ঘড়িতে আটটাও বাজেনি। এত সকাল সকাল মেয়ে দোলন ফোন করছে দেখে, একটু অবাকই হল ডলি। রান্নাঘরে ব্যস্ততার মাঝে কাপড়ে হাত মুছতে মুছতে এসে ডলি ফোনটা তুলল। তাকিয়ে দেখল স্বামী বিকাশও খবরের কাগজটা নামিয়ে রেখে ফোনটা ধরবে বলে ঘরে ঢুকছে। ডলিকে ফোনটা তুলতে দেখে জিজ্ঞাসু চোখে ঘরের ভিতরে এসে ডলির সামনে দাঁড়াল। ইশারায় ডলি বিকাশকে জানাল মেয়ের ফোন।
ফোনটা তুলতেই দোলনের আনন্দঘন কণ্ঠস্বর ওপাশ থেকে ভেসে এল৷ মা, আমি খুব শিগগিরি অর্ণবের সঙ্গে তোমাদের মিট করাব। খুব ভালো ছেলে। আমার সঙ্গেই ম্যানেজমেন্ট পড়ছে, এবছরই শেষ। আমরা একসঙ্গেই দুজনে, ইন্ডিয়া ফিরে ভবিষ্যতের জন্য সিদ্ধান্ত নেব।
স্পিকারে ফোনটা থাকায় সব কথাই বিকাশেরও কানে যাচ্ছিল। সুদূর দুবাই থেকে মেয়ের মুখে শোনা এরকম একটা খবরে বিকাশ খুশি হল৷ ডলির হাত থেকে ফোনটা নিয়ে বলল, খুব ভালো খবর, তাড়াতাড়ি দেশে ফের। অর্ণব ছেলেটি কোথাকার?
ওরা জয়পুরের পুরোনো বাঙালি।
বাঃ তাহলে প্রথমত ছেলেটি ভারতীয়, উপরি পাওনা বাঙালি। তোর মা তো ভেবে ভেবে পাগল হয়ে গিয়েছিল যে, দুবাই গিয়ে মেয়ে হয়তো কোনও শেখ বা ইংরেজকে বিয়ে করে বসবে।
দোলনের হাসি ভেসে এল ফোনে৷ মা যখন যেটা ভেবেছে সেটা কখনও সত্যি হতে দেখছ বাবা? মা কেন কিছু বলছে না এই ব্যাপারে?
তোর মা অর্ণবের নাম শুনে শক খেয়েছে মনে হচ্ছে। ঠাট্টার স্বরে বলে বিকাশ।
ডলির মেজাজ সত্যি সত্যিই খারাপ হয়ে গিয়েছিল। ইচ্ছে করেই ও কোনও উত্তর দিল না। বিকাশ ফোন রাখতেই ডলি রাগে ফেটে পড়ল।
আমি জানতাম বিকাশ, পড়াশোনার নাম করে ওখানে বসে মেয়ে প্রেম করে বেড়াচ্ছে। এবার বুঝবে মেয়েকে পড়তে পাঠিয়েছিলে নাকি পাত্র খুঁজতে।
কী যা-তা বলছ ডলি, দ্যাখো কিছুদিনের মধ্যেই ও চাকরি পেয়ে যাবে। নিজের পছন্দের ছেলে খুঁজে নিয়ে কী এমন ভুল করেছে দোলন? ও যথেষ্ট পরিণত মনস্ক, বিচক্ষণ মেয়ে যা সিদ্ধান্ত নেবে সঠিকই নেবে।