যখন একের পর এক বায়োপিকের ঢল নেমেছে বলিউডে, ঠিক তখনই খুব চাঞ্চল্যকর ভাবে উঠে এসেছে নটী বিনোদিনীর প্রসঙ্গ৷ শ্রীরামকৃষ্ণের আশীর্বাদধন্য এই নটীর প্রয়াণের পরে কয়েক শতাব্দী কেটে গেছে। তার পরেও বাংলা এবং হিন্দি ছবির জগতে তিনি ভীষণ ভাবে প্রাসঙ্গিক। তাঁকে নিয়ে ছবি করার প্রতিযোগিতায় রয়েছেন চার অতি সুখ্যাত পরিচালক। প্রদীপ সরকার, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, শুভ্রজিৎ মিত্র এবং রামকমল মুখোপাধ্যায়।
প্রদীপ সরকারের ছবিতে নটী বিনোদিনী হবেন Kangana Ranaut৷ওদিকে সৃজিত নাকি প্রাথমিক ভাবে তাঁর ছবির নাম দিয়েছিলেন, ‘নটী বিনোদিনী’। সেই ছবির খবর আপাতত ধামাচাপা পড়লেও তাঁর ‘লহ গৌরাঙ্গের নাম রে’ ছবিতে বিনোদিনীর বড়ো ভূমিকা থাকছে। আর এদিকে রামকমল মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় নটী হয়ে উঠবেন রুক্মিণী মৈত্র। বাংলায় আরও একটি ছবি তৈরি হওয়ার কথা ছিল শুভ্রজিৎ মিত্রের নির্দেশনায়, অভিনেত্রী ইশা সাহাকে নটীর চরিত্রে কাস্ট করে– যেটি আপাতত স্থগিত৷
১৮৭৪ সালে, কলকাতার ন্যাশনাল থিয়েটারে ১২ বছর বয়সে গিরিশ চন্দ্র ঘোষের তত্বাবধানে প্রথম মঞ্চাভিনয় নটী বিনোদিনীর। সেই যুগে তাঁর অভিনয় দক্ষতা মুগ্ধ করেছিল দর্শকদের। একের পর এক চরিত্রে তাক লাগিয়েছিলেন বিনোদ। প্রমীলা, সীতা, দ্রৌপদী, রাধা, আয়েশা, কপালকুণ্ডলা চরিত্রে তাঁর অভিনয় ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে রচিত। কিন্তু তাঁর ব্যক্তিগত জীবন ছিল প্রদীপের তলার অন্ধকারের মতোই৷ নানা ওঠাপড়ার সে কাহিনি বড়োই হৃদয় উদ্বেল করে৷ মাত্র ৪১ বছর বয়সে জীবনাবসান হয় তাঁর। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু থিয়েটার, যাত্রা এবং সিনেমাতেও দেখা গেছে নটীর জীবনচরিতের নানা পর্ব৷ প্রশ্নটা হল, ঠিক কী আছে নটীর জীবনগাথায়, যা আজও আকৃষ্ট করে দর্শকদের? সেই কাহিনিতেই কেন আবারও লগ্নি করতে রাজি প্রযোজকরা? কেন বায়োপিক তৈরির সিদ্ধান্ত? উত্তর দেবে ছবিগুলিই৷ শুধু এখন নির্মাণের অপেক্ষা৷
বলিউডকে নানান ধরনের ছবি উপহার দিয়েছেন প্রদীপ সরকার। জানা যাচ্ছে, এই নটী বিনোদিনী ছবিটির চিত্রনাট্য লিখেছেন প্রকাশ কাপাডিয়া। ২০২০ সাল থেকে গুঞ্জনে উঠেছিল ঐশ্বর্য রাই করতে পারেন এই চরিত্র, শেষ পর্যন্ত বাজিটা জিতলেন কঙ্গনা।
একের পর এক অনবদ্য সব বায়োপিক উপহার দিয়েছেন এই অভিনেত্রী৷ ‘থালাইভি’– তে জয় ললিতা, ‘এমারজেন্সি’-তে ইন্দিরা গাঁধি, আর এবার বিনোদিনী৷ বহু ঐতিহাসিক চরিত্রেও দেখা গিয়েছে কঙ্গনা রানাউতকে। ‘মণিকর্ণিকা: দ্য কুইন অফ ঝাঁসি’ ছবিতে রানি লক্ষ্মী বাইয়ের চরিত্রে অভিনয় করার চ্যালেঞ্জটাও গ্রহন করেছিলেন তিনি৷এবার বাংলার এই আইকনের চরিত্রে কেমন মানায় তাঁকে, তা দেখতে আগ্রহী দর্শকরা।
একটি বিবৃতিতে কঙ্গনা জানিয়েছেন, তিনি প্রদীপ সরকারের কাজের অনুরাগী। এই সুযোগটা পেয়ে তিনি ভীষণ খুশি। প্রদীপের সঙ্গে এটা তাঁর প্রথম কাজ হতে চলেছে। অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন তিনি কাজ শুরু করার। সূত্রের খবর, এই ছবির শুটিং হবে কলকাতাতেই। তবে কঙ্গনা ছাড়া এই ছবিতে আর কে কে থাকবেন তা নিয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
এদিকে বাংলায় ‘একটি নটীর উপাখ্যান’ ছবিতে নটির চরিত্রে দেখা যাবে রুক্মিণী মৈত্রকে। রামকমল মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় বিনোদিনী হয়ে উঠবেন রুক্মিণী। তাঁর ফার্স্ট লুক প্রকাশ্যে আসতেই অভিনেত্রীকে নিয়ে শোরগোল পড়েছে নেটদুনিয়ায়। সেই অনুযায়ী, গত দু’বছর ধরে অভিনেত্রী নাকি সমানে নিজেকে ঘষামাজাও করছেন। আলাদা করে নাচের তালিম নিচ্ছেন।
এর আগে ছবির প্রযোজক অরিত্র দাস জানিয়েছিলেন, রামকমল ২০১৯-এ ছবির তৈরির কথা ঘোষণা করেছিলেন। অতিমারির জন্য তা বন্ধ হয়ে যায়। বড়ো বাজেট, বড়ো সেটের পিরিয়ড ড্রামা। খুঁটিনাটি প্রচুর বিষয় থাকবে। তাই পরিচালক অতিমারি নিয়ন্ত্রণে আসার অপেক্ষায় ছিলেন। নটী বিনোদিনীর শ্রীচৈতন্য চরিত্রে অভিনয় খুবই বিখ্যাত। তাই ওই সাজেই পোস্টারে দেখা যেতে পারে রুক্মিণীকে।
দুই নটীর মধ্যে কে মন জয় করে দর্শকের সেটাই দেখার। যদিও কালজয়ী এই জীবন গাথায় কিন্তু আসলে জিতে গেছেন নটী নিজেই৷