( ১ )
আজও পাদ্রিপাড়ার গলি দিয়ে যাওয়া হল না।
ব্যাংক থেকে বেরিয়ে টোটোকে বললাম, লালবাগান। ভেতরে ঢুকতে হবে না, মুখেই নেমে যাব।
টোটো টুনু ঘোষ সরণি দিয়ে চলতে শুরু করল।
আসলে যাওয়া হল না নয়, আমিই তাকে বললাম না। ওই পথে যাওয়া হয়নি কত দিন! প্রায় ষোলো কি আঠেরো বছর। সেই যে ছিয়ানব্বইয়ে মাধ্যমিক দিলাম তারপরই যেন লায়েক হয়ে গেলাম। তখনই সাইকেল কেনা হল, অ্যাটলাস। আমার মানে সব বন্ধুদের পথ গেল বদলে। আমরা আর খানাখন্দ গর্তে ভরা এঁকাবেঁকা সরু পথে হাঁটতেই ভুলে গেলাম।
মাধ্যমিক পাশের পর আমাদের শার্টের রং গেল পালটে। প্যান্টের ডিজাইনও। সাইকেল চালাতে চালাতে উড়ি রং-বেরঙের প্রজাপতির সামনে পাশে কিংবা পেছনে। তারপর সেই রঙিন বিকেল মিলিয়ে যাওয়ার সময়ই রঙিন প্রজাপতি এক একটা গলির মুখে এসে মিলিয়ে যায়।
আমরা আবার আপন পথেই ফিরে আসি বাড়িতে।
সেই সমরকাকুর সাম্রাজ্য। বিশাল মাঠ। বাগান। মন্দির। তিনটে বিরাট বিরাট পুকুর। লোকে টিকিট কেটে মাছ ধরত বাগানের পুকুরে। জেলখানার মতো উঁচু পাঁচিল ঘেরা বাড়ি। অজস্র ঘর। অনেক ঘরে আমরা ঢুকিইনি।
সমরকাকুর দুই মেয়ে সুমিতা আর অমিতা আমাদের সঙ্গেই প্রাইমারিতে পড়ত। ওদের বাড়ির অনুষ্ঠানে আমাদের নিমন্ত্রণ থাকত। বাসব, জয়ন্ত, ডলি, রাইমা, আমি সবাই যেতাম বিকেলবেলায়। বাড়ির উঠোনে ব্যাডমিন্টন, গোল্লাছুট কিংবা চোর-পুলিশ খেলতাম।
সবুজ ঘাসের উপর শুয়ে শুয়ে দেখতাম পাঁচিলের ধারে কত হলুদ কলকে ফুল ফুটেছে। আকাশের অনেক উঁচু দিয়ে উড়ে যেত জেট প্লেন। বিস্ময়ে দেখতাম সরু ধোঁয়ার রেখা ক্রমশ চওড়া হচ্ছে। ডলিও বুকে হাত রেখে আমার পাশে শুয়ে বলত দেখেছিস, কী সুন্দর চাঁপাফুল ফুটেছে? দাঁড়া কুড়িয়ে আনি।
ফ্রকের কোঁচড়ে করে আট-দশটা কাঠচাঁপা এনে হাঁটু মুড়ে পাশে বসে আমার নাকের সামনে ঘোরাত। রাইমা, সঞ্জনা, বাসব সবাই ছুটে আসত। ফুলের গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে আমি অবাক হয়ে দেখতাম কেমন নিঃশব্দে মিলিয়ে যাচ্ছে জেট প্লেনের ধোঁয়াটা।