যে-কোনও সংক্রমণ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হল নিজের ইমিউনিটি বাড়িয়ে তোলা। শুধু স্বাদ দেখে খাবার খেলে হবে না, পুষ্টিগুণে ভরা খাবারও আমাদের Diet-এ রাখতে হবে যাতে শরীর সুস্থ থাকতে পারে। প্যান্ডেমিক কাটিয়ে ওঠার পর ইমিউনিটি বাড়াবার জন্য ডায়েট-এ কিছু পরিবর্তন করা এখন অত্যন্ত জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। জানা যাক সত্যি কতটা পরিবর্তন প্রয়োজন।
সব থেকে আগে জেনে রাখা ভালো যে সব খাবারে প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল, আয়রন, ক্যালসিয়াম, কার্বোহাইড্রেটস, ফ্যাট সব ধরনের পুষ্টিকর তত্ত্ব রয়েছে, সেটাকেই আমরা পুষ্টিকর হেলদি Diet বলে থাকি। যদি খাবারে প্রোটিনের অভাব থেকে থাকে তাহলে শরীরে এনার্জি তৈরি হবে না। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। অপরদিকে ক্যালসিয়াম শরীরের পেশির কার্যক্ষমতা সঠিক রাখার সঙ্গে সঙ্গে মেটাবলিজম-এরও সম্পূর্ণ খেয়াল রাখে। কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাটস— এগুলো এনার্জি দেয় সঙ্গে হেলদি কোশ নির্মাণেও সাহায্য করে। আয়রনও শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। সারা শরীরে অক্সিজেন পেঁছোতে সাহায্য করে।
ওয়ার্ল্ড হেল্থ অর্গানাইজেশন-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, অল্প বয়সেই শিশুদের মধ্যে ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার প্রধান একটি কারণ হল আন-হেলদি ইটিং হ্যাবিটস। সুতরাং আন-হেলদি ডায়েট ছেড়ে এমন খাওয়া-দাওয়ার অভ্যাস করতে হবে, যাতে শরীর সুস্থ থাকতে পারে।
বহু রিসার্চ করে দেখা গেছে যারা খুব তাড়াতাড়ি খাবার খায় তাদের মধ্যেই বেশিরভাগ স্থুলতার সমস্যা হয়ে থাকে। তাই ডায়েট হেলদি হলেও এই ক্ষেত্রে অভ্যাস বদলানো সব থেকে জরুরি। তাহলেই আমাদের শরীর সব নিউট্রিযে্টস-এর উপকার পেতে পারবে।
ট্রাই করতে পারেন নতুন রেসিপি: যদি নিজেকে এবং পরিবারের সকলকে হেলদি রাখতে হয়, তাহলে সবার আন-হেলদি ইটিং হ্যাবিটস হেলদি হ্যাবিটে বদলাতে হবে। সেটা সম্ভব করতে পারেন, রোজকার একই খাবার বানানো ছেড়ে নতুন নতুন পুষ্টিকর খাবার বানানোর রেসিপি ফলো করে। সপ্তাহে ৩-৪ বার আলাদা হেলদি রেসিপি বানান। তাতে প্রোটিন, সব রকমের সবজি, শাক ইত্যাদি রাখার চেষ্টা করুন। এতে একই ধরনের খাবারে অনীহা তৈরি হলে, সেটা কেটে যাবে এবং শরীরের পুষ্টিও বজায় থাকবে।
ফলের রসের বদলে গোটা ফল: অনেকেই ফল খেতে চান না কিন্তু ফলের রস তাদের খুব প্রিয়। সেটা বাড়ির তৈরি হোক অথবা বাজার থেকে কিনে এনেও ফ্রুট জুস রোজ খাওয়া চাই-ই। Diet মানতে হলে এটা কিন্তু হেলদি বিকল্প নয়। যেখানে আমরা সংখ্যায় একটা ফল খেয়ে সন্তুষ্ট থাকতে পারি, সেখানে বেশ অনেকগুলো ফলের রস না খেতে পারলে আমাদের মন ভরে না। ফলের রস খেলে ফাইবার-এর মাত্রা কমে যায় এবং সুগার ইনটেক-ও বেশি হয়। কারণ ফলের রস খুব তাড়াতাড়ি হজম হয়ে যায়।
অথচ ফলের মধ্যে ফাইবার, ওয়াটার, ভিটামিন এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্টস প্রচুর মাত্রায় থাকে। ডায়াবেটিজ, হার্টের অসুখ এবং ক্যানসার থেকে সুরক্ষা প্রদান করে। ধীরে ধীরে হজম হয়, সেই কারণে ব্লাড সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। সুতরাং ফ্রুট জুস খাবার অভ্যাস পরিত্যাগ করে ডায়েট-এ রোজ একটা করে গোটা ফল, খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
গোটা শস্য শরীরের জন্য উপকারী: গোটা শস্য শরীরের জন্য অত্যন্ত পুষ্টিকর। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি, ই, ম্যাগনেশিয়াম, ফাইবার আর কার্বোহাইড্রেটস থাকে, যেগুলো কিনা শরীর-স্বাস্থ্য সুস্থ রাখতে অত্যন্ত জরুরি। বহু পরীক্ষানিরীক্ষা করে একটা জিনিস প্রমাণিত, যারা গোটা শস্য বা গোটা শস্য দ্বারা বানানো খাবার, ডাল ইত্যাদি বেশি খান, তাদের ডায়াবেটিস, হার্ট প্রবলেম, হাই ব্লাড-প্রেশারের সমস্যা কম হয়। এমনকী গোটা শস্য ওজন কমাতেও সাহায্য করে। কারণ এতে ভরপুর ফাইবার থাকে। অন্ত্রের প্রদাহ হ্রাস করতেও কার্যকরী। সুতরাং দৈনন্দিনের Diet-এ গোটা শস্য অন্তর্ভুক্ত করা অত্যন্ত জরুরি।
ডায়েট-এ সবজি ও ডাল থাকা আবশ্যক: রোজের ডায়েট-এ সবজি, ডাল থাকাটা অত্যন্ত আবশ্যক কারণ এতে প্রোটিন, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন থাকে। এছাড়াও শরীরে এগুলোর ব্যালেন্স যথাযথ রাখতেও সাহায্য করে। ত্বকও হেলদি রাখে। ভিতর থেকে শরীর সুস্থ থাকলে তবেই বাইরের চেহারায় তার প্রতিফলন ঘটবে।
সবজির সুপ: পেটভরা খাবার খাওয়া থাকলেও, মাঝেমধ্যে খিদে পেয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। সেই সময় চিপস, বিস্কুট বা ভাজাভুজি খেয়ে আমরা খিদে নিবারণ করার চেষ্টা করি। এতে শরীরের ক্ষতি করি নিজের অজান্তেই। যদি সবজির সুপ করা থাকে, তাহলে সেটা খিদে মেটাতে যথেষ্ট কার্যকরী এবং পুষ্টিকরও বটে। এতে ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম থাকার ফলে ইমিউনিটি বাড়াতেও প্রচুর সাহায্য করে।
ড্রাইফ্রুটস: অনেকেরই ভয় আছে ড্রাইফ্রুটস খেলে মোটা হয়। এই ভুল ধারণা মন থেকে সরিয়ে ফেলুন। এটা আপনাকে ফুল ও ফিট যেমন রাখবে, তেমনি ইমিউনিটি বুস্টারেরও কাজ করে। মস্তিষ্ক সচল রাখতে বাদাম খুবই উপকারী এবং নানা রোগ প্রতিরোধক হিসেবেও খুবই কার্যকরী। সুতরাং রোজ অল্প বাদাম Diet-এ রাখা খুবই জরুরি।
ডায়েট-এর এই নিয়মগুলো মেনে চলতে পারলে আপনি এবং আপনার পরিবারও সম্পূর্ণ ফিট থাকবেন এবং ইমিউনিটি পাওয়ারও বৃদ্ধি পাবে।