ঘড়িতে আটটাও বাজেনি। এত সকাল সকাল মেয়ে দোলন ফোন করছে দেখে, একটু অবাকই হল ডলি। রান্নাঘরে ব্যস্ততার মাঝে কাপড়ে হাত মুছতে মুছতে এসে ডলি ফোনটা তুলল। তাকিয়ে দেখল স্বামী বিকাশও খবরের কাগজটা নামিয়ে রেখে ফোনটা ধরবে বলে ঘরে ঢুকছে। ডলিকে ফোনটা তুলতে দেখে জিজ্ঞাসু চোখে ঘরের ভিতরে এসে ডলির সামনে দাঁড়াল। ইশারায় ডলি বিকাশকে জানাল মেয়ের ফোন।

ফোনটা তুলতেই দোলনের আনন্দঘন কণ্ঠস্বর ওপাশ থেকে ভেসে এল৷ মা, আমি খুব শিগগিরি অর্ণবের সঙ্গে তোমাদের মিট করাব। খুব ভালো ছেলে। আমার সঙ্গেই ম্যানেজমেন্ট পড়ছে, এবছরই শেষ। আমরা একসঙ্গেই দুজনে, ইন্ডিয়া ফিরে ভবিষ্যতের জন্য সিদ্ধান্ত নেব।

স্পিকারে ফোনটা থাকায় সব কথাই বিকাশেরও কানে যাচ্ছিল। সুদূর দুবাই থেকে মেয়ের মুখে শোনা এরকম একটা খবরে বিকাশ খুশি হল৷ ডলির হাত থেকে ফোনটা নিয়ে বলল, খুব ভালো খবর, তাড়াতাড়ি দেশে ফের। অর্ণব ছেলেটি কোথাকার?

ওরা জয়পুরের পুরোনো বাঙালি।

বাঃ তাহলে প্রথমত ছেলেটি ভারতীয়, উপরি পাওনা বাঙালি। তোর মা তো ভেবে ভেবে পাগল হয়ে গিয়েছিল যে, দুবাই গিয়ে মেয়ে হয়তো কোনও শেখ বা ইংরেজকে বিয়ে করে বসবে।

দোলনের হাসি ভেসে এল ফোনে৷ মা যখন যেটা ভেবেছে সেটা কখনও সত্যি হতে দেখছ বাবা? মা কেন কিছু বলছে না এই ব্যাপারে?

তোর মা অর্ণবের নাম শুনে শক খেয়েছে মনে হচ্ছে। ঠাট্টার স্বরে বলে বিকাশ।

ডলির মেজাজ সত্যি সত্যিই খারাপ হয়ে গিয়েছিল। ইচ্ছে করেই ও কোনও উত্তর দিল না। বিকাশ ফোন রাখতেই ডলি রাগে ফেটে পড়ল।

আমি জানতাম বিকাশ, পড়াশোনার নাম করে ওখানে বসে মেয়ে প্রেম করে বেড়াচ্ছে। এবার বুঝবে মেয়েকে পড়তে পাঠিয়েছিলে নাকি পাত্র খুঁজতে।

কী যা-তা বলছ ডলি, দ্যাখো কিছুদিনের মধ্যেই ও চাকরি পেয়ে যাবে। নিজের পছন্দের ছেলে খুঁজে নিয়ে কী এমন ভুল করেছে দোলন? ও যথেষ্ট পরিণত মনস্ক, বিচক্ষণ মেয়ে যা সিদ্ধান্ত নেবে সঠিকই নেবে।

বিকাশের কথায় ডলি দমে না গিয়ে বলতে লাগল, ঠিক আছে ওকে এখানে আসতে দাও তখনই বুঝতে পারবে। ওর সঙ্গে কারও সম্পর্ক টেকার নয়! কাজের কোনও ছিরিছাঁদ নেই, কোনও গুণ নেই। এই যে এতগুলো টাকা লোন নিয়ে পড়তে পাঠানো হল, একবার বিয়ে করে বসে গেলে লোনের টাকা শোধ হবে কী করে? জানতাম, এই মেয়ে কোনওদিন কাউকে শান্তিতে থাকতে দেবে না।

ডলির কথা শুনে বিকাশও রাগ সামলাতে পারল না। তিক্ত স্বরে বলল, তোমার তো সবই আগে থেকে জানা, নিজেকে অন্তর্যামি মনে করো তুমি। পাড়া প্রতিবেশীদের সঙ্গে অন্যের সমালোচনা করা ছাড়া দুনিয়ার আর কোনও খবর কিছু রাখো?

বিকাশ রেগে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল। ওর ইচ্ছা হচ্ছিল অর্ণব সম্পর্কে ইতিবাচক চিন্তা করতে, স্ত্রীয়ের সঙ্গে বসে মেয়ের বিয়ে নিয়ে আলোচনা করতে– কিন্তু কিছুই করা হল না। মাথা ঠান্ডা করতে আবার কাগজ মুখে বসে পড়ল সে।

ডলির এই স্বভাব বিকাশের কাছে নতুন নয়। বরাবরই খারাপটা চিন্তা করতেই ডলি ভালোবাসে। আর সব সময় ওই একটাই কথা, এর ফল বুঝতে পারবে। বড়ো মেয়ে তনুশ্রী বরের সঙ্গে কানাডায় সেটলড। দোলন ম্যানেজমেন্ট পড়তে দুবাইতে। যে-কোনও কথা কারওর সঙ্গে হলেই ডলির দাবি, ও সবকিছু জানে। কারণ ও বাস্তবটা দেখেছে! সব ব্যাপারে ওর এত জ্ঞান যে, কোথাও কোনও কিছু ওর অগোচরে থাকে না। এমনকী রান্না, ফ্যাশন কিংবা রাজনীতি সবকিছুই নাকি ওর জানা।

কিছুদিন আগেই, বিকাশের কানে এসেছিল ডলি কাউকে ফোনে বলছে, কৃষক আন্দোলন যে হবে সেটা ও নাকি আগে থেকেই জানত। বিকাশ তখনই ডলিকে বলেছিল, এ আবার কী ধরনের কথা ডলি। কৃষক আন্দোলনের কথা আগে থেকেই তুমি জানতে? একটু ভেবেচিন্তে তবে তো কথা বলবে!

আরে আমি জানতাম বলেই না বলেছি। কিছুতেই দমবার পাত্রী নয় ডলি।

অফিসের কলিগদের সামনেও বহুবার বিকাশকে লজ্জিত হতে হয়েছে। মেয়েটাও বান্ধবীদের বাড়ি নিয়ে আসতে চাইত না, মায়ের বেফাঁস কথা বলার অভ্যাসের ভয়ে৷বিকাশ মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে কর্মরত, ফলে আর্থিক অবস্থা ওদের ভালোই। ডলি কৃপণ মানসিকতার মহিলা এবং নিজের জ্ঞান সম্পর্কে এতটাই অহং যে, সত্যিকারের বন্ধু বলে ওর কেউ ছিল না। ডলির জ্ঞানের বড়াইকে বাইরের লোক ওর মূর্খতা জেনে পিছনে হাসাহাসি করত। বাড়িতেও ডলির ব্যবহারে কেউ সন্তুষ্ট ছিল না।

দোলনের সঙ্গে কথা না বলা পর্যন্ত ডলি মনে মনে ছটফট করছিল। পরদিন ডলি দোলনকে ফোন করল। কোনওরকম ভূমিকা না করেই সোজাসুজি জিজ্ঞেস করল, এখুনি বিয়ে করে নিলে তোমার লোনের টাকা কে শোধ করবে?

তুমি কেন চিন্তা করছ মা? আমি ইন্ডিয়া ফিরে এসে চাকরি করব। আমার লোন আমিই শোধ করব। প্রথমে দিল্লি হয়ে দু’জনে কলকাতায় আসব। অর্ণবের সঙ্গে তোমাদের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পর অর্ণব জয়পুর ফিরে যাবে। দোলনের স্বরে এতটুকু উত্তেজনা প্রকাশ পেল না। ডলি কোনওরকম আগ্রহ দেখাল না। ফলে হতাশ হয়ে দোলন ফোন কেটে দিল।

দুবাইতে পড়াশোনা শেষ করে ওরা দু’জনে দিল্লি হয়ে কলকাতা পৌঁছোবার কথা বিকাশকে ফোন করে জানিয়ে দিল। কথা হল বিকাশ অফিস থেকে বেরিয়ে সোজা এয়ারপোর্টে গিয়ে ওদের গাড়িতে তুলে নেবে। ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে গেল। ডলি ওদের জন্য ডিনারের ব্যবস্থা করে রেখেছিল।

অর্ণবকে দেখেই ডলির খুবই ভালো লাগল কিন্তু ভিতরে ভিতরে একটা রাগ ডলির ভিতর থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ডানা ঝাপটাচ্ছিল। মেয়েকে দুবাই পড়তে পাঠিয়েছিল আর সেখানে ও কিনা বাবা-মায়ের অনুমতির অপেক্ষা না করে, বিয়ে করবে বলে পাত্র পছন্দ করে একেবারে বাড়ি নিয়ে এল। বিকাশের উপরেও রাগ কিছু কম হচ্ছিল না। এমন ব্যবহার করছিল যেন দোলনের বিয়ে হয়ে গেছে অর্ণবের সঙ্গে। দোলনের মুখেই শুনেছিল, অর্ণবদের জয়পুরে প্রতিষ্ঠিত ব্যাবসা। বনেদি ধনী পরিবার, আধুনিক মনস্ক। অর্ণবরা দুই ভাই, অর্ণবই বড়ো। ছোটো ভাই অভয় এখনও পড়াশোনা করছে।

অর্ণবের সঙ্গে কথা বলে, মেলামেশা করে ডলি অর্ণবের কোনও খুঁত বার করতে না পেরে মনে মনে ফুঁসতে লাগল। ডলি কিছুতেই মন থেকে মেনে নিতে পারছিল না, দোলন নিজেই নিজের পাত্র ঠিক করেছে। অর্ণবকে বিকাশেরও খুব ভালো লেগেছিল ফলে বাড়ির সদস্যের মতোই বিকাশ অর্ণবের যত্নআত্তিতে মেতে উঠল।

ডিনার সারতে সারতেই দোলন জানাল, মা আমরা পরশু দিল্লি ফেরত যাব। ওখানে অর্ণবের মা-বাবাও আসবেন। অর্ণব আমাকেও ওদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে চায়। আমি দু-তিনদিনের মধ্যেই ফিরে আসব।

ডলি একটু অসন্তুষ্ট হয়ে বলল, আমি জানতাম, আমাদের জিজ্ঞেস না করেই নিজেই শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার সিদ্ধান্ত তুমি নেবে। বিকাশ পরিস্থিতি সামলাবার জন্য ডলিকে একপ্রকার থামিয়ে বলল, খুব ভালো করেছিস মা, ঘুরে আয়। আর ডলি, তুমি তো তোমার মেয়েকে খুব ভালো করেই চেনো। এটা বরং ভালোই হল।

দোলন মায়ের মনের তিক্ততা টের পেল না। সে নিজের স্বপ্নে বিভোর হয়ে ছিল। দোলন আর অর্ণবের চোখে নতুন জীবনের স্বপ্নের ঘোর লাগা ভাব ডলি বা বিকাশ কারও চোখই এড়াল না। ওদের দু’জনকে ভালোবাসায় ডুবতে দেখে বিকাশের মন আনন্দে ভরে উঠল।

রাত্রে শোবার ঘরে একলা পেয়ে ডলি এতক্ষণ মনের মধ্যে চেপে রাখা অভিযোগগুলো জানাতেই, বিকাশ মেজাজ হারিয়ে বলেই ফেলল, কখনও তো জীবনে খুশি হওয়ার চেষ্টা করো ডলি। এত ভালো ছেলে পছন্দ করেছে দোলন, ও যথেষ্ট বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছে। ও নিশ্চয়ই সব জেনেবুঝেই আমাদের সঙ্গে পরিচয় করাতে নিয়ে এসেছে।

তুমি বুঝছ না বিকাশ, দোলন কারও সঙ্গে মানিয়ে চলতে পারে না। বিয়ে করে যখন হাত কামড়াবে তখন আর আপশোশ করেও কোনও লাভ হবে না। বাড়ির একটা কাজও করতে পারে না। সারাদিন খালি আরাম, নয় আড্ডা। বিয়ে পর ওকে কাঁদতে হবে।

বিকাশ রাগ সামলাতে পারল না। তুমি কেমন মা যে, কেবল মেয়ের খারাপ চিন্তাই করছ? শেম অন ইউ ডলি।

দোলন নিজের মায়ের স্বভাব খুব ভালো করেই জানত, তাই মনের মধ্যে একটা অস্বস্তি, দুঃখ ওর ছিলই। কিন্তু অর্ণবের প্রতি ভালোবাসাতেও ওর বিন্দুমাত্র খাদ ছিল না। দু’জনেই তাই চাইছিল যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়েটা সেরে নিতে। কিন্তু দোলন খুব ভালোই বুঝতে পারছিল, ওদের বিয়ের ব্যাপারটা মা কিছুতেই ভালো চোখে দেখবে না।

একটা গোটা দিন মা-বাবার সঙ্গে কাটিয়ে দোলনরা দিল্লি চলে গেল। পরের দিন বড়ো মেয়ে তনুশ্রীর ফোন এল। বাবার মুখে সব শুনে দোলনের জন্য ওর আনন্দ আর ধরছিল না। মা-কে বোঝাবার চেষ্টা করল, মা অর্ণব খুব ভালো ছেলে এবং ওদের পরিবারও খুব ভালো। আমার এক বান্ধবী জয়পুরে থাকে, ওরা খুব ভালো করে অর্ণবের পরিবারকে চেনে। আমরা চেষ্টা করলেও বোনের জন্য এত ভালো পাত্র খুঁজতে পারতাম না।

তনু আমি জানতাম, তুই বোনের হয়ে কথা বলবি। আর ও যে কাউকে না জানিয়ে প্রেম করে বসল তার কী…?

উফ…ফ মা, এই যে তোমার ইগো, এটাই তোমার সব থেকে বড়ো সমস্যা। কখনও তো অন্য কারও কথা শোনার চেষ্টা করো। তনুশ্রী ফোন কেটে দিল।

 

এদিকে দিল্লিতে দোলনকে, অর্ণব তার মা-বাবা অনিল এবং মধুমিতার সঙ্গে আলাপ করাল। দোলনের ওদের খুব ভালো লাগল, ওদেরও অর্ণবের পছন্দ খুব ভালো লাগল। দিল্লি থেকে অর্ণবের মা-বাবা ডলি আর বিকাশের সঙ্গেও ফোনে কথা বললেন। ওনারাও চাইছিলেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দোলনকে বাড়ির বউ করে আনতে।

বিকাশও বিয়েতে সম্মতি দিয়ে দেওয়াতে অর্ণবের মা-বাবা বিকাশদের জয়পুর ঘুরে যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানালেন। আপনারা একবার আসুন, আমাদের ঘরবাড়ি দেখে যান। আপনাদের মনে যদি কোনও প্রশ্ন থাকে তাহলে আপনাদেরও দরকার নিশ্চিন্ত হওয়ার। মা-বাবা হিসেবে নিশ্চয়ই আপনারা ভাবছেন যে, দোলন এসে আমাদের বাড়িতে ভালো থাকবে কিনা।

দুটো পরিবারেই বিয়ের তোড়াজোড় শুরু হয়ে গেল। দোলন তিনদিন দিল্লিতে থেকেই কলকাতার বাড়িতে ফিরে এল। বাক্স ভর্তি উপহারের বহর দেখে বিকাশ জিজ্ঞাসু চোখে তাকাতেই দোলন বাবার গলা জড়িয়ে ধরে বলল, ওনারা কিছুতেই ছাড়লেন না। অর্ণবের মা-বাবা জোর করে সব দিয়ে দিলেন। বাবা ওনারা ভীষণ ভালো, আমার খুব ভালো লেগেছে ওনাদের। ডলি উপহারগুলি দেখেও মুখে কিছুই বলল না। উঠে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।

এরই মধ্যে মুম্বই-তে দোলন জব অফার পেয়ে পনেরো দিনের মাথায় মুম্বই চলে গেল। ওদিকে অর্ণব নিজের পৈতৃক ব্যাবসায় বাবার সঙ্গে জয়েন করল। অর্ণবের মা-বাবা বিয়ের কথা বলতে কলকাতায় এসে হোটেলে উঠলেন। বিকাশদের বাড়ি গেলেন দেখা করতে। অনিল আর মধুমিতার মধুর দাম্পত্য সম্পর্ক দেখে ডলি অবাক হয়ে গেল। এই বয়সেও একে অপরকে যেন চোখে হারাচ্ছেন, এতটাই দু’জনের মনের মিল। সঙ্গে করে ওনারা ডলিদের জন্য প্রচুর উপহারও নিয়ে এসেছিলেন। দু’জনের মুখ থেকেই বারেবারে ডলি নিজের রান্নার প্রশংসা শুনে মনে মনে গর্ববোধ করল।

সুযোগ বুঝে ডলি বলল, দোলন কিন্তু রান্না করতে পারে না, আগে থেকে আপনাদের জানিয়ে রাখা ভালো। কারণ পরে আপনারা বলতে পারবেন না যে, আগে থেকে আমি আপনাদের কিছুই জানাইনি।

ডলির কথা শুনে মধুমিতা জোরে হেসে উঠলেন৷ বললেন, আপনার মেয়েটি ভারি মিষ্টি। ও নিজেই আমাকে বলেছে যে, ও বাড়ির কোনও কাজ করতে পারে না। আর ওকে আমাদের বাড়ি গিয়ে কোনও কাজ করতেও হবে না। আমার বাড়িতে কাজের লোক রয়েছে সঙ্গে রান্নার জন্য আলাদা দু’জন লোক আছে। আমি নিজেই প্রয়োজন না পড়লে রান্নাঘরে ঢুকি না। আজকালকার মেয়েরা কেরিয়ার তৈরি করতেই ব্যস্ত, ওরা ওটার জন্যই ম্যাক্সিমাম পরিশ্রম করে। তবে দরকার পড়লে জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ সবই ওরা করে নেয়। আর এখন তো দোলন একলাই রয়েছে, কিছু না কিছু তো ওকে করতেই হচ্ছে।

ডলি চুপ করে রইল। গল্পগুজবে অনেকটা সময় ভালোভাবে কেটে গেল। ওঁদেরও হাতে প্রচুর উপহার দিয়ে ডলি আর বিকাশ ওনাদের বিদায় জানাল। ঠিক হল শীত পড়ার আগে আগেই বিকাশ আর ডলি জয়পুর যাবে বিয়ের সব কথাবার্তা ফাইনাল করতে। অনিল আর মধুমিতার ইচ্ছা সেসময় দোলনকেও ওখানে এনে আশীর্বাদটা সেরে ফেলা।

ডলি বিকাশের সঙ্গে আলোচনা করল, জয়পুর যাওয়া মানে আবার একটা বড়ো খরচা, তাছাড়া আবার উপহার নিয়ে যেতে হবে। বিয়ে, আশীর্বাদ আলাদা করে করার কী দরকার ছিল? বিয়ের দিনই তো আশীর্বাদ সারা যেত।

দোলন জানত, মা এরকম একটা কিছু ভাবতে পারে, তাই নিজেই জয়পুরের আসা-যাওয়ার টিকিট কেটে বাবাকে পাঠিয়ে দিল আর মায়ের হাতেও বেশ কিছু টাকা পাঠাল যাতে উপহার কেনা নিয়ে মা-কে টাকার জন্য ভাবতে না হয়। মা-কে শুধু বলল, জয়পুরে আসা-যাওয়ার টিকিট-টা অর্ণব কিনে আমাকে পাঠিয়ে দিয়েছে। আমাদের তিনজনেরটাই।

এতেও যে ডলি পুরোপুরি খুশি হল তা নয়। বিকাশকে বলল, নিশ্চয়ই এর মধ্যে কোনও গণ্ডগোল রয়েছে, নয়তো বিয়ের জন্য এত তাড়াহুড়ো কেন করবে? এত ধনী পরিবার দোলনকে বউমা করার জন্য কেন পাগল হয়ে উঠেছে? কিছু তো ব্যাপার আছে নিশ্চয়ই, পরে ঠিক জানা যাবে দেখে নিও।

বিকাশ বলল, গণ্ডগোল ওদের নয়, তোমার মাথায় শুধু!

নির্দিষ্ট দিনে বিকাশ আর ডলি জয়পুর পৌঁছে গেল৷ দোলনও সোজা মুম্বই থেকে এসে পৌঁছোল। তনুশ্রী কানাডা থেকে আসতে পারল না। বিয়েতেই সোজা আসবে বলে জানাল। অর্ণবদের বিশাল চারতলা বাড়ি, চাকরবাকর দেখে ডলির মাথা ঘুরে যাওয়ার অবস্থা হল। এত বৈভব থাকা সত্ত্বেও কারও কোনও অহংকার নেই, সকলেই যেন মাটির মানুষ। কিন্তু ডলির স্বভাব যাবে কোথায়? ও কোনও একটা ভুলভ্রান্তি বার করার জন্য ছটফট করতে লাগল।

শাশুড়ির সঙ্গে দোলনের সম্পর্ক দেখে মনে মনে অবাক না হয়ে পারল না ডলি। ফোনে ফোনে কথা বলে দোলনের আশীর্বাদের শাড়ি, গয়না থেকে শুরু করে সাজগোজের খুঁটিনাটি প্রসাধনী– সব আগে থেকেই কিনে গুছিয়ে রেখেছেন মধুমিতা। দেওর অভয়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক ডলিকে ঈর্ষান্বিত করে তুলল। দু’জনের মধ্যে ঠাট্টা-ইয়ার্কি করা দেখে মনে হচ্ছিল, যেন কত পুরোনো পরিচয় ওদের।

বিকাশ আর ডলির জন্য আরামদায়ক, সবরকম সুবিধাযুক্ত বিশাল গেস্টরুমের ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন অনিল এবং মধুমিতা। বড়ো অনুষ্ঠান করে, জয়পুরে পরিচিত সবাইয়ের উপস্থিতিতে খুব ধুমধাম করে দোলন আর অর্ণবের আশীর্বাদ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হল। বিকাশ অনুষ্ঠানের খরচ ভাগ করে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল অর্ণবের বাবাকে। কিন্তু উনি হাত জোড় করে সেটা গ্রহণ করতে অস্বীকার করলেন। বেয়াইমশাই আমাদের কিছু চাই না। দোলন আমাদের বাড়ি আসছে তাই সেই আনন্দেই আমাদের এইটুকু অন্তত করতে দিন। আমাদের সত্যিই কিছু চাই না।

অনুষ্ঠান শেষে একান্তে ডলি বিকাশকে বলল, আমার তো কিছু ভালো ঠেকছে না। বাইরের দেখনদারি যাদের এত, আমি জানি সেইসব লোকেরা পরে খোলস ছেড়ে অন্যরূপ ধরে। দাঁড়াও দু’দিন পরেই দোলন সব বুঝতে পারবে।

পরের দিন দোলনকে একা পেয়ে ডলি নিজের অনুমানের কথা জানাতে দ্বিধা করল না। দোলনও রাগ সামলাতে পারল না৷ বলল, মা, তোমাকে নিয়ে পেরে ওঠা অসম্ভব। এরা এত ভালো তবুও তোমার ওই এক কথা। সবকিছুই আজ ওনারা আমার পছন্দ অনুযায়ী করেছেন। আমার ড্রেস, গয়না সব অর্ণবের মা-ই কিনেছেন৷ একটা জিনিসও আমাকে কিনতে দেননি। কালকে আমাকে সঙ্গে করে নিয়ে বিয়ের জন্য প্রয়োজনীয় আর সবকিছু কিনতে যাবেন, যাতে আমার পছন্দ হয়। এর পরেও তুমি এই ধরনের কথা বলছ!

তোদের মতো মেয়েদেরই পরে কাঁদতে হয়। ডলিও দমবার পাত্রী নন।

মায়ের মানসিকতা দেখে রাগে, দুঃখে দোলনের চোখে জল এসে যায়। বিকাশ স্নেহভরে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কপালে স্নেহচুম্বন এঁকে দেয়। কাঁদিস না মা, জানিসই তো তোর মা দরকারের থেকে একটু বেশিই আন্দাজ করে।

বিকাশ আর দোলন দু’জনেরই ডলির প্রতি মন বিষিয়ে উঠেছিল কিন্তু তাতে ডলির আগেও কোনওদিন কিছু যায় আসেনি, আজও কোনও প্রভাব পড়ল না।

অনুষ্ঠান হয়ে যাওয়ার পরের দিন সকলে একসঙ্গে বসে কথাবার্তা চলছে। মধুমিতা ডলির দিকে তাকিয়ে বললেন, আপনাদের সঙ্গে আমার কিছু কথা আছে। সঙ্গে সঙ্গে ডলির চোখে সন্দেহের কালো ছায়া ঘনিয়ে এল। আড়চোখে বিকাশের দিকে তাকিয়ে বলল, হ্যাঁ বলুন।

দেখুন আমাদের টাকাপয়সার কোনও অভাব নেই, সন্তানের আনন্দতেই আমাদের আনন্দ। আমাদের ইচ্ছে তাড়াতাড়ি ওদের বিয়ে দিয়ে বাড়িতে মেয়ে নিয়ে আসার। আমি আর ধৈর্য ধরতে পারছি না। আমরা সবকিছু গুছিয়ে নেব, আপনাদের চিন্তা করতে হবে না। দোলন পড়াশোনার জন্য যেটা লোন নিয়েছে আমরাই সেটা শোধ করে দেব। বিয়ের পর ও এসে আমাদের পারিবারিক ব্যাবসায় যোগ দিক আমরা সেটাই চাই। মুম্বইতে একা একা থেকে ওখানে চাকরি করার ওর কোনও দরকার নেই। ওরা দু’জনে মিলেমিশে ব্যাবসা সামলাক, আমাদের সঙ্গে থাকুক, আর কী চাই?

বিকাশ হাত জোড় করে বলল, আপনারা যা চান তাই হবে। আমাদের একটা ফ্ল্যাট আছে যেটা ভাড়ায় দেওয়া। দোলনকে দেওয়ার জন্যই ইনভেস্ট করেছিলাম। ওটা বিক্রি করে দিলেই লোন শোধ করে দিতে পারব। কোনও সমস্যা হবে না। আপনারা যখন বলবেন আমি বিয়ে দিতে রাজি আছি।

মধুমিতা আনন্দে দোলনকে জড়িয়ে ধরলেন। নিজের কাছে টেনে নিয়ে বললেন, ব্যস, আমার ছেলের বউ তাড়াতাড়ি এবাড়িতে আসুক আমি এটাই চাই। দোলন তুমিও মুম্বই গিয়ে এখানে আসার প্ল্যান শুরু করে দাও। আমি শিগগিরি ঠাকুরমশাইয়ের সঙ্গে কথা বলে বিয়ের দিন দেখছি।

দোলনের লজ্জানত চেহারা দেখে, দেওর অভয় দোলনের সঙ্গে ঠাট্টা করতে শুরু করে দিল। বিয়ের অনুষ্ঠান নিয়ে বড়োদের মধ্যে কথাবার্তা শুরু হতেই ডলি মনে মনে শঙ্কিত এবং আশ্চর্যও হল। এত তাড়াতাড়ি সবকিছু ঘটে যাচ্ছে, এত মসৃণ ভাবে এবং এরা কী করে এত ভালো হতে পারে, এসব ভেবে ভেবেই ডলির মনের অস্বস্তি বাড়তে শুরু করল।

কলকাতায় ফেরার পথে দোলন ডলিকে জিজ্ঞেস করল, মা, ওখানে তোমার সব ঠিক লাগল তো?

দেখা যাক, একটু যেন বেশি ভালো বলেই মনে হল। দেখি তুমি কতদিন ওদের সঙ্গে সুখে থাকতে পারো। তখন সবকিছু বোঝা যাবে, তাই না? দোলন চুপ করে রইল।

ডলি বিকাশকে বলল, তুমি তো নিজেই ওদের সঙ্গে বসে সব সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলে। আমাকে একবার জিজ্ঞেসও করলে না!

জিজ্ঞেস করার কী আর আছে। সবই আমার সঠিক মনে হয়েছে তাই রাজি হয়ে গেছি। কাটাকাটা উত্তর দিল বিকাশ।

দু’টো পরিবারেই বিয়ে প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেল। দু’মাস পরেই বিয়ে স্থির হল। তনুশ্রীকেও বিয়ের দিন জানিয়ে দেওয়া হল, যাতে আগে থাকতে সব ব্যবস্থা করে ওরা সপরিবারে আসতে পারে। দোলন মুম্বই ফিরে গিয়ে ইস্তফা দিল চাকরিতে। সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে আবার কলকাতা ফিরে এল। ওদিকে মধুমিতা ফোনে দোলনকে জিজ্ঞেস করে করে, ওর পছন্দমতো বিয়ের জোগাড়যন্ত্র করতে লাগলেন এবং প্রতিটা জিনিস পছন্দমতো গুছিয়ে রাখতে শুরু করে দিলেন দোলনের জন্য।

ডলি সব দেশেশুনে মন্তব্য করল, বড়োলোকেদের ব্যাপারই আলাদা। লোক দেখানো আয়োজন, একবার সব মিটে গেলে তখন আসল রূপ বেরোবে।

বিয়ের দিন ক্রমশই এগিয়ে আসছিল অথচ ডলির ব্যবহারে কোনও পরিবর্তন না আসাতে দোলনও মনে মনে কষ্ট পেল। বিয়ের জোগাড় করাটা যেন একটা বোঝা, এমন ব্যবহার করে যাচ্ছিল ডলি। মেয়ের যে ভালো পরিবারে বিয়ে হতে চলেছে, তাতে ডলির মনের আনন্দ কিছুই প্রকাশ পেল না। বরং সবসময় অর্ণবদের পরিবার সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্যে দোলন মনে মনে মুষড়ে পড়ত। বিকাশ সব বুঝতে পারত কিন্তু বাড়িতে অশান্তি বাড়ার ভয়ে চুপ করেই থাকত।

তনুশ্রীও স্বামী আর দুটো বাচ্চাকে নিয়ে এসে পৌঁছোল। বাচ্চারাও মাসির বিয়ে উপলক্ষে আনন্দে মেতে উঠল। বাড়িতে আনন্দের পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও ডলির একমাত্র নিরানন্দ মানসিকতা সকলকেই ভিতরে ভিতরে ব্যথিত করে তুলেছিল।

বিকাশ নিজের বাজেট অনুযায়ী মেয়ের বিয়ের সব খরচার টাকা অনিলের অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে দিয়েছিল কারণ বিয়ের সমস্ত জোগাড়ের দায়িত্ব অর্ণবের পরিবারই নিয়েছিল। বিয়ের পাঁচদিন আগে দোলন তার পরিবারের সঙ্গে জয়পুরে এসে পৌঁছোলে অনিল আর মধুমিতা নিজেরা এসে এয়ারপোর্টে সকলকে অভ্যর্থনা জানিয়ে গাড়ি করে হোটেলে নিয়ে এলেন, যেখানে বিয়ের এলাহি ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

ভালো ভাবে বিয়ের সব অনুষ্ঠান নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়ে গেল। আয়োজনের কোথাও কোনও খামতি ছিল না। ডলিরাও সকলে কলকাতায় ফিরে এল। তনুশ্রীরাও আরও কিছুদিন কাটিয়ে কানাডা ফিরে গেল। বিকাশ অফিসের কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল আর ডলি নিজের মতো চলতে লাগল। এখনও নিজের অনুমানই সঠিক বলে মনে করতে লাগল ডলি। দোলন ফোন করলেই, শ্বশুরবাড়ির সকলে ওর সঙ্গে কেমন ব্যবহার করছে একটাই প্রশ্ন থাকত ডলির। দোলন প্রশংসা করলে বলত, এরকম ব্যবহার আর কিছুদিন পাবি, তারপরই বুঝবি কী লোক ওরা।

দোলন অর্ণবের সঙ্গে পারিবারিক ব্যাবসায় সাহায্য করতে শুরু করল। একটা নতুন শোরুম খোলার কথাবার্তা চলছিল, যার পুরো দায়িত্বই ছিল দোলন আর অর্ণবের উপর। একটা গাড়ি আর ড্রাইভার দোলনের জন্য সবসময় থাকত যাতে প্রয়োজনে সর্বত্র ও যেতে পারে। দোলন বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে খুবই আনন্দে ছিল কারণ সকলেই ওকে বাড়ির মেয়ের মতোই ভালোবাসত। কিছুদিন পরেই দেওরেরও বিয়ের ঠিক হয়ে গেল, অভয়েরই কলেজ-বান্ধবী পারমিতার সঙ্গে।

ডলির কানে অভয়ের বিয়ের খবর পৌঁছোতেই ডলি দোলনকে সাবধান করার চেষ্টা করল। দোলন এখন বুঝবি, বাড়িতে ছোটো জা আসছে। শ্বশুরবাড়ির ভালোবাসা যখন ভাগাভাগি হয়ে যাবে, তখন পরিস্থিতিও কতটা বদলায় দেখে নিস। পরে বলিস না আমি সাবধান করিনি। দোলন উত্তর দিল না।

অভয়ের বিয়েতে ডলি আর বিকাশ দুজনেই গেল এবং আগের মতোই সম্মান পেল। সবকিছু আগের মতোই নির্বিঘ্নে সুসম্পন্ন হল। পারমিতার সঙ্গে দোলনের বন্ধুত্ব হতে মুহূর্ত দেরি হল না। দুই বোনের মতোই দু’জনের মধ্যে সম্পর্ক গাঢ় হয়ে উঠল।

ডলিরাও নিজেদের বাড়ি ফিরে এল। মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা হলেই দোলন, পারমিতার প্রশংসায় খানিকটা সময় কাটাত। কিন্তু ডলির সেই একটাই কথা, দোলন আমি জীবনে অনেক কিছু দেখেছি, তুই বড্ড বেশি সহজ-সরল মেয়ে৷ জায়ের সঙ্গে বোনের মতো সম্পর্ক অনেক দেখেছি। যেটা কিছুদিনেই দেখবি একেবারে বদলে গেছে। তখন আমার কথা মিলিয়ে নিস।

আজ আর দোলন ধৈর্য রাখত পারল না। ওর সমস্ত সংযমের বাঁধ ভেঙে গেল। ডলি যে-ঘরে ছিল সেখানে বিকাশও বসে কাজ করছিল। ফোন স্পিকারে দেওয়া ছিল। বিকাশের কানে গেল দোলনের কথাগুলো, হ্যাঁ মা, আমি বুঝে গেছি তোমার কাছে সব সম্পর্কই ফালতু, বেকার। তুমি কোন সম্পর্কে ভালোবাসা খুঁজে পাও, একটা উদাহরণ অন্তত দাও। কেন সবসময় তোমার মনে হয় সবকিছুর শেষ খারাপই হবে? আমি তো এই পারিবারে এসেই প্রথম বুঝতে পেরেছি, শান্তিতে থাকা কত সহজ। তুমি যদি কাউকে ভালোবাসো তাহলে সেও তোমাকে ভালোবাসবে… ইশ এটা যদি তুমি জানতে! এখানে এসে আমি যা যা শিখেছি, তোমার কাছে এত বছর কাটিয়ে আমি সেটা শিখতে পারিনি। আর কোনওদিন এ ব্যাপারে তুমি আমাকে কিছু বলবে না।

কিছুদিন পরেই বুঝতে পারবি কারণ যা বোঝার আমি সব বুঝে গিয়েছি।

এখানে আমি এত ভালোবাসা পেয়েছি যে, আমি খুবই আনন্দে আছি। আর এও জানি ভবিষ্যতেও আমি খুশিতেই থাকব।

ডলির পাংশু মুখটা দেখে বিকাশের করুণা হল। কিন্তু এটা যে দরকার ছিল বিকাশ খুব ভালো করেই জানত। দোলন আগে কখনও এরকম ব্যবহার করেনি। আজ নিজের কথা শেষ হতেই এমন ভাবে ফোন নামিয়ে রেখেছে যে, ডলির মুখ-চোখ বিবর্ণ হয়ে উঠেছে। বিকাশ  হাসি চাপতে চুপচাপ কাজ থেকে উঠে অন্য ঘরের দিকে পা বাড়াল।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...