অস্থি প্রতিস্থাপন অস্ত্রোপচার-এ (জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট সার্জারি) ব্যবহৃত ‘CUVIS’ নামের উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন রোবট এক মিলিমিটারেরও ক্ষুদ্র অংশে নির্ভুলভাবে কাজ করে। এই ধরণের রোবটের দ্বারা হাঁটু প্রতিস্থাপন পূর্ব ভারতে প্রথম নিয়ে এল কলকাতার বেল ভিউ ক্লিনিক। এই অস্ত্রোপচারে ন্যূনতম কাঁটাছেঁড়ার প্রয়োজন হয় এবং হাড়ের অস্ত্রোপচারও হয় মসৃণভাবে। এই চিকিৎসা পদ্ধতি টিস্যুর ওপরে চোট রোধ করে, রক্তক্ষরণ কমায় এবং অস্ত্রোপচার পরবর্তী ব্যথা উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেয়। সবচেয়ে বড় কথা, এক্ষেত্রে ন্যুনতম হস্তক্ষেপের কারণে এই অস্ত্রোপচার থেকে সংক্রমণের সম্ভাবনা প্রায় নেই।
বিশ্বের প্রথম এই ধরণের ব্যবস্থা- কিউভিস রোবোটিক জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচারের সমস্ত ধাপ নিয়ন্ত্রিত হয় স্বয়ংক্রিয়ভাবে। এই অস্ত্রোপচারের সময় রোবটটি নিয়ন্ত্রিত হবে সার্জেনের হাতে থাকা রিমোটের মাধ্যমে। এই ব্যবস্থাতে সংযুক্ত একটি স্বয়ংক্রিয় রোবোটিক বাহু রয়েছে যা প্রাক পরিকল্পনা, সিমুলেশন, অস্ত্রোপচারের আকার এবং অবস্থা, অস্ত্রোপচার পূর্বের প্রস্তুতি ইত্যাদি বিশ্লেষণ করে এবং একেবারে ত্রুটিশূন্য ভাবে সমস্ত পরিকল্পনা অনুযায়ী এই কিউভিস রোবট একটি অস্ত্রোপচার নির্ভুলভাবে সম্পন্ন করে।
প্যাসিভ রোবোটিক সার্জারি-র চেয়ে কেন এই কিউভিস অ্যাক্টিভ রোবোটিক পদ্ধতি সেরা, তার ব্যাখ্যা করেন ডা. সন্তোষ কুমার। তিনি জানিয়েছেন, ‘এই কিউভিস সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় এবং সক্রিয় রোবট। এটি অস্ত্রোপচারের প্রাক্-পরিকল্পনা, প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পরিস্থিতির পর্যালোচনা, ইমপ্ল্যান্টের পূর্বের আকার এবং অবস্থান নির্ধারণের মাধ্যমে সম্পূর্ণ প্রস্তুতির অনুমতি দেয়। এতে সার্জেন প্রকৃত অস্ত্রোপচারের পূর্বেই রোগীর হাঁটুর ভারসাম্য অনুধাবন করতে পারেন। সেইসঙ্গে, এই পদ্ধতি রোগীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে অনেকটাই। এটি হাড়ের ‘রিয়েল টাইম’ নিরীক্ষণের অনুমতি দেয় এবং এই রিয়েল টাইমের ফিডব্যাক জেনারেট করে। এই নিরাপত্তা ব্যবস্থাগুলি প্যাসিভ রোবট দ্বারা নিয়ন্ত্রিত অস্ত্রোপচার বা অন্যান্য হাঁটু প্রতিস্থাপনের সার্জারিতে পাওয়া যায় না। কিউভিস জয়েন্ট রোবোটিক সিস্টেমের রিয়েল টাইম মনিটরিং এবং ফিডব্যাক মেকানিজ়ম দ্বারা যে কোনও ধরণের মানবিক ত্রুটি শূন্য করে সামগ্রিক পদ্ধতিটির সফলতা নিশ্চিত করে। এটি এক মিলিমিটারের (১-১০তম পর্যন্ত) অর্থাৎ সাব-মিলিমিটারের ন্যানো পরিমাপ একেবারে নির্ভুলভাবে নিশ্চিত করে। মনে রাখতে হবে, মানুষের চোখ কিন্তু ১ মিলিমিটারের চেয়ে কাছাকাছি দু’টি বিন্দুকে পৃথক করতে পারে না।’
ডা. সন্তোষ কুমার প্রসঙ্গত আরও জানান, ‘এই ধরণের সক্রিয় রোবোটিক হাঁটু প্রতিস্থাপনে অত্যন্ত নিখুঁত এবং নির্ভুলভাবে প্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচার করা হয়। এতে হাঁটার স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার হয়। বাতসহ নানা কারণে হাঁটু বাঁকা হয়ে যায়। এই অবস্থায় রোগীর মধ্যে কষ্ট, অস্থিরতা এবং বিপন্নতা তৈরি হয়। সক্রিয় রোবোটিক হাঁটু প্রতিস্থাপনে ইমপ্ল্যান্টগুলি এমনভাবে সুসংহতভাবে সংযোজিত করা হয় যাতে ভারবহনকারী অক্ষটি পুনরুদ্ধার করা হয়। ফলে নিতম্ব, হাঁটু এবং গোড়ালি সব এক অক্ষরেখায় এসে যায়। এই কৃতিত্ব কিন্তু অন্য কোনভাবে অর্জন করা যাবে না।’
এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, কিউভিস জয়েন্ট রোবোটিক সিস্টেম অস্ত্রোপচারের পর খুব দ্রুত রোগীর আরাম এবং সাফল্য নিশ্চিত করে। ন্যুনতম অস্ত্রোপচার পদ্ধতি, হাড়ে মসৃণ অস্ত্রোপচার, ইমপ্ল্যান্টের সুবিধাযুক্ত সংযোজন, কম রক্তক্ষরণ এবং প্রায় বেদনাহীন এই পদ্ধতি দ্রুত হাসাপাতাল থেকে মুক্তি এবং রোগীর দ্রুত আরোগ্য লাভের সহায়ক হয়ে ওঠে।
বেল ভিউ ক্লিনিকের সিইও প্রদীপ ট্যান্ডন জানিয়েছেন, ‘ইন্সটিটিউট অফ রোবোটিক জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট সার্জারিজ-এর ডিরেক্টর ডা. সন্তোষ কুমারের যোগ্য নেতৃত্বে, নিতম্ব এবং হাঁটুর আর্থ্রাইটিস রোগীদের জন্য এই স্বয়ংক্রিয় রোবোটিক জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট সার্জারি আশীর্বাদ হয়ে উঠবে। এই ব্যবস্থাটি প্রচলিত ব্যবস্থার তুলনায় অত্যাধুনিক এবং নতুন প্রজন্মের। ফলে সার্জেনদের চিকিৎসা পরিকল্পনা এবং নিখুঁত অনুমিত ও সামঞ্জস্যপূর্ণ ফলাফলের জন্য এই কিউভিস রোবোটিক সিস্টেম প্রযুক্তি সুনির্দিষ্ট অস্ত্রোপচারে সহায়ক হয়ে ওঠে।’ তিনি আরও জানান, ‘আমাদের রোবোটিক জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট টিম ডা. সন্তোষ কুমারের নেতৃত্বে, অর্থোপেডিক সার্জেন ডা. দেবাশিস সারঙ্গী, ডা. বিবেক ডেভিড, ডা. দীপ চক্রবর্তী এবং ডা. বিবেকানন্দ কুমারের সমন্বয়ে দুর্দান্ত কাজ করে চলেছে এবং ধারাবাহিক ফল প্রদান করে চলেছে। এখন এটি আরও ভালো এবং সুনির্দিষ্ট হবে।’