার ক্ষমতা প্রতিনিয়ত কমতে থাকছে, একই সঙ্গে কমতে থাকে আপনার আত্মবিশ্বাসও। ফলত আপনার পারফর্মেন্সের গ্রাফও মাটিতে গোঁত্তা খেয়ে পড়ে কাটা ঘুড়ির মতো। চারপাশে অবিশ্বস্ত মুখের সারি, প্রতিনিয়ত আপনারই অলক্ষে সেখানে রক্ষিত হতে থাকে আপনাকে বিপদে ফেলার নানা অসাধু প্রক্রিয়া। কারণ যুগটা প্রতিযোগিতার। আপনি আজ স্বমহিমায় আসীন– কাল না-ও থাকতে পারেন। পুরোটাই নির্ভর করছে আপনার পারফর্মেন্স আর ম্যানেজমেন্ট-এর মর্জির উপর। কিন্তু এমন অবস্থায় আপনার যেটা করণীয় তা হল অগ্রিম সতর্কতা অবলম্বন করা। তাই শুরুতেই নিজেই যাচাই করে নিন, আপনি কেন হলেন এমন পরিস্থিতির শিকার।জেনে নিন Office conspiracy সামলাবেন কীভাবে?
আপনি কখন ভিকটিম
এমন হতে পারে যে আপনার ব্যক্তিত্ব এবং কর্মদক্ষতা অন্যের কাছে প্রফেশনাল থ্রেট। এরকম সময় আপনি এককভাবে কারও বা দলবদ্ধভাবে একদল মানুষের ঈর্ষার পাত্রী হলেন। এবং সেভাবেই হয়ে পড়লেন ষড়যন্ত্রের শিকার। অথবা এমনও হতে পারে, যে অফিসের কোনও একটি লবির সমর্থক নন আপনি। সেক্ষেত্রে আপনাকে ওই লবিতে যোগদান করানোর জন্য আপনাকে ‘ভিকটিম’ করা হতে পারে। বস্তুত এটা মানসিক চাপ সৃষ্টি করারই নামান্তর। সেই চাপের কাছে আপনি হয় নতি শিকার করবেন, নয়তো ডিপ্লোম্যাটিকালি ব্যাপারটা হ্যান্ডেল করবেন। কিন্তু পালিয়ে যাওয়াটা কোনও অবস্থাতেই কাম্য নয়।
কাজে নাক গলানো
অনেকেরই স্বভাব থাকে অন্যের কাজে নাক গলানোর। বন্ধু সেজে যে-আপনাকে সাহায্য করতে এগিয়ে এল, আপনার অলক্ষে হয়তো সে আপনার কাজের দুর্বলতার খবর পাওয়ামাত্র তার সুযোগ নিতে শুরু করতে পারে। এমনও হতে পারে আপনাকে সাহায্য করার পরিবর্তে কাজে ভুলভ্রান্তির পরিমাণ সে এতটাই বাড়িয়ে দিল যে আপনার সম্পর্কে আপনার উর্ধতন কর্মচারীর ধারণাটা বরাবরের মতো খারাপ হয়ে গেল। সুতরাং প্রথমেই বুঝে নিতে হবে ওই সহকর্মী সত্যি সত্যিই আপনাকে সাহায্য করতে চায় কিনা, নাকি তার উদ্দেশ্যে গলদ আছে।
মানসিক চাপসৃষ্টি
অফিসে মহিলাকর্মীদের প্রতি পুরুষদের দৃষ্টিভঙ্গি সব সময় যে বন্ধুত্বপূর্ণ হয়, তা নয়– অনেক সময় পুরুষরা সহকর্মী ও সমব্যথী হওয়ার বদলে এক অসুস্থ প্রতিযোগিতায় সামিল হন। মানসিক ভাবে পীড়ন করে মহিলা কর্মীটিকে সরিয়ে দেওয়াই হয়ে দাঁড়ায় তাদের অন্যতম লক্ষ্য। পীড়ন কখনও কখনও মানসিক পর্যায় অতিক্রম করে শারীরিক নির্যাতনের পর্যায় পৌঁছোয়। সেটা পোশাক ধরে টানা, অযথা পিঠে চাপড় মেরে কথা বলা, তির্যক উক্তি দ্বারা পরিহাস বা মশকরা করা– নির্যাতনের এমন নানা রূপ ক্রমশ কষ্টকর পরিস্থিতিতে দাঁড় করিয়ে দেয় মহিলাটিকে। এরকম পরিস্থিতি-তে পরিত্রাণ মেলে হয়, আমল না দিলে নয়তো আলোচনার মাধ্যমে কোনও আলোচনায় এলে।
ঈর্ষার সবুজ চোখ
অনেক সময়ই নিজের দক্ষতার মাসুল দিতে হয় নির্যাতনের শিকার হয়ে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে আপনাকে ফাঁদে ফেলার জন্যই বন্ধু সেজে কেউ আপনাকে একটা ভুল সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করতে পারে। আরও উন্নতির লোভ দেখিয়েও কোনও অসৎ কাজে আপনাকে সামিল করতে পারে। যতক্ষণে আপনি Harmful colleague -এর অভিসন্ধি টের পাবেন, ততক্ষণে হয়তো অনেক দেরি হয়ে গেছে। তাই প্রথম থেকেই সতর্ক থাকুন। নতুন অবস্থায় খানিকটা লো-কি থাকাই ভালো। নিজের সাফল্য ও দক্ষতা জাহির না করে, নিঃশব্দে নিজের কাজটুকু সম্পাদন করুন। এর ফলে কারও ঈর্ষার পাত্রী হওয়ার সম্ভাবনা অন্তত থাকবে না।
মিথ্যে সাক্ষ্য থেকে সাবধান
যারা উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে আপনাকে ফাঁসাতে চায়, মনে রাখবেন তারা প্রমাণ স্বরূপ কিছু মিথ্যে এভিডেন্স-ও তৈরি করতে পারে। তাই সিনিয়রদের কারও সঙ্গে কিছুটা হলেও সদ্ভাব বজায় রাখুন। কোনও একজনের নেকনজরে থাকার চেষ্টা করুন, যাতে আপনাকে মিথ্যে দোষারোপের দায়ে ফাঁসানো হলে, নিজের সমর্থনে অন্তত একজনকেও পাশে পান। হয়তো এমন পরিস্থিতির জন্য আপনি প্রস্তুতই ছিলেন না, কিন্তু আপনার মিষ্টি স্বভাব, বন্ধুত্বপূর্ণ অ্যাটিটিউডও এই বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাই সজাগ থাকুন, সচেতন থাকুন, চোখ-কান খোলা রাখুন, কোনও সিদ্ধান্ত একা নেওয়ার আগে ভাবার সময় নিন। নিজের কাছে নিজের যুক্তির জায়গাটা পরিষ্কার রাখুন। আর সিদ্ধান্ত ফাইনাল করার আগে দেখুন এর ফলে কারও ক্ষতি বা লাভ হচ্ছে কিনা।
জুনিয়ার হওয়ার অভিশাপ
নতুন চাকরিতে জয়েন করার পর জুনিয়ার স্টাফ হিসাবে, এমন পরিস্থিতির শিকার হতে পারেন আপনি। আসলে নতুন কর্মীর দক্ষতা নিয়ে পুরোনোদের মধ্যে একটি প্রফেশনাল থ্রেট অনুভূত হওয়া অস্বাভাবিক নয়। সেই ভয় থেকে, নিজের আসন বাঁচানোর জন্যই, নতুন কর্মীকে এমন মাসুল দিতে হতে পারে। পরিস্থিতি একসময় এমন হয়ে দাঁড়ায় যে জুনিয়র কর্মীটি-কে কোনও একটি কাজের জন্য দোষী সাব্যস্ত করে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়। এই পীড়ন অনেকে মেনে নিতে পারেন না। সংঘাত বাধে নিজের বিবেক ও বুদ্ধির সঙ্গে। কিন্তু বুদ্ধিমত্তা প্রাথমিক ভাবে এই চাপের কাছে নতি স্বীকার করে নেওয়াতেই। কারণ পরিস্থিতি আপনাকেই ফেস করতে হবে ও কাটিয়েও উঠতে হবে। চেষ্টা করুন কোনও একজন বয়ঃজ্যেষ্ঠ কর্মীর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে। প্রয়োজনে বসের সাথে সরাসরি কথা বলুন।
আত্মরক্ষা করতে শিখুন
আপনি পীড়নের শিকার হলে বুঝতে হবে আপনি অনেকের কাছেই প্রফেশনাল থ্রেট। তাই সরাসরি সংঘাতে না গিয়ে, প্রথমে চেষ্টা করুন একটু আন্ডার প্লে করতে। নিজের দক্ষতা দিয়ে বসের মন জয় করার চেষ্টা করুন।আপনার দিক থেকে বন্ধুসুলভ ভাব বজায় রাখুন। প্রয়োজনে যাকে শত্রু বলে চিহ্নিত করেছেন তাকে একটু বেশি সময় দিন। তার সমস্যাটা খুঁজতে চেষ্টা করুন ও সতর্ক হোন।বিপদের আঁচ পেলে আগেই আপনার উর্ধতন-কে এ ব্যাপারে সজাগ করে রাখুন৷ধৈর্যই হল পরিস্থিতি-কে কাটিয়ে ওঠার মূলমন্ত্র। ভয় পেয়ে পিছু হঠবেন না। বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে ফেস করুন পরিস্থিতি।