ঘুম অত্যন্ত জরুরি। অন্তত মস্তিষ্কের জন্য। কারণ, মস্তিষ্ক এমন এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা সক্রিয় রাখার জন্য ঘুমের প্রয়োজন। কিন্তু সিংহভাগ মানুষ, বিশেষকরে ছোটো ছেলেমেয়েদের ঘুমোনোর সমস্যা Sleep Disturbance আছে। অর্থাৎ, অনেকেরই পর্যাপ্ত ঘুম হয় না এবং সঠিক ভঙ্গিমায় ঘুমোনোর অভ্যাস নেই। আর সঠিকভাবে না ঘুমোলে মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটবে না এবং সর্বাঙ্গের নানা সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

বেশিরভাগ মা-বাবা তাদের সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে সঠিক সময়ে ঘুমোতে যাওয়ার চেষ্টা করেন কিন্তু বাচ্চারা সবসময় নিয়ম মেনে চলে না। অন্তত তিরিশ শতাংশ বাচ্চা অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকে। পাঁচ বছর বয়সের মধ্যে বাচ্চাদের বেশি রাত পর্যন্ত জেগে থাকার প্রবণতা দেখা যায়। আর এই প্রবণতা ধীরে ধীরে মস্তিষ্ক-বিকাশের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায় এবং শারীরিক নানা সমস্যা তৈরি করতে থাকে।

চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে অন্তত ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুমোনো উচিত ছোটো-বড়ো সবারই কিন্তু অনেকেই এই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন না। তবে এ বিষয়ে বড়োদের তুলনায় ছোটোদের ক্ষেত্রে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। স্কুলে যাওয়ার জন্য যেসব বাচ্চাদের খুব ভোরবেলা উঠতে হয়, তাদের রাতে দশটার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ার অভ্যাস তৈরি করানো উচিত। নয়তো স্কুলে গিয়ে বাচ্চা ঘুমিয়ে পড়তে পারে কিংবা লেখাপড়ায় অমনোযোগী হতে পারে। শুধু তাই নয়, একটানা অনেকদিন ঘুম কম হলে বাচ্চা ঘ্যানঘ্যানে স্বভাবের হয়ে উঠতে পারে। পাশাপাশি, বাচ্চার শারীরিক নানারকম সমস্যাও তৈরি হতে পারে।

খুব ছোটো বাচ্চারা রাতে ঘুমের ঘোরে বিছানা ভিজিয়ে দেয় এবং ওই ভেজা বিছানা না বদলালে বাচ্চার ঠিকমতো ঘুম হয় না। এক্ষেত্রে ভেজা বিছানায় শুয়ে থেকে বাচ্চার যেমন সর্দি-কাশি-জ্বর ইত্যাদি হতে পারে, ঠিক তেমনই বিছানা বদলানোর জন্য বচ্চার মায়েরও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। তাই বাচ্চা ও তার মায়ের সঠিক ঘুমের জন্য রাতে বাচ্চাকে ভালোমানের ন্যাপি পরিয়ে রাখা উচিত। অবশ্য ঘুম কম হওয়াই শুধু সমস্যা নয়, ঘুমোনোর ভঙ্গিমা সঠিক না হলেও স্বাস্থ্যহানি হতে পারে। যেমন বুকের বাঁদিকে হার্টের উপর দু-হাত রেখে ঘুমোলে হূদস্পন্দনে ব্যাঘাত ঘটে এবং ঘুম ভেঙে যায়। পায়ের উপর পা তুলে ঘুমোলে কিংবা বাঁদিকে কাত হয়ে ঘুমোলেও স্বাভাবিক রক্ত-সঞ্চালন এবং হূদস্পন্দন বাধাপ্রাপ্ত হয়ে শারীরিক কষ্টে ঘুম ভেঙে যায়। তাই বলা যায়, হাত-পা সামনের দিকে ছড়িয়ে সোজাভাবে ঘুমোনোই সঠিক ভঙ্গিমা। বিষয়টিতে স্বচ্ছ ধারণার জন্য বিস্তারিত আলোচনার প্রয়োজন।

Sleep Disturbance ও সমাধান

সাধারণত বাচ্চাদের ঘুমের সমস্যা হয় দু-ধরনের। অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকা এবং বিছানায় সঠিক ভঙ্গিমায় না ঘুমোনো। পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত বাচ্চাদের মধ্যে প্রায় চল্লিশ শতাংশ বাচ্চাদের এই প্রবণতা থাকে। আসলে বাচ্চারা মা-বাবার সান্নিধ্যে শুতে এবং ঘুমোতে চায়। কারণ জন্মলাভের পর থেকে এভাবেই তারা ঘুমোতে অভ্যস্থ থাকে। তাই বাবা-মা না শোয়া পর্যন্ত বাচ্চারাও শুতে কিংবা ঘুমোতে চায় না। অতএব বাচ্চাদের ঘুমোনোর সু-অভ্যাস তৈরি করার জন্য বাবা-মা-কেই দায়িত্ব নিতে হবে। সেইসঙ্গে, বাচ্চারা বিছানায় যাতে সোজা ও সুন্দরভাবে (ভঙ্গিমায়) ঘুমোয়, বাচ্চাদের সেই অভ্যাসও তৈরি করাতে হবে বাবা-মা-কেই।

প্রসঙ্গত আরও যে-বিষয়টি উল্লেখযোগ্য, তা হল নিউ-বর্ন বেবিরা দিনরাতের তফাত বোঝে না। ওদের খিদে পাওয়া এবং ঘুমোতে চাওয়ার বিষয়টি কান্নার মাধ্যমে বুঝিয়ে দেয় ওরা। তাই বাবা-মা-কে এই বিষয়টি অনুমান করে ব্যবস্থা নিতে হবে। একইসঙ্গে, বাচ্চা যাতে দিনেরবেলা কম ঘুমিয়ে রাতে নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমোয়, সেই অভ্যাস তৈরি করাতে হবে। প্রসঙ্গত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাথায় রাখতে হবে বাচ্চার মাকে। রাতে নির্দিষ্ট সময়ে দোলনায় হালকা দোল খাইয়ে, দুধ পান করিয়ে কিংবা রূপকথার কোনও ছেটো গল্প শুনিয়ে বাচ্চাকে ঘুম পাড়ানোর অভ্যাস তৈরি করা উচিত। তবে বাচ্চাকে খাওয়ানোর পর কোনওভাবে টিভির সামনে নিয়ে যাবেন না। টিভির দৃশ্য এবং শব্দ দুটোই বাচ্চার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। তাই বাচ্চাকে ঘুম পাড়ানোর সময় যথাসম্ভব নিরবতার পরিবেশ বজায় রাখার চেষ্টা করুন।

বাচ্চারা বিছানায় শোয়ার পর ওদের হাতে ফুল-ফল, পশু-পাখির ছবি আঁকা বইও ধরিয়ে দিতে পারেন। এতে সুফল পাওয়া যায়। কারণ বাচ্চারা ওইসব রঙিন ছবি দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়ে। রাতে বাচ্চার সঙ্গে একই সময়ে শুতে না পারলেও, ওকে ঘুমোতে সাহায্য করার জন্য পাঁচ-দশ মিনিট সময় বের করুন। অবশ্য এরপরও যদি বাচ্চার ঘুমের সমস্যা হয়, তাহলে চাইল্ড স্পেশালিস্ট এর পরামর্শ নিন।

 

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...