বিবাহ শব্দটার মানেই হল বিশেষ রূপে বহন করা। সুতরাং সামাজিকভাবে Wedding Ceremony করতে গেলে, স্বভাবতই কিছু আয়োজনের দায়দায়িত্ব বহন করতে হবে। সেই দায়িত্ব যতটা সুষ্ঠুভাবে পালন করবেন, অনুষ্ঠান ততই নিখুঁত হবে।
জীবনসঙ্গী খুঁজে নেওয়ার পাশাপাশি, কিংবা বুঝে নেওয়ার মতোই সমান গুরুত্বপূর্ণ হল বিয়ে সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র অথবা সাজ-সরঞ্জাম সময়মতো সংগ্রহে রাখা। এতে নির্ঝঞ্ঝাট এবং চিন্তামুক্ত থাকা যায় এবং Wedding Cedremony-কে সর্বাঙ্গীন সফল করে তোলা যায়।
নিমন্ত্রণ পত্র
– বিয়ের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়ার পর, প্রথমে নিমন্ত্রণযোগ্য অতিথিদের তালিকা তৈরি করুন। তবে বাজেট ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে প্রয়োজনে তালিকা ছোটো করতেও দ্বিধা করবেন না।
– বাজারে গিয়ে রুচিসম্মত নিমন্ত্রণ পত্র কিনে আনুন। এরপর অল্প কথায় ইংরেজি অথবা বাংলায় ম্যাটার (ইনভিটেশন স্ক্রিপ্ট) লিখে নিমন্ত্রণ পত্র ছাপতে দিন।
– বিয়ের অন্তত পনেরো দিন আগে নিমন্ত্রণ পত্র আত্মীয়-স্বজনদের হাতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করুন।
– বন্ধুদের, নিজেই নিমন্ত্রণ পত্র দিয়ে আসুন। যদি ই-মেলে নিমন্ত্রণ জানান, তাহলে অন্তত একবার দূরভাষে নিমন্ত্রণ জানাতে ভুলবেন না।
কেনাকাটা
– দল বেঁধে কেনাকাটা করতে যাবেন। কারণ সবাই মিলে দেখেশুনে কেনাকাটা করলে ঠকে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে।
– বিয়ের রীতিনীতি থেকে শুরু করে হনিমুন পর্যন্ত যা কিছু প্রয়োজন, সেগুলির তালিকা তৈরি করে কেনাকাটা করতে যাওয়া উচিত।
– জীবনসঙ্গীর জন্য কোনওকিছু কিনতে হলে আগেই তাঁর পছন্দের ব্যাপারে জেনে নিন। প্রয়োজনে তাঁকে সঙ্গে নিয়েও কেনাকাটা করতে যেতে পারেন।
– খুব পুরোনো গয়না বাড়িতে থাকলে তা বদলে নতুন ডিজাইনের গয়না গড়ে নিতে পারেন। তবে তা বিশ্বস্ত গয়নার দোকান থেকেই কেনা উচিত।
মণ্ডপসজ্জা
– পেশাদার ডেকরেটর দিয়েই মণ্ডপ সাজানো উচিত।
– ফুল, পাতা, পাটকাঠি, ওড়না, থার্মোকল প্রভৃতি দিয়ে আজকাল সুন্দরভাবে মণ্ডপ সাজানো হয়। আপনার পছন্দের বিষয়টি আগেই জানিয়ে দিন।
– বন্ধু-বান্ধবদের বিয়ের মণ্ডপসজ্জা দেখে এবং ইন্টারনেটে সার্চ করে মণ্ডপ তৈরির আইডিয়া নিতে পারেন।
ফোটোগ্রাফি
– প্যাকেজ স্টিল এবং ভিডিয়ো ফোটোগ্রাফি করান।
– পেশাদার আলোকচিত্রীদের দিয়েই বিয়ের ছবি তোলানো উচিত। কারণ ছবিগুলিকে প্রেজেন্টেবল করার জন্য ভালো ফ্রেমিংও হওয়া চাই।
– স্টিল ছবিগুলিকে ভালো অ্যালবামে সাজিয়ে রাখবেন এবং ভিডিয়োগ্রাফি এডিট করে ডিভিডির মাধ্যমে সংরক্ষণ করুন।
রেজিস্ট্রেশন
– সিঁদুরদান, মালাবদল যা-ই করুন না কেন, ম্যারেজ রেজিস্ট্রেশন করা অত্যন্ত জরুরি। এই আইনসিদ্ধ বিয়ে ভবিষ্যতের রক্ষাকবচই শুধু নয়, নানা সরকারি কাজকর্মেও তা একান্তভাবে আবশ্যক।
– একমাস আগে নোটিশ করেও রেজিস্ট্রেশন করা যায়, আবার বিয়ের পরও রেজিস্ট্রেশন করানো যায়। তবে বিয়ের পরে রেজিস্ট্রেশনে খরচ বেশি।
– অন্তত দেড়হাজার থেকে দুইহাজার টাকা রেজিস্ট্রেশন বাবদ বিয়ের বাজেটে রাখবেন।
– রেজিস্ট্রেশনের পরে পেমেন্ট রিসিট মনে করে নিয়ে সযত্নে রাখবেন। কারণ রেজিস্ট্রেশনের সপ্তাহখানেক বাদে যখন সার্টিফিকেট তুলতে যাবেন কোর্ট থেকে, তখন পেমেন্ট রিসিট দেখাতে হবে।
– পাত্রপাত্রী দু’জনেরই চার কপি করে পাসপোর্ট সাইজ ছবি লাগে রেজিস্ট্রেশনের জন্য।
আপ্যায়ন
– দূরের নিমন্ত্রিত অতিথিদের থাকার ব্যবস্থা রাখবেন।
– আপ্যায়নের জন্য মিষ্টভাষী এবং মিশুকে কাউকে দায়িত্বে রাখা জরুরি।
– নিমন্ত্রিত অতিথিদের আসা-যাওয়া, থাকা-খাওয়ার যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, সেই ব্যাপারে যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন।
– অতিথিদের মনোরঞ্জনের জন্য গান-বাজনার আয়োজনও রাখতে পারেন।
প্রীতিভোজ
– নিমন্ত্রিতদের ভুরিভোজের দায়িত্ব নিজেরা না নিয়ে কোনও কেটারার দিয়ে করালে নিশ্চিন্ত থাকা যায়।
– ভেজ এবং ননভেজ দু-রকম খাবারই রাখার চেষ্টা করুন মেনুতে। তবে খুব বেশি পদ না রেখে, পছন্দসই অল্পসংখ্যক পদের ভালো খাবার রাখুন।
– বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে আলোচনা করে এবং বাজেট মাথায় রেখে খাদ্য-তালিকা তৈরি করুন।
– মূল খাবারের সঙ্গে দই, মিষ্টি এবং পান রাখা জরুরি। আর বিয়ের অনুষ্ঠান শীতকালে না হলে, দইয়ের পরিবর্তে আইসক্রিম রাখলে ভালো হয়।
– আজকাল বুফে সিস্টেমে খাওয়ানোর রীতি চালু হয়েছে। আপনিও এই পদ্ধতিতে খাইয়ে সবাইকে খুশি করার চেষ্টা করুন।
হনিমুন পর্ব
– জীবনসঙ্গীর সঙ্গে আলোচনা করে আগে থেকে ঠিক করে ফেলুন হনিমুন স্পট।
– মধুচন্দ্রিমায় যাওয়ার আগে, গন্তব্য স্থানের বিষয়ে বিশদে খোঁজখবর নিয়ে রাখুন।
– বিয়ের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়ার পরই বেড়াতে যাওয়ার সমস্ত ব্যবস্থা করে ফেলুন। অর্থাৎ গন্তব্যস্থানে যাওয়া-আসা, থাকা-খাওয়ার সমস্ত ব্যবস্থা পাকা করে রাখুন। প্রয়োজনে কোনও ট্রাভেল এজেন্সির সাহায্য নিন।
– চাকুরিজীবীরা হনিমুনে যাওয়ার জন্য আগেভাগে কর্মস্থলে ছুটির আবেদন করতে ভুলবেন না।