রণথম্ভোর

রাজস্থানের আরাবল্লি নামটা শুনলেই যেমন ডাকাত শব্দটা মনে পড়ে, ঠিক তেমনই অবশ্যম্ভাবী ভাবে রাজস্থানের সঙ্গে জুড়ে আছে বাঘের নাম। জঙ্গল, বন্যপ্রাণ ও পক্ষীকুলের সম্ভার নিয়ে আরেকটা সবুজ অংশও রয়েছে এই বৈচিত্র্যময় রাজ্যে। ‘রেগিস্তান’-এর ছবির আড়ালে পূর্ব রাজস্থানে রয়েছে তিনটি অনন্য অভয়ারণ্য – সরিস্কা, রনথম্ভোর ও ভরতপুর। এক এক জন Rajasthan- কে দেখে এক এক রকম ভাবে। এতই বৈচিত্র্যে ভরা রাজস্থান।

Ranthambore National Park যেতে হলে সওয়াই মাধোপুর স্টেশনে নামতে হবে। এখান থেকে উদ্যানের দূরত্ব মাত্রই ১৪ কিমি, রণথম্ভোরের জঙ্গল বস্তুত আরাবল্লি আর বিন্ধ্যাচল পর্বতের মধ্যবর্তী অংশে বিস্তৃত। উদ্যানে একটি কেল্লা আছে যার নাম রণথম্ভোর কেল্লা। এর অদূরেই যোগীমহল।

বস্তুত ‘হাতি ভাটা’ থেকে আরও ৬৫ কিলোমিটার উজিয়ে পৌঁছোতে হয় রনথম্ভোরে। বাঘ দেখার জন্য বিখ্যাত রনথম্ভোরের জঙ্গল। দক্ষিণ-পূর্ব রাজস্থানে সওয়াই মাধোপুর জেলায় বিন্ধ্য ও আরাবল্লি পাহাড়ে ঘেরা ৩৯২ বর্গ কিমি এলাকা জুড়ে রনথম্ভোর জাতীয় উদ্যান। উত্তর ভারতের বৃহত্তম জাতীয় উদ্যানগুলির মধ্যে একটি এই রনথম্ভোর। জয়পুর থেকে ১৯০ কিমি ও কোটা থেকে ১১০ কিমি দূরত্বে সওয়াই মাধোপুর শহর। সওয়াই মাধোপুর স্টেশন থেকে ১৪ কিমি দূরে জাতীয় উদ্যানের প্রবেশদ্বার।

ইতিহাস আর প্রকৃতির ধারক রণথম্ভোর কেল্লা সম্রাট আকবর ১৫৬৯ সালে জয় করেছিলেন। কালক্রমে এই কেল্লা কচ্ছবাহ বংশের হাতে হস্তান্তরিত করা হয়। অতীতে জয়পুরের মহারাজাদের প্রিয় শিকারভূমি ছিল এই রনথম্ভোর। ১৯৮০ সালে জাতীয় উদ্যানের স্বীকৃতি পায়। পাহাড়ে ঘেরা উঁচু-নিচু ঢেউ খেলানো রুক্ষ জমিতে শুষ্ক পর্ণমোচী অরণ্য। বর্তমানে রণথম্ভোরের ১৫৫ বর্গ কিমি অভয়ারণ্য হিসাবে স্বীকৃত। এখানে ৪০-টি বাঘ ছিল। কিন্তু গোপনে বাঘ নিধন চলতে থাকায় বাঘের সংখ্যা ভয়াবহ রকম ভাবে কমতে শুরু করেছিল।১৯৮৪ -তে আরও ১০৪ বর্গ কিমি অঞ্চল বাঘেদের বিচরণ ক্ষেত্র হিসাবে রণথম্ভোরের সঙ্গে যুক্ত করা হল ও জয়পুরের মহারাজার নামানুসারে এটি সওয়াই মানসিং স্যাংচুয়ারি হিসাবে পরিচিত হয়। বনের রাজা বাঘ এ জঙ্গলের মূখ্য আকর্ষণ। বর্তমানে এই অরণ্যে বাঘের সংখ্যা ৮১৷ Jungle safari in Ranthambore National Park, এর অন্যতম আকর্ষণ৷

Jungle safari in Ranthambore

 

বন দফতরের ক্যান্টারে চড়ে জঙ্গল সাফারি। জঙ্গলে দেখা মেলে সম্বর, নীলগাই, চিতল হরিণ, লেঙুর, বুনো শুয়োর ও অজস্র ময়ূর। এ ছাড়াও এ জঙ্গলে আছে লেপার্ড, শ্লথ ভল্লুক, হায়েনা আর বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও সরীসৃপ।

জঙ্গলের ভিতরে রয়েছে তিনটি বিশাল লেক, যার মধ্যে পদম তালাও সব চেয়ে উল্লেখযোগ্য। তালাওয়ের কিনারে লাল বেলেপাথরে তৈরি যোগী মহল। অতীতের রাজমহল ও হান্টিং লজটি আজ একটি হেরিটেজ হোটেল। লেকের কাছেই আছে এক সুপ্রাচীন বট বৃক্ষ। শোনা যায় এটি দেশের দ্বিতীয় প্রাচীনতম বট গাছ। এ ছাড়া জঙ্গলের মাঝে এক টিলার উপর ৭০০ মিটার উচ্চতায় আছে ১০ম শতকের এক বিশাল কেল্লা – রনথম্ভোর ফোর্ট।

বর্তমানে মানুষের কাছ থেকে কোনও ক্ষতির আশঙ্কা নেই অনুভব করার ফলে এই জঙ্গলের বাঘ নির্ভয়ে জঙ্গলে বিচরণ করে এবং পর্যটক দেখেও তারা বিন্দুমাত্র দ্বিধান্বিত হয় না। বাঘিনী তার শাবকদের সঙ্গে বিশ্রাম করছে, বা কোনও বন্য পশু শিকারে ব্যস্ত বাঘিনী, এমন দৃশ্য রণথম্ভোরে বিরল নয়। এই জঙ্গলে লেপার্ডেরও দেখা মেলে তবে এদের মূলত জঙ্গলের আশেপাশেই বেশি দেখা যায়। গভীর জঙ্গলে যেখানে বাঘের ডেরা, সেখানে লেপার্ড বড়ো একটা হানা দেয় না।

জলাভূমিতে কুমিরের আধিক্য যেমন চোখে পড়ে, তেমনি জঙ্গলে বাঘ ছাড়াও রয়েছে নেকড়ে, শিয়াল, সম্বর, চিংকারা, চিতল, খরগোশ, নেউল, লঙ্গুর প্রভৃতি জন্তু। পাখির মধ্যে রয়েছে, বোনেলি ঈগল, ক্রেস্টেড সারপেন্ট ঈগল, প্যাঁচা, তিতির, স্পার ফাউল, ময়ূর, পেন্টেড স্টর্ক, কালো স্টর্ক প্রভৃতি। এই জঙ্গল ভ্রমণ করতে হলে যোগাযোগ করুন রাজস্থান পর্যটনের সঙ্গে।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...