ধর্ম এবং সংস্কৃতির নামে আজও শোষণ চলে মেয়েদের উপর। অথচ, গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠার পর এসব বন্ধ হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু বিয়ের পর নারীর উপর আজও প্রাচীন সংস্কৃতি এবং পুরোনো ধ্যানধারণা মাফিক শোষণ ও অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছেন ধর্মের ধ্বজাধারীরা। তাই এখনও অনেক মেয়ে আজও পাশবিক লোভ লালসার শিকার হয়ে চলেছেন।
আফগানিস্তানে তালিবানি শাসন শুরু হওয়ার পর শোষণের বিষয়টি স্পষ্ট ধরা দিয়েছে। কিন্তু ভারতেও এখন নানারকম অজুহাতে তীর্থযাত্রী থেকে শুরু করে ধার্মিক মহিলা, সবারই ব্যক্তিস্বাধীনতা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। আর এসব বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব অনুষ্ঠানকে মাধ্যম করেই চলছে অহরহ। Women rights কিংবা women empowerment বিষয়ে কি আদৌ সচেতন এই সব নারীরা?
এখন আমেরিকাও প্রায় একই পথে হাঁটছে। চার্চ-এও এখন সুবিচার দেওয়ার নামে গর্ভপাতকে নিয়ন্ত্রণ করে, মেয়েদের যৌনসুখ উপভোগের ব্যক্তি স্বাধীনতা খর্ব করা হচ্ছে। কালচারাল রিভাইবলিজম-এর নামে ভারতেও এখন দেশি পোশাক, উৎসবের বৈশিষ্ট্য, জাতিভেদ বিবাহ, এমনকী জন্মকুণ্ডলী, বাস্তুশাস্ত্র প্রভৃতির জমাটি গল্প বিক্রি হচ্ছে।
আপাত দৃষ্টিতে নজরে আসে না এইসব অধঃপতন। আসলে এইসব ধর্মস্থানগুলি পরিচালনার দায়িত্বে আছেন বেশিরভাগই ধান্দাবাজ পুরুষরা। শুধু তাই নয়, ধর্মস্থানগুলির পূজারি থেকে শুরু করে দ্বাররক্ষক, সবাই যে-যার মতো নিয়ম এবং শাসন কায়েম করেন। সরকার এবং সমাজ পরিচালনার মধ্যে ভারসাম্য বজায় থাকলে তবেই না সঠিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে। এই দেশে ইন্দিরা গান্ধি, জয়ললিতা এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-এর মতো কয়েকজন মহিলা ছাড়া, বাদবাকি রাজ্য তো পুরুষ সদস্যদের দ্বারা শাসিত হয়ে আসছে। আর সেই জন্যই ভণ্ড পুরুষ ধার্মিকরা এত সুযোগসুবিধা নিতে পেরেছেন পুরুষদের দ্বারা পরিচালিত শাসনকালে।
নরেন্দ্র মোদী সরকারের আমলে মহিলা-নেতৃত্বের সংখ্যা খুবই কম, প্রায় নেই বললেই চলে। ২০১৪ সালে সুষমা স্বরাজ প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হতে চেয়েছিলেন কিন্তু তাঁকে সেই সুযোগ দেওয়া হয়নি। কিন্তু প্রকৃত গণতন্ত্র বা স্বাধীনতার অর্থ হল অফিস, শিক্ষাক্ষেত্র, রাজনীতির ক্ষেত্র কিংবা বাড়িতে সর্বত্রই সবার স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা থাকা। গণতন্ত্রের অন্যতম অর্থ আর্থিক স্বাধীনতা রক্ষা কিন্তু তা আর কে মনে রেখেছে। যেসব মহিলারা উচ্চ পদে রয়েছেন, তাদের গুণগান করা হয় ঠিকই কিন্তু পাশাপাশি এও বলা হয় যে ওই পদ তিনি পেয়েছেন বাবা, কাকা কিংবা মামার কল্যাণে। আর যেসব উচ্চ পদাধিকারী মহিলাদের বিরুদ্ধে আর্থিক অপরাধের মামলা চলছে, অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে যে, এইসব অপরাধের সূত্রপাত হয়েছিল তাদের স্বামীর দ্বারা।
সে যাই হোক, গণতন্ত্রের সম্মান খর্ব করার পিছনে ধর্মস্থানগুলোর বড়ো ভূমিকা আছে। কারণ, পুঁজিবাদিরা মহিলাদের বড়ো ক্রেতা মনে করেন। তাই তারা মহিলাদের সম্মান প্রদর্শন করার বাহ্যিক আড়ম্বর প্রকাশ করেন। কিন্তু বোকা ধার্মিক মহিলারা তাতেই সন্তুষ্ট হয়ে হইহই করেন। এভাবে চলতে থাকলে গণতন্ত্র কতটা বজায় থাকবে কিংবা মেয়েরা কতটা স্বাধীনতা ভোগ করতে পারবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গেল। এখন শুধু আশঙ্কার মেঘই দেখা যাচ্ছে।