সুস্থ শরীর ও সুস্থ মনের অনুঘটক পরিচ্ছন্ন আবাস। বসবাসের জায়গাটি যদি পরিপাটি করে সাজানো-গোছানো থাকে এবং সর্বোপরি অপরিষ্কার না হয়, শরীরের অবসাদ ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যায়। ক্লান্তি মুছে গিয়ে, প্রাণচঞ্চলতা ও স্ফূর্তি ফিরে আসে।
তাই বাইরের পরিবেশ সুন্দর করে তোলার পাশাপাশি নিজের বসবাসের জায়গাটি Clean রাখুন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী পৃথিবীর ৩.২ শতাংশ মানুষের মৃত্যুর কারণ তথা ৪.২ শতাংশ রোগের কারণ হল অপরিশুদ্ধ জল ও অপরিচছন্ন পরিবেশে সৃষ্ট জীবাণু। সমস্যা হল, পরিচ্ছন্নতার প্রশিক্ষণ এবং প্রয়াস শুধুমাত্র হাসপাতালে ও স্কুল চত্বরেই সীমাবদ্ধ থাকে, বিশেষত আমাদের মতো প্রগতিশীল দেশগুলিতে। কার্যত দেখা যায় ব্যক্তিজীবনেই পরিচ্ছন্ন অভ্যাসের অভাব। তাই ঘরে ঘরে রোগ জীবাণুর বাসা, অসুস্থতার প্রকোপ।
যারা ঘরের অভ্যন্তরেই পরিচ্ছন্নতার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন না, স্বভাবতই তারা বাইরের পরিবেশকে কলুষিত করার জন্যও দায়ী। ফলত বাইরে থেকে রোগের সংক্রমণ, ঘরে এসে ঢোকে। একজনের থেকে বহুজন অসুস্থতার শিকার হয়ে পড়ে।
অথচ একটু চেষ্টা করলেই Cleanliness-এর সু-অভ্যাস গড়ে তোলা যায়। শেখানো যায় অপরকেও। গড়ে তোলা যায় একটি সুস্থ-নীরোগ সমাজ। অধিকাংশ সংক্রমণের মূলে জীবাণু ও প্রোটোজোয়া। সাধারণত সালমোনেলা, ক্যাম্পাইলোব্যাক্টর, ই-কোলি, স্টেফাইলোকোক্স প্রভৃতি জীবাণু, যাবতীয় সংক্রমণজনিত রোগের কারণ। এছাড়াও ক্যান্ডিডা, এসপারাজিল্স, রোটা ভাইরাস, কোল্ড, ফ্লু, মিজলস-এও প্রচুর মানুষ ভোগেন। তাই প্রিকশন ইজ বেটার দ্যান কিওর– এই বিষয়টি মাথায় রেখে, পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর দেওয়া উচিত।
সুদৃশ্য রান্নাঘর
বাড়ির জানলা, দরজা, গ্রিল ঝকঝকে রাখলেই কাজ শেষ হয়ে যায় না, আপনার প্রতিদিনের ব্যবহার্য কিচেন-টিও পরিষ্কার রাখা জরুরি। Clean পরিবেশে নিজেরও কাজ করতে ভালোলাগবে, আর তা আরামদায়ক হবে বাড়ির সবার জন্যও।
– কিচেনে কাজকর্ম সারার পর গ্যাস আভেন মোছাটা অভ্যাসে রূপান্তরিত করুন। মেঝে মুছে নিন, সপ্তাহান্তে একবার কিচেনের জমা ঝুল ঝেড়ে নিন
– কিচেনে ব্যবহার করার জন্য আলাদা স্লিপার রাখুন
– রান্না করার সময় কিচেনের জানলা-দরজা খোলা রাখুন
– কিচেন যদি স্বল্প পরিসরের হয়, সবজিকাটা, আটামাখা প্রভৃতি কাজ অন্য জয়গায় করুন
– কিচেনে টিকটিকি বা মাকড়সার উৎপাত হলে শুরুতেই ব্যবস্থা নিন। কারণ খাবারে পোকামাকড় পড়লে বিষক্রিয়া হতে পারে
– মেঝেতে খাবার পড়ে থাকলে তৎক্ষণাৎ সেটা পরিষ্কার করুন, তা না হলে আরশোলা ও ইঁদুরের উপদ্রব বাড়বে
– খাবার সবসময় ঢেকে রাখুন। খাওয়া হয়ে গেলে বেশিক্ষণ এঁটো বাসন না-ধোয়া অবস্থায় রাখবেন না, এতে ব্যাক্টেরিয়া জন্ম নিতে পারে
– রান্নাঘরের কৌটো-শিশি নিয়মিত ধুয়ে মুছে পরিষ্কার অবস্থায় রাখুন। না হলে এর ভিতরে রাখা খাদ্যসামগ্রী ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে
– কড়ায় কোনও কিছু ডিপ ফ্রাই করলে, তেল চিটচিটে কড়াই ফেলে রাখবেন না। গরম জলে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন
– কিচেনের শেলফ নিয়মিত পরিষ্কার করুন। কারণ এই সমস্ত জায়গাতেই খাবার পাওয়ার আশায় আরশোলা বংশবৃদ্ধি করে
– কিচেনে ব্যবহূত জিনিস, ব্যবহারের পর যথাস্থানে রাখুন যাতে পরের বার ব্যবহারের সময় সেটি খুঁজতে না হয়। চামচ, কাপ প্রভৃতি পরিচ্ছন্ন রাখুন
– মিক্সি ব্যবহারের পরই ধুয়ে রাখুন। মাইক্রোআভেন, ফ্রিজ সপ্তাহান্তে পরিষ্কার করুন
– সবজির খোসা নির্দিষ্ট জায়গাতেই ফেলুন, যত্রতত্র ছড়াবেন না
– প্রতিদিন রান্নার কাজ শেষ হলে কিচেন পরিষ্কার করাটা জরুরি
– রুম ফ্রেশনার বা সতেজ ফুল কিচেনে রাখতে পারেন। এর ফলে আপনি যখন কাজ করছেন না, কিচেনটি তখনও সুগন্ধী হয়ে থাকবে
ভ্যাকিউম ক্লিন ফ্লোর
ঘরের জমা ধুলোময়লা থেকে নানা রকমের সংক্রমণ ছড়াতে পারে। তাই শুধু ঝাড়ু দেওয়া বা নিত্য মোছাই যথেষ্ট নয়— চাই ভ্যাকিউম ক্লিন ফ্লোর।
ভ্যাকিউম ক্লিনারের সাহায্যে শুধু মেঝেই নয়, Clean করা যায় পরদা, কার্পেট, সোফা— এমনকী আলমারি বা তাকের পিছনের ধুলোময়লাও। সময় বাঁচে, বাঁচে পরিশ্রমও। বস্তুত এই গ্যাজেট-এর মতো আধুনিক যুগের উপযোগী সহজলভ্য বান্ধব আর নেই বললেই চলে।
বাজারে একাধিক রকমের ভ্যাকিউম ক্লিনার পাওয়া যায়, যা নানা শেপ ও সাইজে মেলে। কেনার সময় নিজের প্রয়োজন ও ব্যবহারের মাত্রা অনুযায়ী ক্লিনার কিনুন।
আপরাইট ভ্যাকিউম ক্লিনার : এটিকে অত্যন্ত পাওয়ারফুল ক্লিনার হিসাবে গণ্য করা হয়। কার্পেটের ধুলোময়লা তাড়াতে অব্যর্থ।
ক্যানিস্টার : এটা আপরাইট ভ্যাকিউম ক্লিনারের চেয়ে আকারে একটু ছোটো। মেঝে, টাইলস, কাঠের ফ্লোর, সিঁড়ি, দরজা, সিলিং সবই অনায়াসে পরিষ্কার করা যায়।
হেপা ভ্যাকিউম ক্লিনার : যে-বাড়িতে পেটস আছে, সেই সব বাড়ির পক্ষে এটি আইডিয়াল। পোষা প্রাণীর ঝরে পড়া রোম প্রভৃতি সরানোর জন্য এই ভ্যাকিউম ক্লিনার উপযোগী। অ্যাজমা প্রভৃতি রোগ বাসা বাঁধতে পারে না, বাড়িতে নিয়মিত এই ক্লিনারের ব্যবহারে।
হ্যান্ড হেল্ড ভ্যাকিউম ক্লিনার : এটি সবচেয়ে সুবিধাজনক হ্যান্ডি গ্যাজেট। সোফার আনাচকানাচ থেকে বইয়ের তাক সমস্ত কিছু পরিচ্ছন্ন ও ধুলোরহিত রাখতে এটির বিকল্প নেই।
Cleanliness একটি বোধ, যা নিজের চরিত্রগত করে নিন। নিজের ও পরিবারের সুস্থতার স্বার্থে।
ডেঞ্জার জোন
রান্না করার জায়গায় যেমন পোকামাকড়, ব্যাক্টেরিয়া জন্মানোর সম্ভাবনা থাকে, একই রকম ক্ষতিকারক হচ্ছে জলের আধার ও জলের উৎসক্ষেত্রগুলি। তাই জলের টব, সিংক, চৌবাচ্চা প্রভৃতি পরিচ্ছন্ন রাখুন। জল জমিয়ে রাখবেন না। টয়লেট পরিচ্ছন্ন রাখুন। বাড়ির চারপাশের নর্দমাও।