সত্যজিৎ রায়ের সৃষ্টি ফেলুদার হাত ধরে পাঠক লখনউ এর স্বাদ নিয়েছে ‘বাদশাহি আংটি’ রহস্যোপন্যাসের মাধ্যমে। লখনউ শহর নিশ্চয়ই সত্যজিৎ রায়ের অত্যন্ত প্রিয় ছিল, না হলে আবার কেন তিনি আর-একটি রহস্য কাহিনিরও পটভূমি নির্বাচন করবেন এই শহরকেই? ‘শকুন্তলার কণ্ঠহার’ কাহিনির ব্যাকড্রপ-ও এই লখনউ শহর। সত্যজিৎ রায়ের মনোভাব ফেলু মিত্তিরের মুখেই না হোক শোনা যাক– কেন লখনউ তাঁর এত প্রিয়! ‘…আমারও লখনউ’র কথা হলেই মনটা চনমন করে ওঠে। এত সুন্দর শহর ভারতবর্ষে কমই আছে। শহরের মাঝখান দিয়ে নদী বয়ে গেছে, এরকম ক’টা শহর পাবেন আপনি? ব্রিজের একদিকে শহরের অর্ধেক, বাকি অর্ধেক অন্যদিকে। এছাড়া নবাবি আমলের গন্ধটা এখনও যায়নি। চারিদিকে তাদের কীর্তির চিহ্ন ছড়ানো। তার উপর সেপাই বিদ্রোহের চিহ্ন। নাঃ আপনার কথাই শিরোধার্য। কদিন থেকে ভাবছি কোথায় যাওয়া যায় এবার পুজোয়। লখনউ-ই চলুন…।’ এই ছিল লালমোহনবাবুর প্রশ্নে ফেলুদার জবাব। এমন দৃষ্টিনন্দন জায়গাটি চাক্ষুস করার প্রলোভনে আমরাও লখনউ ভ্রমণে উদ্যোগী হই– কে বলতে পারে আমরাও বাদশাহি লখনউ র রূপ রস গন্ধ উপভোগ করতে করতে একটু রহস্যের স্বাদ পাব না!
লখনউ চলেছি অমৃতসর এক্সপ্রেস ধরে। ট্রেনে যেতে যেতেই বইয়ের পাতা উলটে লখনউ শহরের ইতিহাস সম্পর্কে একটা হদিশ পাওয়ার চেষ্টা করি। কারণ বেড়ানোর কোনও জায়গার ইতিহাস না থাকলে ভ্রমণ একেবারেই সম্পূর্ণ হয় না। বিশেষত যদি সে স্থানের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট থাকে তাহলে তো কথাই নেই!
উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের রাজধানী লখনউ। শুধু রাজ্যের নয়, সারা ভারতবর্ষের এক অন্যতম সাংস্কৃতিক পীঠস্থান এই লখনউ। পুরাণের গল্প বলে রামচন্দ্র বনবাস থেকে ফিরে গোমতী নদীর দুধারে বিস্তৃত এলাকা উপহার দিয়ে ছিলেন ভ্রাতা লক্ষ্মণকে। তাই এই স্থানের নাম হয়েছিল লক্ষ্মণপুর। এই লক্ষ্মণপুর ছিল অযোধ্যা রাজ্যের এক ক্ষুদ্র অংশ মাত্র। এই লক্ষ্মণপুর তথা লখনপুর থেকে হয়তো লখনউ নামের উৎপত্তি। নানা উত্থানপতনের সাক্ষী হয়ে আছে লখনউ-এর ইতিহাস।
অবধ তথা অযোধ্যা একাদশ শতকে গজনীর মামুদের হাতে আক্রান্ত হয়, তবে তার কিছুদিনের মধ্যে রাজপুতরা লখনউ-সহ পার্শ্ববর্তী অঞ্চল দখল করে নেয়। এরপর মুসলমান শাসকেরা লখনউয়ের ইতিহাস গড়ে তোলে– ক্রমান্বয়ে বখতিয়ার খিলজি, নাসিরুদ্দিন মহম্মদ শাহ, কামারুদ্দিন করণ, ফরহাত খান প্রভৃতি শাসকের হাতে গড়ে ওঠে লখনউ। লোদী বংশের শাসনকালে লখনউ দিল্লি সুলতানের আয়ত্তে আসে। অষ্টাদশ শতাব্দীতে মোগল সম্রাট, অযোধ্যার নবাব হিসাবে নিযুক্ত করেন সদত আলি খানকে। এই বংশের চতুর্থ নবাব আসফ-উদ্-দৌল্লা ফৈজাবাদ থেকে রাজধানী লখনউতে স্থানান্তরিত করেন। ধীরে ধীরে লখনউ বিকশিত হতে থাকে নবাবি স্টাইলে। আসফ-উদ-দৌল্লার পর গাজিউদ্দিন হায়দর, মহম্মদ আলি শাহ, ওয়াজেদ আলি শাহ প্রমুখের রাজত্বকালে লখনউ তার খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছোয়। নবাবি আদবকায়দা ও পরিশীলিত ব্যবহারের জন্য খ্যাতি লখনউয়ের অধিবাসীদের।
প্রায় আট নয় ঘণ্টা দেরিতে অমৃতসর এক্সপ্রেস লখনউ স্টেশনে এসে দাঁড়ায় রাত এগারোটারও পরে।
পরের দিন সকালেই লখনউ দর্শনে বের হওয়া যেত কিন্তু দিন চারেক লখনউতে থাকব অতএব কোনও তাড়াহুড়োর মধ্যে গেলাম না। রসিয়ে রসিয়ে উপভোগ করতে হবে লখনউয়ের গরিমা। লখনউ বেড়াতে এলে অবশ্যই যা দেখা উচিত, সেগুলি হল বড়ো আর ছোটো ইমামবাড়া, ভুলভুলাইয়া, রুমি দরওয়াজা, জামা মসজিদ, ক্লক টাওয়ার, রেসিডেন্সি প্রভৃতি।
বস্তুত লখনউয়ের নবাবরা প্রায় সকলেই ছিলেন শিল্পসংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক ও বিলাসপ্রিয়। একদিকে যেমন শিল্পসংস্কৃতিতে তথা গানবাজনা হস্তশিল্পের পৃষ্ঠপোষকতা করে গেছেন অন্যদিকে সুদৃশ্য প্রাসাদ, বাগিচা, মসজিদ ইত্যাদি নির্মাণে এগিয়ে দিয়েছেন অর্থের ভাণ্ডার। শতরঞ্জ (দাবা)-কবুতর (পায়রা)-গজল-শায়েরি ঘেরা মোহময় স্বপ্নে ভাসতে থাকে লখনউ। সংগীত, নৃত্য, কাব্য, শিল্পকলায় আগ্রহী, খাদ্য-পানীয় বিলাসী নবাবদের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠে সংগীত-বাদ্য-নৃত্যকলার বিশিষ্ট লখনউ ঘরানা। সে ঘরানার সুর হয়তো এখনও বিরাজ করে প্রাচীন ঐতিহ্যের অনুসারী লখনউ শহরে। শাম-এ-আওধ অর্থাৎ লখনউয়ের সন্ধ্যা তখন যেন স্বর্গসুখ। তবে এই স্বর্গসুখ হয়ে ওঠে ক্ষণস্থায়ী। গান-বাজনায় পারদর্শী হলেও নবাব ওয়াজেদ আলি শাহ নিজের রাজ্য পরিচালনায় ব্যর্থ হন ও ইংরেজ দ্বারা ক্ষমতাচ্যুত হন। ইংরেজদের হাতে পরাজিত ও রাজ্যচ্যুত হওয়ার পর লখনউয়ের নবাবদের প্রতিপত্তি লুপ্ত হয়। হারিয়ে যেতে থাকে নবাবি বৈভব। সেই ক্রমবিলুপ্ত নবাবি ঐতিহ্যের স্বাদ নিতে বেরিয়ে পড়ি পথে। লখনউয়ের প্রধান আকর্ষণ বড়ো ও ছোটো ইমামবাড়া। প্রথমে বড়ো ইমামবাড়া। গেট দিয়ে প্রবেশ করলেই চোখে পড়ে সবুজ লন, তার পাশ দিয়ে পিচের রাস্তা চলে গেছে ইমামবাড়ার প্রবেশপথ পর্যন্ত। টিকিট কাটতে হবে ভিতরে প্রবেশ করার জন্য। বড়ো ইমামবাড়ার টিকিটঘর থেকে বড়ো ও ছোটো ইমামবাড়া, ভুলভুলাইয়া, বাওলি, রুমি দরওয়াজা, পিকচার গ্যালারির একত্রে টিকিট কাটা যায়। সব স্পটই যখন দেখা হবে, তখন একত্রে টিকিট কাটাই সুবিধা। ভুলভুলাইয়া দর্শনের জন্য গাইডের ব্যবস্থা আছে– আগে শুনেছি রেট নিয়ে খুব অশান্তি হতো এখন সরকার নির্দিষ্ট করে দিয়েছে গাইড-চার্জ। গাইড-চার্জ আগেই মিটিয়ে দিয়ে জুতো জমা করে এবার বড়ো ইমামবাড়ায় প্রবেশ।
প্রথমেই মনে প্রশ্ন জাগে ‘ইমামবাড়া’ কথাটির অর্থ কী? গাইডের উত্তর থেকে যা দাঁড়াল তা হল– ইমামবাড়া বা ইমামবর্গা হল এমনই এক উৎসর্গীকৃত সৌধ যেখানে ইমাম হোসেনের স্মৃতিতে শ্রদ্ধা জানানো হয়। কারবালার ময়দানে সত্যের জয়ধবজা তুলতে গিয়ে ইমাম হুসেন ও তার আত্মীয় পরিজন-সহ জ্জর জন শহিদ হন। সেই ইমাম হোসেনের স্মৃতির উদ্দেশে উৎসর্গীকৃত সৌধটি নবাব আসফ-উদ-দৌল্লার উদ্যোগে নির্মিত হয়। এই ইমামবাড়া নির্মাণের কারণও ছিল অত্যন্ত মহৎ। দুর্ভিক্ষের সময় প্রজাদের রোজগারের বন্দোবস্ত ও পরবর্তী সময়ে আশ্রয় দেওয়ার জন্য এই সৌধটি নির্মিত হয়। ইমামবাড়ার একতলায় হলঘরটির বিশেষত্ব এই যে, ছাদের ভার নেওয়ার জন্য হলের মধ্যে কোনও স্তম্ভ নেই। বলা হয় এটিই পৃথিবীর বৃহত্তম স্তম্ভহীন কক্ষ। দোতলার চারদিক ঘোরানো বারান্দা থেকে দেখা যায় এই কক্ষের অনুষ্ঠান। আশ্চর্য স্থাপত্যরীতির কারণে বারান্দার একদিকে সামান্য দেশলাই জ্বালানোর শব্দও পৌঁছে যায় কক্ষের অন্য প্রান্তের বারান্দায়।
দুশো বছরেরও আগে নবাব আসাফ-উদ্-দৌল্লা তৈরি করেছিলেন এই প্রাসাদ– হয়তো ভেবেছিলেন আগ্রা-দিল্লির সৌধগুলির সমকক্ষ একটি সৌধ নির্মাণ করবেন। ইরানি স্থপতি খিফায়াতুল্লার নকশার উপর ভিত্তি করে তৈরি হল এই প্রাসাদ। মোগল আমলের তৈরি প্রাসাদের সমকক্ষ না হলেও, ভারতের ইসলামি স্থাপত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই ইমামবাড়া।
ইমামবাড়ার উপর তলায় রয়েছে ভুলভুলাইয়া। আধো-অন্ধকারে অসংখ্য গলিপথে একবার হারিয়ে গেলে ফিরে আসা কঠিন। নবাব নাকি বেগমদের নিয়ে প্রদীপের আলোয় লুকোচুরি খেলতেন এই ভুলভুলাইয়ার অন্দরে। একইরকম দেখতে অসংখ্য খুপরি ও ঢাকা বারান্দা নিয়ে এই ভুলভুলাইয়া। অনেকগুলি পথ এখন বন্ধ তবুও গাইডের সাহায্য ছাড়া এ পথ চিনে বেরোনো সত্যিই মুশকিল। কয়েকবার চেষ্টা করেও বার বার ভুল পথে পড়তে হয় আর গাইড সঠিক পথ দেখায়। এ যেন এক দারুণ খেলা!
ভুলভুলাইয়ার পথে গাইডের নির্দেশ অনুযায়ী সিঁড়ি ভেঙ্গে একেবারে ভুলভুলাইয়ার ছাদে পৌঁছে গেলাম। ছাদ থেকে লখনউয়ের এক অনন্য ছবি ফুটে ওঠে। ছাদ থেকে দেখা যায় ইমামবাড়ার প্রাঙ্গণে বাঁদিকে আসাফ-উদ-দৌল্লা মসজিদের অনন্য রূপ আর ডানদিকে প্ত তলা বাওলি তথা কূপের স্থাপত্য। ইমামবাড়া তথা ভুলভুলাইয়ার ছাদে বেশ কিছুক্ষণ কাটিয়ে এবার নেমে আসা।
এবার বাওলি দর্শন। বাওলি হল এক বিশেষ ধরনের কূপ। পাঁচ তলা এই কূপ একদিকে গোমতী নদীর সঙ্গে যুক্ত করা আছে তেমনি নাকি মসজিদের সঙ্গেও যুক্ত। মহরমের সময় মিছিল বেরোয় এই বড়ো ইমামবাড়া থেকে। সাজসজ্জার জৌলুসও তখন চোখে পড়ার মতো। বড়ো ইমামবাড়ার চত্বরের মধ্যেই ইমামবাড়ার বাঁদিকে আসফ-উদ-দৌল্লা মসজিদ। যার প্রকাণ্ড মিনার দুটি ইমামবাড়ার শোভা বাড়িয়েছে। তবে এই মসজিদে মুসলমান ছাড়া অন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রবেশাধিকার নেই।
বড়ো ইমামবাড়া থেকে ছোটো ইমামবাড়ার পথে যেতে পড়ে রুমি দরওয়াজা। নবাব আসফ-উদ-দৌল্লা, রাস্তার উপর উঁচু এই দরওয়াজা নির্মাণ করান। ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের সময় ত্রাণকার্যের অঙ্গ হিসাবে নবাব এটি নির্মাণ করান। কনস্টানটিনোপলের একটি দরওয়াজার অনুকরণে নির্মিত প্রবেশপথটির গায়ে রয়েছে অপূর্ব কারুকার্য। তুর্কি শৈলী অনুসৃত হয়েছে এই কারুকাজে। সিপাহি বিদ্রোহের সময় এই রুমি দরওয়াজা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে এখনও তার রূপ দৃষ্টি আকর্ষণের পক্ষে যথেষ্ট।
রুমি দরওয়াজা ছাড়িয়ে পিচ রাস্তা ধরে পশ্চিম দিকে এগিয়ে চলি ছোটো ইমামবাড়ার উদ্দেশ্যে। ছোটো ইমামবাড়ার আর-এক নাম হুসেনাবাদ ইমামবাড়া। লখনউয়ের পথে চলতে চলতে সব সময়েই চোখে পড়ে এক পুরোনো ঐতিহ্যের রেশ। সিপাহি বিদ্রোহের সময় সিপাহিদের হাতে আর পরে ইংরেজদের হাতে অনেক অট্টালিকা, প্রাসাদ ধবংস হয় বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিছু কিছু বাড়ি পুনর্নির্মিত হয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে স্কুল, কলেজ, হসপিটাল বা সরকারি অফিস হিসাবে।
কিছু ঐতিহ্যময় স্থাপত্য পুরাতত্ত্ব বিভাগ দ্বারা সংরক্ষিত হচ্ছে আবার অনেকগুলি পরিত্যক্ত হয়ে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে বিস্মৃতির অতলে।
নাসির-উদ-দৌল্লা প্রবীণ বয়সে ইংরেজদের সাহায্যে লখনউয়ের সিংহাসন পুনরুদ্ধার করে মহম্মদ আলি শাহ নামে রাজত্ব শুরু করেন। তিনি ব্যাবিলন শহরের অনুকরণে লখনউকে সাজিয়ে তুলতে চেয়েছিলেন। তারই দৃষ্টান্ত হিসাবে নির্মিত এই ছোটা ইমামবাড়া– যা তিনি নিজের সমাধিস্থল হিসাবে নির্মাণ করান। এই ছোটা ইমামবাড়া তৈরি হয় অর্থাৎ বড়া ইমামবাড়া নির্মাণের পরে। সৌধ প্রাঙ্গণ বেশ সাজানো গোছানো– সামনে বাগান, মাঝখানে চতুষ্কোণ জলাধার, তার দুধারে তাজমহলের দুটি ক্ষুদ্র অনুকৃতি। এখানেই তাঁর কন্যা ও জামাতার সমাধিস্থল। ছোটো ইমামবাড়ার প্রধান সৌধটি গম্বুজাকৃতি, তার সঙ্গে রয়েছে অনেকগুলি ছোটো ছোটো মিনারের সমন্বয়।
ছোটো হলেও স্থাপত্যে অভিনবত্ব রয়েছে। জনশ্রুতি বলে দুর্ভিক্ষের সময় এই ইমামবাড়া নির্মাণ মাধ্যমে শ্রমিকের রুটিরুজির ব্যবস্থা করেন নবাব। এই নির্মাণের বিশেষত্ব ছিল দেয়ালে ক্যালিগ্রাফি স্টাইলে লেখা কোরানের বাণী ও মাথায় সোনার গম্বুজ ও অনবদ্য অলংকরণ। ইমামবাড়ার অন্দরে রয়েছে রুপোর সিংহাসন ও নানা সাজের তাজিয়া। বাহারি ঝাড়লণ্ঠনের সংগ্রহ এই ইমামবাড়ার এক সম্পদ। মহরমের সময় এই ঝাড়লণ্ঠণগুলি প্রজ্জ্বলিত হয়ে উঠলে সৌধটি সেজে ওঠে এক অন্য রূপে। তাজিয়াগুলিতে আরশির কাজ, রঙিন নকশা, চন্দন কাঠ, মোম, নানা রঙের কাগজ ও জরির কাজে সজ্জিত।
ছোটো ইমামবাড়ার পশ্চিম দিকে, ঢিল ছোড়া দূরত্বে জুমা মসজিদ। নবাব মহম্মদ আলি শাহ এই মসজিদ নির্মাণে উদ্যোগী হন। নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগে তাঁর মৃত্যু ঘটে– ফলে নির্মাণ কাজ শেষ করান মলিকা জহান বেগম। তিনটি গম্বুজ ও দুটি মিনার সমন্বিত বিশাল এই মসজিদটিতে মুসলমান ছাড়া প্রবেশ নিষিদ্ধ।
আমাদের পরবর্তী দ্রষ্টব্য উঁচু ক্লক টাওয়ার। দিকে নবাব নাসিরুদ্দিন হায়দার এটি তৈরি করান ইউনাইটেড প্রভিন্সের প্রথম গভর্নর জর্জ কুপারের লখনউ আসা উপলক্ষ্যকে কেন্দ্র করে। টাওয়ারের লাগোয়া হুসেনাবাদ জলাশয়। আট-কোনা এই জলাশয় বর্তমানে বেশ মলিন অবস্থায় রয়েছে। হুসেনাবাদ ট্রাস্টের অফিস এই জলাশয়ের ধারেই। তবে ক্লক টাওয়ারের বিশেষত্ব অনস্বীকার্য। এটিকে দেশের উচ্চতম ঘড়িঘর বলা হয়। জ্জ বছর ধরে এটির নির্মাণকার্য চলেছিল।
একদম কাছেই আর-এক দ্রষ্টব্য– পিকচার গ্যালারি বা চিত্রশালা। এর মূল ভবনটি ছিল নবাব আলি শাহের গ্রীষ্মাবাস। বর্তমানে এর দ্বিতলে অযোধ্যার নবাবদের চিত্রশালা। অয্যেধ্যার নবাবদের পূর্ণদৈর্ঘ্যের বিশাল প্রতিকৃতিগুলি আজও যেন তাদের শৌর্যবীর্যের কাহিনি শোনায়।