এসে গেল আলোর উৎসব দীপাবলি। ভেতর-বাইরের সমস্ত অন্ধকার দূর করে আলোর বন্যা বইয়ে দেওয়ার এও এক সুবর্ণসুযোগ। তবে এই সুযোগকে হাতের মুঠোয় পেতে হলে, ভাবতে হবে একটু অন্য ভাবে। কেনাকাটা, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, উপহার আদান-প্রদান, বাজি পোড়ানো, ভুরিভোজ প্রভৃতি গতানুগতিকতার পাশাপাশি, একটু অন্যরকম ভাবে উৎসব উদযাপন করতে পারলে, পাওয়া যাবে নির্ভেজাল আনন্দ, চরম মানসিক তৃপ্তি। আর এই পজিটিভ ভাইব্স আপনার নিজের থেকে ছড়িয়ে যাবে পারিবারিক জীবনে।
আসলে আত্মকেন্দ্রিক না হয়ে অন্যের কথা ভাবা, অন্যের জন্য কিছু করার মাধ্যমেই পাওয়া যায় অসীম আনন্দ। মোটকথা আরও উদার, আরও দয়ালু হতে হবে। কারণ আপনজনের মুখে হাসি ফোটাতে পারলে তবেই নিজের অন্তরকে আলোকিত করা যায় প্রকৃতপক্ষে। তাই একার আনন্দে নয়, সমবেত আনন্দেই পরিবারে বজায় থাকবে পজিটিভ ভাইব্স বা খুশির আবহ। মনে রাখবেন, যে-যার মতো আনন্দে থাকতে চায়। তবে ভালোলাগার বিষয় যাই হোক, উপলক্ষ্য কিন্তু একটাই আনন্দলাভ। কারণ আমরা মনে মনেই বাঁচি বেশি। অতএব জীবনের সমস্ত প্রতিকূল পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠে, মানসিক শান্তি এবং আনন্দলাভের চেষ্টা করতে হবে। আর সংকল্পের সঠিক সময় হোক আলোর উৎসব দীপাবলি।
আত্মবিশ্লেষণ : আয়নার সামনে দাঁড়ান। দেখুন নিজেকে। কী কী দোষগুণ আছে তা বিশ্লেষণ করুন। দোষগুলিকে কাটানোর চেষ্টা করুন এবং গুণগুলির কথা ভেবে আত্মবিশ্বাস বাড়ান। প্রয়োজনে অন্যদের (শুভাকাঙ্ক্ষী) থেকে জেনে নেওয়ার চেষ্টা করুন আপনার কী কী দোষগুণ আছে। কারণ, নেগেটিভ পয়েন্টস না কাটালে, পজিটিভ ভাইব্স আসবে না। অতএব নিজেই নিজের সমালোচনা করুন এবং অন্যের থেকে সমালোচনা শুনে নিজেকে শুধরে নিন।
সামাজিকতা : টেলিভিশন কিংবা কম্পিউটারের সামনে অহেতুক দীর্ঘ সময় ব্যয় না করে, মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করুন। যত মানুষের সঙ্গে মিশবেন, ততই আপনি জ্ঞানবুদ্ধিতে সমৃদ্ধ হবেন, উপকার পাবেন। শুধু তাই নয়, অন্যের গুণগুলি নিতে পারলে আপনি আরও গুণী এবং স্মার্ট হয়ে উঠবেন। মনে রাখবেন কূপমণ্ডুকরা কল্পনার জগতে বাস করে কিন্তু সামাজিকতা বাস্তবের মুখোমুখি করে। আর এই সামাজিকতা বজায় রাখার জন্য ভালোবাসার মানুষের হাতে তুলে দিতে পারেন উপহার সামগ্রী। তবে এক্ষেত্রে মনে রাখবেন, প্রত্যেক মানুষই ভিন্ন স্বভাব এবং ভাবধারা নিয়ে বেড়ে ওঠেন। তাই সবাইকে একইরকম উপহার দিয়ে সমান ভাবে খুশি করতে পারবেন না। অতএব কে কেমন স্বভাবের এবং কী উপলক্ষ্যে উপহার দিচ্ছেন তা জেনেবুঝে নিয়ে তবেই উপহার দিন। নয়তো উপহার দেওয়ার পর অন্যের মুখে হাসি না ফুটলে আপনি মর্মাহত হতে পারেন। যেমন কেউ চায় ব্যবহার্য সামগ্রী, কেউ চায় শৌখিন জিনিস, কেউ চায় দামি কিছু, কেউ-বা আবার হয়তো আবেগমিশ্রিত ব্যক্তিগত কিছু ইচ্ছের বাস্তবায়ন চায় উপহারকে উপলক্ষ্য করে। আর এই আবেগমিশ্রিত উপহারগুলির মধ্যে হয়তো মনের মানুষের দেশ-দেশান্তরে বেড়ানোর ইচ্ছেপূরণ করতে হতে পারে, তাড়াতাড়ি সন্তান চাইলে তাও দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে কিংবা ভাড়াবাড়ি ছেড়ে স্থায়ী ঠিকানার বন্দোবস্তও করতে হতে পারে। শুধু তাই নয়, ধূমপান, মদ্যপান-এর মতো কুঅভ্যাস ত্যাগ করানোকেও অনেকে সেরা উপহার মনে করেন।
অবশ্য শুধু উপহার আদানপ্রদানের মধ্যেই আনন্দ সীমাবদ্ধ থাকে না। আত্মীয়, বন্ধু এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে হইহুল্লোড়ে মেতে থাকার মধ্যেও আনন্দলাভ ঘটে, হৃদয় আলোকিত হয়। কিংবা পরিবারে পজিটিভ ভাইব্স বা খুশির আবহকে তীব্র রূপ দিতে হলে, পরিবারের সবাইকে সঙ্গে নিয়ে সমাজসেবার মাধ্যমে আরও বৃহত্তর অর্থে পজিটিভ ভাইব্স আনা যায়। যেমন ধরুন কারওর জন্য সময়দান কিংবা শিক্ষাদান। এই দুটি বিষয় ছাড়াও রয়েছে অন্নদান, বস্ত্রদান এবং আর্থিক সাহায্যের বিষয়টি। অর্থাৎ অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে নিজেকে খুশি রাখার উদ্যোগ। আপনার সামর্থ্য মতো কিছু নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস তুলে দিতে পারেন গরিব মানুষের হাতে। কিংবা অসুস্থ মানুষের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেওয়া অথবা নিঃসঙ্গ বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের সঙ্গে গল্প-আড্ডা, খাওয়াদাওয়ার মাধ্যমেও খুশির আবহ তৈরি করা যায়। অর্থাৎ আত্মকেন্দ্রিক হয়ে না থেকে, সর্বজনীন সামাজিক দায়িত্ব পালন করে নিজের পরিবারে পজিটিভ ভাইব্স নিয়ে আসুন।
গুরুত্বের বিচার : গুরুত্ব অনুযায়ী কাজের তালিকা তৈরি করুন। কারণ, সঠিক গুরুত্ব মানেই সঠিক সাফল্য। এতে বাজে কাজে সময় নষ্ট হবে না। আপনার জীবনের উপযোগী এবং লাভজনক কাজগুলিকে তালিকার শীর্ষে রাখুন। ঠান্ডা মাথায় নিজের কাজের গুরুত্ব নিজেই বিচার করুন। এর ফলে সাফল্য এবং আনন্দ দুই-ই বজায় থাকবে। আর আনন্দ বজায় থাকলেই পজিটিভ ভাইব্সও থাকবে পরিবারে।
স্বাস্থ্য সচেতনতা : মনে রাখবেন, স্বাস্থ্যই সম্পদ। শরীর স্বাস্থ্যের যত্ন না নিলে, একসময় সব আনন্দ এবং ধনসম্পদ নষ্ট হবে। তাই প্রতিদিন নিয়ম করে পরিবারের প্রত্যেকে শরীরচর্চা করুন। খাদ্যতালিকায় রাখুন শাকসবজি এবং ফল। পান করুন পর্যাপ্ত জল। আর উৎসবে কিংবা অন্য সময় যতটা সম্ভব ফাস্ট ফুড থেকে সরিয়ে রাখুন নিজেকে।
কর্মপ্রাধান্য : ভাগ্য নয়, কর্ম পাক প্রাধান্য। মনে রাখবেন, সফল ব্যক্তি ভাগ্যে বিশ্বাস করেন না, কর্মময় জীবনযাপন করেন। তাই, কোনও কাজে সাময়িক বাধা কিংবা প্রতিকূলতা এলে, ভাগ্যকে দোষারোপ করে বসে থাকবেন না। প্রতিকূল পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করুন। কারণ, মনের জোর-ই পারে অসাধ্য সাধন করতে। অতএব সাময়িক বাধা এলে নিরাশ না হয়ে বুদ্ধি এবং পরিশ্রম দিয়ে বাধা কাটিয়ে উঠুন। মনে রাখবেন, ঝড় ওঠে, আবার থেমেও যায়। সমস্যা থাকলে তার সমাধানও আছে। যে-সমস্যার সমাধান নেই, সেটা কোনও সমস্যাই নয়। তাই, বীর সৈনিকের মতো যুদ্ধ করুন সমস্ত অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে এবং খুশির আবহ ফিরিয়ে আনুন পরিবারে।
বাহ্যিক সৌন্দর্য : পরিবারের সবার অন্তর আলোকিত হলে যেমন পরিবারে পজিটিভ ভাইব্স বজায় থাকে, ঠিক তেমনই অন্তরকে আলোকিত করতে হলে বাহ্যিক সৌন্দর্যও বজায় রাখতে হবে। কারণ পরিচ্ছন্নতা এবং সৌন্দর্য দর্শনেও সুখ আছে। অতএব দীপাবলি উপলক্ষ্যে ঘরবাড়ি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং আলোকিত রাখুন। কোথাও যেমন অন্ধকার রাখবেন না, ঠিক তেমনই কোথাও অগোছালো কিংবা নোংরা রাখবেন না। মনে রাখবেন আপনার চারপাশের সৌন্দর্য যেমন আপনার এবং আপনার পরিবারের সবার মন ভালো রাখবে, ঠিক তেমনই অন্যকেও আকর্ষণ করবে। এর ফলে আপনার সুস্থ রুচির পরিচয় বহন করবে এবং খুশির পরিবেশ বজায় থাকবে।