প্রেগন্যান্সি ম্যানেজমেন্টের ক্ষেত্রে নন-ইনভেসিভ জেনেটিক অ্যাসেসমেন্টের জন্য বিশেষ পরীক্ষানিরীক্ষার প্রয়োজন। শুধু তাই নয়, ক্রোমোজোমাল অ্যাবনর্মালিটিগুলির প্রাথমিক সনাক্তকরণেও রক্ষা পেতে পারে রোগীর জীবন। এছাড়া, ব্রেস্ট, ওভারি-র ক্যান্সার (এইচবিওসি) এবং ফুসফুস ও সাধারণ ক্যান্সারের ক্ষেত্রেও জীবনহানির ঝুঁকি এড়াতে আগাম পরীক্ষানিরীক্ষা করা দরকার।

বিশ্বব্যাপী ডাউন সিনড্রোমের আনুমানিক ১,০০০ ঘটনার মধ্যে একজনের  মৃত্যু হয়। এবিষয়ে ডাউন সিনড্রোম ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া’র বক্তব্য, শুধুমাত্র ভারতেই ৮৩০টি ঘটনার মধ্যে একজনের মৃত্যু ঘটে। তাই, আগাম সতর্কতা প্রয়োজন।

মায়েদের গর্ভাবস্থায় প্রথম এবং দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের স্ক্রিনিং করে প্রথম দিকে এই অবস্থা এবং অন্যান্য ক্রোমোজোমাল রোগ নির্ণয় করতে সাহায্য করে। তাহলেও, চলতি মাতৃত্বকালীন বায়োমার্কার স্ক্রিনিং পরীক্ষায় ৫% ফলস পজিটিভিটি রয়েছে। এটি প্রত্যাশিত দম্পতিদের মনে অবাঞ্ছিত উদ্বেগ এবং চাপ তৈরি করে। এই ব্যবধান পূরণ করতে, মেট্রোপলিস হেলথকেয়ার লিমিটেড প্রিগাসস্ক্রিন কনসেপ্ট চালু করেছে, যা একটি সঠিক এবং কম্প্রিহেন্সিভ মাতৃত্বের স্ক্রিনিং।

Dr. Kirti Chadha
Dr. Kirti Chadha

প্রিগাসস্ক্রিন হল ভারতের প্রথম হোলিস্টিক কম্প্রিহেন্সিভ মাতৃত্বের স্ক্রিনিং পদ্ধতি, যা ‘রিফ্লেক্স টেস্টিং’ কনসেপ্ট থেকে উদ্ভূত হয়েছে। এটি বেশ কয়েক বছর আগে মেট্রোপলিস দ্বারা প্রবর্তিত হয়েছিল। রিফ্লেক্স টেস্টিং-এর কনসেপ্ট চিকিৎসার জন্য কম্প্রিহেন্সিভ ও কনক্লুসিভ রোগ নির্ণয় প্রদান করতে সাহায্য করে, সময় বাঁচায় এবং রোগীদের অতিরিক্ত খরচের বোঝা কমায়। মেট্রোপলিস হেলথকেয়ার দ্বারা এক বছরেরও বেশি সময় ধরে পরিচালিত একটি পাইলট গবেষণায় ৫১,৫৭৪ জন গর্ভবতী মহিলার মধ্যে প্রায় ২.৭% গর্ভবতী মহিলার প্রিগাস্ক্রিন করা হয়। এই পরীক্ষার মধ্য দিয়ে স্ট্যান্ডার্ড ডুয়েল ও কোয়াড্রুপল মার্কার মাতৃত্বের স্ক্রিনিং-এ হাই রিস্ক হিসাবে সনাক্ত করা হয়েছিল। বিবেচনার ভিত্তিতে ক্যারিওটাইপ করে, এনআইপিটি বা কনফার্মড ক্রোমোজোমাল পজিটিভিটি টেস্টিং করার সুযোগ ছিল, যেটা ০.৫%-এর কম। এই রিফ্লেক্স কনক্লুসিভ টেস্টিং থেকে প্রকৃত হাই রিস্ক বা নিশ্চিত ক্রোমোসোমাল অ্যাবনর্মালিটি`র পজিটিভিটি পাওয়া গিয়েছে, যা মাত্র ০.৫%-এর কম। তাই জনসংখ্যার একটি বড়ো অংশ সর্বোত্তম ক্লিনিকাল ব্যবস্থাপনার জন্য কম খরচে একটি উচ্চ-পর্যায়ের পরীক্ষায় অ্যাকসেস পেয়েছিলেন।

মেট্রোপলিসের নেক্সটজেন এনআইপিটি- নন-ইনভেসিভ প্রিন্যাটাল স্ক্রিনিং টেস্ট হল প্রসবপূর্ব স্ক্রিনিং-এর জন্য একটি আরও উন্নত পদ্ধতি। এটি মাতৃ রক্ত থেকে সঞ্চালিত ডিএনএ এবং নেক্সট জেনারেশন সিকোয়েন্সিং (এনজিএস)-এর উন্নত জিনোমিক্স প্ল্যাটফর্মগুলিকে বায়োইনফরমেটিক্স অ্যালগরিদমের সঙ্গে মিলিত করে ক্রোমোজোমের বৈকল্যের মত রোগের ঝুঁকির পূর্বাভাস দিতে ব্যবহার করা হয়। যেমন ডাউন’স সিনড্রোম (টি২১), এডওয়ার্ড সিনড্রোম (টি১৮), পাটাউ সিনড্রোম (টি১৩), টার্নার’স সিনড্রোম (মনোসোমি এক্স) ইত্যাদি। প্রথাগত মাতৃত্বকালীন বায়োমার্কার স্ক্রিনিং টেস্ট-এর চেয়ে এটি আরও সঠিকভাবে পূর্বাভাস দিতে সাহায্য করে।

 

মলিকিউলার অনকোলজি – ব্রেস্ট ও ওভারিয়ান ক্যান্সার – মেট্রোপলিস দ্বারা নেক্সটজেন বিআরসিএ বংশগত ব্রেস্ট ও ওভারিয়ান ক্যান্সার (এইচবিওসি) কে সংজ্ঞায়িত করা হয়। একটি অটোজোমাল ডমিনেন্ট ইনহেরিটেড কন্ডিশন হিসেবে, যেখানে  ব্রেস্ট ক্যান্সার (বিশেষ করে ৫০ বছর বয়সের আগে) ও ওভারিয়ান ক্যান্সারের ঝুঁকি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। এইচবিওসি সিন্ড্রোমের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিআরসিএ ১ বা বিআরসিএ ২-এর নির্দিষ্ট পরিবর্তনের কারণে ঘটে। প্রায় ৭% ব্রেস্ট ক্যান্সার এবং ১৫% ওভারিয়ান ক্যান্সার বিআরসিএ জিনের মিউটেশনের কারণে হয়। ব্রেস্ট বা ওভারিয়ান ক্যান্সারে আক্রান্ত ভারতীয় রোগীদের মধ্যে প্যাথোজেনিক জার্মলাইন মিউটেশনের একটি প্রবল মাত্রার প্রবণতা রয়েছে যার প্রকাশিত সূচকগুলি ২০-২৫% এর মধ্যে রয়েছে। এটি পাওয়া গিয়েছে মেট্রোপলিস ও ন্যাশনাল অনকোলজি সেন্টার অফ এক্সিলেন্সের একটি সমীক্ষায়।

বিআরসিএ স্ট্যাটাস সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য শুধুমাত্র নজরদারি এবং স্স্ক্রিনিংয়ের জন্যই নয়, বরং ব্রেস্ট ও ওভারিয়ান ক্যান্সার, উভয়ের জন্যই এই বিআরসিএ রোগীদের লক্ষ্যযুক্ত থেরাপি যে উপলব্ধ রয়েছে সেটা নিশ্চিত করেছে। এছাড়াও, পুরুষদের মধ্যে প্রোস্টেট ক্যান্সারের জন্য যেখানে এটি ছড়িয়ে পড়েছে, বা মেটাস্ট্যাসাইজ হয়েছে এবং যাদের রোগটি স্ট্যান্ডার্ড হরমোন চিকিৎসায় সাড়া দেওয়া বন্ধ করেছে, প্রায়শই জেক ক্যাস্ট্রেশন-রেজিস্ট্যান্ট রোগ বলা হয়, সেখানেও বিআরসিএ স্ট্যাটাস প্রয়োজন।

ফুসফুসের ক্যান্সার বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর সবচেয়ে বেশি কারণ। ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর আনুমানিক ৪০% ফুসফুসের ক্যান্সার। ভারতে, ফুসফুসের ক্যান্সার সমস্ত নতুন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে ৬.৯ শতাংশ এবং উভয় লিঙ্গের মধ্যে সমস্ত ক্যান্সার সম্পর্কিত মৃত্যুর ৯.৩ শতাংশ। নন-স্মল সেল ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের সামগ্রিকভাবে বেঁচে থাকা ঐতিহাসিকভাবে দুর্বল। সমস্ত রোগীর জন্য ২৪% ৫ বছরের জন্য বেঁচে থাকে এবং দূরবর্তী মেটাস্টেসে আক্রান্তদের জন্য ৫.৫%। মেটাস্ট্যাটিক রোগের জন্য ৫-বছরের আপেক্ষিক বেঁচে থাকার হার প্রায় ৬%,যখন রোগীরা ঐতিহাসিক সাইটোটক্সিক কেমোথেরাপি পদ্ধতি গ্রহণ করে।

যাইহোক, সিলভার লাইনিং হল ৭৫% ফুসফুসের ক্যান্সার রোগীদের মধ্যে অনকোজেনিক ড্রাইভার মিউটেশনের উপস্থিতি, সবচেয়ে সাধারণ হল ২৫% এর মধ্যে ইএফজিআর (এপিডার্মাল গ্রোথ ফ্যাক্টর রিসেপ্টর) ওমার্কারের উপর নির্ভর করে অলৌকিকভাবে ১৫% থেকে ৫০%-এ উন্নীত করে। রোগীর বেঁচে থাকার ওপর মলিকিউলার সিগনেচার-এর এই চমৎকার প্রভাব এনজিএস দ্বারা যতটা সম্ভব রোগীকে অ্যাকশনেবল মিউটেশন শনাক্ত করা, কম্পেনিয়ন ডায়াগনস্টিকসের জন্য বায়োমার্কার পরীক্ষা করা অপরিহার্য করে তোলে, এমনটাই জানালেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

মেট্রোপলিস ইনোভেশন সেল প্রতিষ্ঠার বিষয়ে, মেট্রোপলিস হেলথকেয়ার লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মিসেস আমিরা শাহ জানিয়েছেন, ‘সংস্থার উদ্ভাবন এবং গবেষণা ও উন্নয়ন শাখা হিসাবে, মেট্রোপলিস ইনোভেশন সেল মৌলিক বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করবে, যাতে এটি পেশেন্ট ম্যানেজমেন্টের বিষয়ে অনুঘটক হিসেবে কাজ করতে পারে।’

মেট্রোপলিস হেলথকেয়ার লিমিটেড-এর চিফ সায়েন্টিফিক অফিসার ডা. কীর্তি চাড্ডা প্রসঙ্গত জানিয়েছেন, ‘মেট্রোপলিস সবসময় প্রযুক্তি, পরীক্ষা এবং প্ল্যাটফর্মের ক্লিনিকাল বৈধতার বিষয়ে সামনের সারিতে রয়েছে যা সরাসরি রোগীর সঠিক সময়োপযোগী রোগ নির্ণয়কে নিশ্চিত করে। এর মধ্যে রয়েছে ডিজিটাল প্যাথলজি (হোল স্লাইড ইমেজিং), এফডিএ অনুমোদিত ইমিউনোথেরাপি, টার্গেটেড থেরাপি বায়োমার্কার, লিকুইড বায়োপসি, মেডিকেল জেনেটিক্স, অ্যানালিটিক্যাল কেমিস্ট্রি, ফার্মাকোজেনমিক্স, কোভিড ডায়াগনস্টিক, প্রগনোস্টিক অ্যাসেস ইত্যাদি। লক্ষ লক্ষ রোগী`র ওপর প্রভাব ফেলার পরে, আমরা নেক্সট জেনারেশন সিকোয়েন্সিং এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই)-এর মাধ্যমে অনকোলজি, প্রিন্যাটাল টেস্টিং, ট্রান্সপ্লান্ট ইমিউনোলজি, ইনফেকশন এবং ক্রনিক রোগের চিকিৎসার সুযোগকে লালন ও সম্প্রসারণ করতে চাই।’

নতুন এই স্পেশালাইজড টেস্ট চালু করার বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে, মেট্রোপলিস হেলথকেয়ারের জোনাল ল্যাবরেটরির প্রধান (পূর্ব) ডা. রজত মুখার্জি জানিয়েছেন, ‘গত ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ডায়াগনস্টিক শিল্পে স্পেশালাইজড টেস্ট চালু করার বিষয়ে একটি শক্তিশালী ট্র্যাক রেকর্ড রয়েছে। আমাদের ফোকাস হল বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের সক্ষমতা তৈরি করা এবং সারা দেশে রোগীদের জন্য ‘সাশ্রয়ী মূল্যের’ পরীক্ষা করার সুযোগ এনে দেবার জন্য ক্রমাগত চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া।’

এই প্রসঙ্গে ডা. মুখার্জি আরও জানিয়েছেন, ‘যে কোনও রোগের মূল কারণ চিহ্নিত করা হল একটি যুদ্ধ জয় করা। এখানেই ডায়াগনস্টিক সেক্টর কাজে আসে। মেট্রোপলিসে, আমরা শুধুমাত্র রোগের মূল কারণ চিহ্নিতই করি না, বরং রোগের প্যাটার্নগুলিকেও স্টাডি করি এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার পরামর্শ দিয়ে থাকি। তাই আমরা ক্রমাগত সিএমই, ওয়েবিনার, রাউন্ড টেবল মিটিং এর মাধ্যমে ক্লিনিশিয়ান, হাসপাতাল এবং হেলথকেয়ার ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনগুলির সঙ্গে রোগ নির্ণয় ও টেস্ট-এর বিষয়ে তথ্য আদান-প্রদান ও ভাবনা-চিন্তার বিনিময় করে থাকি। চিকিৎসকদের আরও ভালো এবং কার্যকর ক্লিনিকাল সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য, অটোমেশন ও ডিজিটাইজেশনের সহায়তায় আমরা স্মার্ট রিপোর্ট-কে সহজ করে দিই।’

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...