আজকাল মেয়েরা দিনের বেশিরভাগ সময়টাই কর্মব্যস্ত থাকার কারণে, খাবার খাওয়ার সময় পান না। সঠিক সময়ে অফিসে পৌঁছোনোর চাপ থাকার জন্য ব্রেকফাস্ট করারও সুযোগ পান না অনেকে। আর দিনের পর দিন এই সঠিক সময়ে খাবার না খাওয়ার কুফল পেতে হয় অনেককেই। ধীরে ধীরে শরীরে এর ক্ষতিকারক প্রভাব পড়ে। বিশেষকরে দীর্ঘক্ষণ খালি পেটে থাকার পর যারা জাংক ফুড খেতে অভ্যস্ত, শারীরিকভাবে বেশি ক্ষতির শিকার হন তারাই। এখন প্রশ্ন, ব্রেকফাস্ট করলে কী লাভ হবে এবং না করলে কী ক্ষতি হবে? এ প্রসঙ্গে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন ডায়েটিশিয়ান ডা. শিখা শর্মা।

ব্রেকফাস্ট করা কি জরুরি?

দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাবার ব্রেকফাস্ট। যদি ব্রেকফাস্ট মিস করেন, তাহলে পর্যাপ্ত এনার্জি লস করবেন। রাতে খাওয়ার পর দীর্ঘ সময় যেহেতু স্টমাক খালি থাকে, তাই সকালে উপযুক্ত খাবার খাওয়া জরুরি। কারণ, সবসময়ই অ্যাসিডজাতীয় একপ্রকার পাচন রস উৎপন্ন হতে থাকে আমাদের স্টমাকে। যদি দীর্ঘ সময় আমাদের স্টমাক খালি থাকে, তাহলে স্টমাকে উৎপন্ন ওই রস স্টমাকের ক্ষতি করে। তাছাড়া, আমাদের স্নায়ুতন্ত্র এবং মস্তিষ্কের জন্য প্রচুর এনার্জির প্রয়োজন হয়, যার বেশিরভাগটাই জোগায় সকালের খাবার। সারাদিন শরীর সতেজ রাখার জন্যও উপযুক্ত ব্রেকফাস্ট করা জরুরি।

সকালে কিছু না খেলে মেটাবলিজম-এর উপর কতটা প্রভাব ফেলে?

খাবার স্টমাকে গিয়ে তা হজম হওয়ার পর এনার্জিতে রূপান্তরিত হওয়ার প্রক্রিয়াই হল মেটবলিজম প্রক্রিয়া। তাই, যদি ব্রেকফাস্ট না করা হয় তাহলে ধীরে ধীরে মেটাবলিজম প্রক্রিয়া ব্যহত হবে অর্থাৎ হজমশক্তি কমবে। আর যদি হজমশক্তি কমে যায়, তাহলে খাবার এনার্জিতে রূপান্তরিত হবে না এবং শরীরে ফ্যাট জমতে শুরু করবে।

অনেকে আছেন যারা স্লিম হওয়ার জন্য খাওয়া কমিয়ে দেন কিংবা মাঝেমধ্যে উপোস থাকেন। কিন্তু এটা বিজ্ঞানসম্মত নয়। অর্থাৎ, রোগা হওয়ার জন্য যদি না খেয়ে স্টমাক খালি রাখেন, তাহলে বিপরীত ফল পাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। কারণ, দিনের অনেকটা সময় উপোস থাকলে রোগা হওয়ার পরিবর্তে লিভারের অসুখ হতে পারে। অতএব ব্রেকফাস্ট করা জরুরি।

মেটাবলিজম প্রক্রিয়া ব্যহত হলে ওজন বেড়ে যায় কেন?

যদি কেউ ব্রেকফাস্ট না করে, তাহলে লাঞ্চ টাইম-এ যে খুব খিদে পাবে, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর অত্যাধিক খিদে পেলে যদি বেশি ক্যালরিযুক্ত খাবার খেয়ে নেন, তাহলে ওজন বাড়বেই।

ব্রেকফাস্ট-এও অনেকে জাংক ফুড খান। বেশি জাংক ফুড খেলে কী ধরনের শারীরিক সমস্যা হতে পারে?

ব্রেকফাস্ট-এও কেক, পেস্ট্রি, পিজা, চিপস প্রভৃতি জাংক ফুড খাওয়ার অভ্যাস আছে, অনেকের। কিন্তু বেশি জাংক ফুড খেলে যেমন ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তেমনই লিভারের উপর চাপ পড়েও নানারকম রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এনার্জি গেন করার জন্য ব্রেকফাস্ট-এ কী কী খাবার রাখা উচিত?

শরীরকে পুষ্টি জোগাতে হবে এনার্জি গেন করার জন্য। আর এই এনার্জি গেন করার জন্য গ্লুকোজ এবং কার্বোহাইড্রেট-জাতীয় খাবার রাখতে হবে ব্রেকফাস্ট-এর তালিকায়। আটার রুটি, ব্রেড টোস্ট, ডিম, দুধ, ফল, আখরোট প্রভৃতি খাবার রাখা উচিত ব্রেকফাস্ট-এ। এই তালিকায় অঙ্কুরিত ছোলা, মটর, মুগ প্রভৃতিও চলতে পারে।

হেল্দি ব্রেকফাস্ট বলতে কী বোঝায়?

ভিটামিন, মিনারেল, প্রোটিন, ফাইবার এবং লো ফ্যাটযুক্ত খাবারকেই হেল্দি ব্রেকফাস্ট বলা যায়। তবে সবচেয়ে বেশি খাওয়া উচিত প্রোটিনযুক্ত খাবার। সেইসঙ্গে, হজম এবং শরীর থেকে বর্জ্য বের করতে সহায়ক অর্থাৎ ফাইবারযুক্ত কিছুটা খাবার তালিকায় রাখা উচিত। জেনে রাখুন, এই ফাইবারযুক্ত খাবার কোলেস্টেরল কমাতেও সাহায্য করে। এ ছাড়া, ব্রেকফাস্ট-এ মূল খাবারের সঙ্গে ফল অবশ্যই রাখবেন। কারণ, ফল ন্যাচারাল সুগার দেয় এবং প্রোসেস্ড সুগার কমাতে সাহায্য করে।

সময়ের অভাবে অনেকে ব্রেকফাস্ট করতে পারেন না। তাহলে তাদের সমস্যার সমাধান হবে কীভাবে?

সমস্যার সমাধান করতে হবে নিজেকে। সারাদিনের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজের মতো ব্রেকফাস্ট করার বিষয়টিকেও গুরুত্ব দিতে হবে। ব্রেকফাস্ট-এর জন্য কিছুটা সময় বের করতেই হবে। তবে যেসব খাবার খুব কম সময়ের মধ্যে বানানো যায় এবং যা শরীরে পুষ্টি জোগাতে সাহায্য করবে, তেমন খাবারই বানিয়ে খাওয়া উচিত। আর কম সময়ের মধ্যে তৈরি করা যেতে পারে এমন খাবারের মধ্যে আছে ফ্রুট চাট, ছাস, ব্রাউন রাইস, হুইট ফ্লেক্স প্রভৃতি।

ব্রেকফাস্ট করার প্রকৃত সময় কী?

সঠিক এনার্জি গেন করতে হলে, সকালে ঘুম থেকে ওঠার এক ঘণ্টা পর ব্রেকফাস্ট করা উচিত।

ব্রেকফাস্ট-এর বিষয়ে আপনার আর কোনও পরামর্শ?

ঘুম থেকে উঠে হাত-মুখ ধোয়ার পর প্রথমে কিছুটা জল পান করে নেবেন। যাদের চা পানের অভ্যেস আছে, তারা জল খাওয়ার ১৫ মিনিট বাদে চা পান করবেন এবং চা পানের ২০  মিনিট পর ব্রেকফাস্ট করবেন। তবে ব্রেকফাস্ট-এ খাবারের পরিমাণ যেন খুব বেশি না হয় এবং প্রতিদিন অবশ্যই ব্রেকফাস্ট করবেন।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...