কিছু বছর আগে একটি নামি পেইন্ট কোম্পানি ‘রয়েল প্লে’ নামে একটি নতুন প্রোডাক্ট বাজারে নিয়ে আসে। এদের উদ্দেশ্য ছিল, বসতবাড়ির প্রত্যেকটি ঘরের অন্তত একটি দেয়ালকে সম্পূর্ণ আলাদা বৈশিষ্ট্যে সবার কাছে আকর্ষণীয় করে তোলা। ‘রয়েল প্লে’ এক বিশেষ ধরনের ওয়ালপেন্ট, যা ব্যবহার করতে দরকার হয় কিছু বিশেষ ধরনের সরঞ্জাম যেমন, স্পঞ্জ, র্যাগিং রোলারস, কোম্বস, বিশেষ ধরনের ব্রাশ, স্প্যাটুলা ইত্যাদি, যেগুলি এখন খুবই পরিচিত নাম। বেশিরভাগ গৃহকর্তা-গৃহকর্ত্রী-ই পছন্দ করেন, যে দেয়ালের গায়ে ডবল-বেড রয়েছে সেই দেয়ালটি শুধুমাত্র এই স্পেশাল পেইন্ট দিয়ে রং করাতে।
এই পেন্টগুলি মার্কেটে এখন খুবই জনপ্রিয়। একটি দেয়াল ডার্ক কালার করিয়ে অন্য তিনটি দেয়ালে হালকা কালার করানোই এখন লেটেস্ট ফ্যাশন। কিন্তু পেইন্টের রং হওয়া উচিত একটাই, যার শেড বিভিন্ন হতে পারে। এই রংগুলি লাগাবার পদ্ধতি, দেয়াল-কে থ্রি-ডাইমেনশনাল লুক এনে দেয়। বিশেষ কালার করা দেয়ালটি, পর্দা অথবা ক্যানভাস কিম্বা খোলা আকাশ অথবা একটা কুল ব্যাকড্রপের অনুভূতি এনে দেয়। এখন ধীরে ধীরে রঙের ব্যবহার কমে গিয়ে বাজারে জায়গা করে নিচ্ছে ওয়ালপেপার। ভারতের বহু শহরেই এখন ওয়ালপেপার একটি সমাদৃত সামগ্রী।
মনস্তত্ত্ব : যারা বাড়ি তৈরি করাচ্ছেন, তারা প্রায় সকলেই ইচ্ছা প্রকাশ করেন নিজের বাড়িটা হোক সকলের থেকে আলাদা। ভূসম্পত্তি বিনিয়োগের বাজারে মন্দা চললেও, জমি বেচা-কেনা অথবা নতুন বাড়ি তৈরি হওয়া বন্ধ হয়ে যায়নি। বাড়ি সাজাবার নতুন নতুন সামগ্রী রোজই বাজারের দরজায় কড়া নাড়ছে। আর্কিটেক্টরাও তাদের ক্লায়েন্টদের জন্য পুরোনো মাপ-জোপ ঝেড়ে ফেলে বোল্ড ডিজাইন এবং নতুন ধরনের সামগ্রী বেছে দিচ্ছেন। ফলস্বরূপ বাড়ির ভিতর এবং বাইরের সাজের পরিবর্তনশীল ট্রেন্ড নজরে রেখে, বাজারে আসছে চক্ষু জুড়ানো বিভিন্ন ডেকরেটিভ সামগ্রী। ওয়ালপেপার এরকমই একটি সংযোজন।
ওয়ালপেপার : ওয়ালপেপার আপনার ঘরের শোভা বাড়াতে যতটা সাহায্য করবে, কোনও পেইন্ট সেটা করতে পারবে না। ওয়ালপেপারের মধ্যে আপনি সব রকমের রং, শেড, ডিজাইন, প্যাটার্ন পাবেন যেটা সত্যিই অভাবনীয়। Wallpaper আপনার বাড়িকে দেবে সুরুচিপূর্ণ পরিবেশের ছোঁওয়া। এর সৌন্দর্য আপনি মুখে ব্যক্ত করতে পারবেন না শুধু মনে উপলব্ধি করতে পারবেন। ওয়ালপেপার দক্ষ কারিগর দিয়ে লাগিয়ে নিলে বুঝতেই পারা যায় না কী দিয়ে দেয়ালে কভার করা হয়েছে, কাপড়, কাঠ, ইট নাকি পাথর!
ষাটের দশকে বিশ্বের বহু জায়গায় ওয়ালপেপার একটি সুপরিচিত সামগ্রী হিসাবে খ্যাত ছিল। তারপর ধীরে ধীরে এটি স্মৃতির অতলে বিলুপ্ত হয়ে যায়। একবিংশ শতকে এসে দেখা যাচ্ছে ঘরের অন্দরসজ্জাকে নান্দনিক করে তুলতে ওয়ালপেপার নতুন ডিজাইনে, রঙে শোভিত হয়ে ভারতের ইন্টিরিয়ার ডেকরেশন-এর ক্ষেত্রটিতে তোলপাড় তুলছে।
রকমফের : টেকসই, ভালো কোয়ালিটির অধিকাংশ ওয়ালপেপারই বিদেশ থেকে রপ্তানি হয়। জার্মানি ওয়ালপেপারের প্রধান প্রস্তুতকারক। বিদেশি মার্কেট ওয়ালপেপারের সঙ্গে প্রোডাক্ট তালিকাও ক্লায়েন্টের কাছে পাঠিয়ে দেয় যাতে কেনার সময় খরিদ্দারের রং কিংবা স্টাইল বাছতে কোনওরকম অসুবিধা না হয়। ভেলভেট এবং সিল্ক ফিনিশেও ওয়ালপেপার বাজারে প্রচুর রয়েছে। ওয়ালপেপারের এই বিশাল রকমফেরে যদি খরিদ্দার মনস্থির করতে না পারেন, কোনটা কিনলে তিনি বেশি লাভবান থাকবেন, তাহলে কয়েকটা বিষয়ে অবশ্যই তাঁকে খেয়াল রাখতে হবে।
কোথায় লাগাবেন : চার দেয়ালের পরিবর্তে ঘরের একটা দেয়ালেই Wallpaper লাগানো ভালো। তেল-যুক্ত ডিসটেম্পার অথবা অ্যাক্রিলিক ইমালশন দিয়ে বাকি তিনটে দেয়াল রং করিয়ে নিন। ওয়ালপেপার ডার্ক কালারের পছন্দ করুন এবং তিনটে দেয়ালে হালকা রং করুন। কালার কম্বিনেশন হওয়া উচিত লাল এবং গোলাপি, সবুজ এবং প্যাস্টেল সবুজ, নীল এবং আকাশি নীল, এইভাবে।
ফাইনাল টাচ : আপনাকে ভেবে নিতে হবে, আপনি চকচকে কিংবা ম্যাট ফিনিশ কোনটা চান? তারপর ভাবুন কাপড়ের অনুভূতি, কাঠের মতন টেক্সচার অথবা মেটালিক ফিনিশ, কোনটা বেশি পছন্দের? এছাড়াও ফুলের ডিজাইন অথবা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে তুলে ধরা হয়েছে এমন ওয়ালপেপারও আপনার পছন্দের তালিকাভুক্ত হতে পারে। বাচ্চাদের ঘরের জন্য পছন্দ করুন ওদের পছন্দ অনুযায়ী ওয়াইল্ড সাফারি, ড্রাগন ক্যাসেল, লিটল প্রিন্সেস, স্পেস মিশন ইত্যাদি। ঘরের আসবাবপত্র এবং কার্পেটের রং মাথায় রেখে ওয়ালপেপার কেনা উচিত। পছন্দের ব্যাপারটা সম্পূর্ণ আপনার নিজের রুচির উপর নির্ভর করবে।
গুণাগুণ বিচার ও ব্যবহার : ওয়ালপেপার কেনার আগে সেটার কোয়ালিটি অর্থাৎ সেটি টেকসই কিনা, রং উঠে যাবে কিনা এবং পরিষ্কার করা চলবে কিনা, ভালো করে জেনে নিতে হবে। দরকার হলে কার্যত পরীক্ষা করে নিতে হবে। Wallpaper বেশিরভাগই ভিনায়েল কোটেড এবং খুব শক্ত হয় এবং সহজেই সবরকম পরীক্ষাতেও পাস করে যায়। স্ক্র্যাচ প্রুফ এবং প্রিন্টিং-এর কোনও ভুল আছে কিনা তাও ভালো করে দেখে নিয়ে ওয়ালপেপার কেনা উচিত।
ওয়ালপেপার লাগাবার আগে, দেয়াল তৈরি আছে কিনা দেখে নিতে হবে। কোনওরকম লিকেজ, সিপেজ অথবা ময়েশ্চারের ড্যাম্প ওয়ালপেপার-কে নষ্ট করে দিতে পারে। তাই দেয়াল ড্রাই এবং সমান্তরাল হওয়া খুবই জরুরি।
কীভাবে লাগাবেন : দক্ষ কারিগর দিয়েই ওয়ালপেপার লাগাবেন। যারা ওয়ালপেপার সাপ্লাই করে, তাদের সঙ্গেই পেপার লাগাবার কারিগরের-ও চুক্তি করে নেবেন। দক্ষ কারিগর একদিনে ঘরের চারটে দেয়ালের কাজ শেষ করতে পারে। আর যদি একটা দেয়ালের কাজ হয়, তাহলে পুরো বাড়ির কাজ করতে মোটামুটি ২-৩ দিন সময় লাগার কথা।
দাম : ওয়ালপেপারের দাম ১০ টাকা প্রতি স্কোয়ার ফিট থেকে শুরু করে ৯০০ টাকা প্রতি স্কোয়ার ফিট হতে পারে। রোল হিসেবে এটা বাজারে পাওয়া যায় এবং সাধারণত ৫৩ সেমি চওড়ায় সহজলভ্য। লম্বায় ওয়ালপেপারের রোল ১০ মিটারের বেশি হয়। লাগাতে গিয়ে পেপারের যা ওয়েসটেজ তার মূল্য পুরোটাই বহন করতে হয় পেপারের সাপ্লায়ারকে। গ্রেটেক্স, মারশান, ডিজনি এবং এসপ্রিট, Wallpaper-এর কিছু বিখ্যাত ব্র্যান্ড।