একটা প্রবাদবাক্য আছে ইংরেজিতে, এভরি ক্রাইসিস কাম উইথ অ্যান অপারচুনিটি। মানে প্রতিটি সংকটের মুহূর্তই একটা সুযোগ সঙ্গে নিয়ে আসে। করোনার দীর্ঘকালীন চলতে থাকা সংকট বিশেষ ধরনের কাজ এবং ব্যাবসার সুযোগ করে দিয়েছে যেগুলি কিনা এডুকেশন, আইটি, টেকনোলজির সঙ্গে যুক্ত। এখন যুগ হল ভার্চুয়াল, ডিজিটালের। লকডাউনে মানুষ গৃহবন্দি অবস্থায় দিন কাটিয়েছে ফলে সফটওয্যার, আইটি, অনলাইন, ভার্চুয়াল এডুকেশন, অ্যাপ্লিকেশনস, এসবের চাহিদা বেড়েছে। জুম রাতারাতি কোটি কোটি মানুষের বিশ্বস্ত অ্যাপ্লিকেশনে পরিণত হয়েছে। Earning from Home-এ সবথেকে সুবিধা হয়েছে মহিলাদের। যারা বাইরে চাকরি করেন তাদের জন্য সংসার সামলানো কঠিন হতো কিন্তু এই সুযোগ আসাতে, সংসার সামলেও তাঁরা অফিসের কাজ করতে পারছেন ইন্টারনেটের সুবিধা নিয়ে, তাও আবার বাড়িতে বসেই।

৪০-৪৫ বছর বয়সি বহু মহিলারাও আছেন যারা শুধু এতদিন সংসার সামলেছেন, সন্তানদের উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে নিজেদের সখ-আহ্লাদ সব বিসর্জন দিয়েছেন। আজ নিজ নিজ পেশায় যখন সন্তানরা প্রতিষ্ঠিত তখন নতুন করে নিজের ইচ্ছাপূরণের সময় এসেছে তাদের কাছে। কেউ হয়তো অ্যাকাডেমিকস-এ ভালো ছিলেন, কারও-বা গানবাজনার মতো শখ থেকে থাকতে পারে, কেউ ভালো ডান্সার হতে পারতেন। কেউ অর্থনীতির সমস্যা সহজে সমাধান করার ক্ষমতা রাখেন আবার কেউ হয়তো যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অনলাইন, ইন্টারনেট ইত্যাদিতে বেশ দক্ষ হয়ে উঠেছেন। তবে দেরি কেন? এইসমস্ত গুণগুলোকে কাজে লাগিয়ে বাড়ি বসেই করুন উপার্জন। কে বলতে পারে আজ এই ৫০০-১০০০-এর গণ্ডিটাই একদিন লক্ষ কিংবা কোটিতে পৌঁছবে না? হতে পারে, কোনও দিন আপনি চাকরি করেননি। তাতে কী-ই বা এসে যায়। আজ এই সুযোগ হাতছাড়া করবেন না।

কেরিয়ার কাউন্সেলিং : বহু বাচ্চা দশম শ্রেণি পাশ করার পর সিদ্ধান্ত নিতে পারে না কোন স্ট্রিম বাছলে তার জন্য ভালো। এরকম দ্বাদশ শ্রেণির পরেও বহু শিক্ষার্থী কী কেরিয়ার বাছবে বুঝতে পারে না। অনেক ক্ষেত্রে অভিভাবকদেরও দোষ থাকে বাচ্চার উপর নিজেদের পছন্দ চাপিয়ে দেওয়ার। এতে সন্তানের নিজের প্রতিভা চাপা পড়ে যায় এবং ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণে কেরিয়ারেও সে সাফল্য লাভ করে না। এই পরিস্থিতিতে কেরিয়ার কাউন্সেলিং খুব সাহায্য করে। বাচ্চার সঙ্গে কথা বলে বাচ্চার রুচি সম্পর্কে জানা যায় এবং কোথায় ওর সমস্যা রয়েছে সেটা বুঝে নিয়ে কোন দিশায় কেরিয়ার এগিয়ে নিয়ে গেলে সে সাফল্য পাবে, কাউন্সিলের সেটা বলতে পারেন। এতে বাচ্চা সহজে কেরিয়ার বেছে নিতে পারে এবং কেরিয়ারে সাফল্য পাওয়ার সুযোগও বেড়ে যায়।

করোনার কারণে বাচ্চারা দুবছর বাড়িতে বন্দি থেকেছে। স্কুলের পরিবেশের সঙ্গে পরিচিত হতে না পারার অবসাদ বাচ্চাদের মনে প্রভাব ফেলেছে। বাচ্চারা আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভুগছে। যাদের কেরিয়ার বাছার সময় তাদের প্রতি পদে বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে, ফলে মনোবল শূন্যে ঠেকেছে। কেরিয়ার কাউন্সেলরের মাধ্যমে এই সমস্যা দূর করা সম্ভব। পড়ুয়াদের সাইকোলজি বোঝার এবং তাকে সঠিক রাস্তায় গাইড করার গুণ যদি আপনার মধ্যে থাকে তাহলে অবশ্যই এই পেশায় থেকে উপার্জন করা সম্ভব হবে আপনার। পেরেন্ট এবং বাচ্চাকে গাইড করা এক্ষেত্রে আপনার দায়িত্ব।

ফিটনেস ট্রেনিং : অধিকাংশ লোক এখন স্বাস্থ্য সম্পর্কে অত্যন্ত সজাগ এবং সচেতন। তাই তাদের জীবনের সঙ্গে জিম, যোগা, অ্যারোবিক্স, জুম্বা ইত্যাদি অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত। কিন্তু করোনার কারণে ফিটনেসের উপর অবস্থা বেহাল। আপনার যদি এই লাইনে পারদর্শিতা থাকে তাহলে জুম মিট-এর মতো অ্যাপস-এর সাহায্যে বাড়িতে বসেই ফিটনেস ট্রেনিং দিতে পারেন। দিন, ঘন্টা বা কোর্স হিসেবে নিজের ফিজ আপনি ঠিক করতে পারেন। এতে আপনি নিজেও ফিট থাকতে পারবেন।

কম্পিটেটিভ পরীক্ষার জন্য তৈরি করা : কোচিং ক্লাসের চাহিদা বরাবরই রয়েছে। কিন্তু করোনার কারণে লকডাউন হওয়াতে এই ব্যাবসায় কিছুটা হলেও মন্দা দেখা দিয়েছিল। আমাদের সকলেরই জানা, বিভিন্ন কম্পিটেটিভ পরীক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদের তৈরি করার যে-ইন্সটিটিউটগুলি চারিদিকে ছড়িয়ে রয়েছে, তাদের ব্যাবসা আজ ফুলে ফেঁপে অনেক এগিয়ে গেছে। কিন্তু এই অতিমারির প্রভাবের ফলে অভিভাবক এবং বাচ্চা উভয়ের কোচিং ক্লসের ভিড় যতটা সম্ভব এখনও এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তাই বলে পরীক্ষার জন্য নিজেকে তৈরি করায় কেউ পিছিয়ে নেই। জয়েন্টের পরীক্ষা, ইউপিএসসি-এর পরীক্ষা, ব্যাংকিং সেক্টরের পরীক্ষা, মেডিকেল-এর এনট্র‌্যান্স পরীক্ষা সবকিছুর জন্যই পড়াশোনা করে তৈরি হওয়ার দরকার। এর মধ্যে কোনও একটা ফিল্ডে কোচিং দেওয়ার যদি আপনার ক্ষমতা থাকে, তাহলে অনলাইন এনট্র‌্যান্স কোচিং দিয়ে বাড়িতে বসেই ঘন্টার হিসেবে ভালো উপার্জন করতে পারবেন।

ব্যাবসার কোচিং : নিজের ব্যাবসা শুরু করতে হলে প্রথমেই ব্যাবসার আঁটঘাট সব ভালো করে জানতে হবে। নিজে যদি সিদ্ধান্ত নিতে অসুবিধা বোধ করেন, তাহলে বিজনেস ট্রেনারের সাহায্য নিতে পারেন। কী ধরনের ব্যাবসায় আপনি লাভবান হতে পারবেন, নিজের কাস্টমার্সদের কাছে কীভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠবেন এসব ছোটো ছোটো প্রয়োজনীয় টিপ্স ট্রেনারই আপনাকে দিয়ে দেবে। যদি আপনার নিজের, ব্যাবসা এবং মার্কেট সম্পর্কে ভালো জ্ঞান থেকে থাকে, ব্যাবসা করতে ইচ্ছুক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জেনে নিতে পারেন তার কী ধরনের ব্যাবসা করার ইচ্ছে আছে। আপনি যেহেতু মার্কেট সম্পর্কে ওয়াকিবহাল, আপনি ওই ব্যক্তিকে পরামর্শ দিতে পারেন যে ওই ব্যাবসায় সে লাভবান হতে পারবে কিনা বা কতটা সাফল্য পাওয়ার আশা আছে তার। মার্কেটে কীসের সব থেকে বেশি ডিমান্ড চলছে সেটাও তাকে গাইড করতে পারেন। এই ধরনের অনলাইন বিজনেস কোচিং দিয়ে ভালো উপার্জনের রাস্তা করতে পারেন।

অনলাইন ব্যাবসা শুরু করতে হলে

  • এই ব্যাবসা শুরু করতে সোশ্যাল মিডিয়া যেমন হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুকের সাহায্যে নিজের পরিচিত ব্যক্তিদের কাছে এই খবরটা পেঁছে দিন। তাদের অনুরোধ করুন আপনার এই ব্যাবসা শুরু করার খবরটা তাদের পরিচিতদের কাছে ফরওয়ার্ড করতে, যাতে আপনি ভালো রেসপন্স পান। এর ফলে আপনি বন্ধু, আত্মীয়, প্রতিবেশী থেকে শুরু করে অজানা ব্যক্তিদের কাছেও পৌঁছে যাওয়ার সুযোগ পাবেন
  • ৩-৪টি ফ্রি ক্লাস করান যাতে শিক্ষার্থীরাও আপনার জ্ঞানের ভাণ্ডার এবং পড়াবার ক্ষমতার একটা ছবি মনের মধ্যে এঁকে নিতে পারেন
  • যথাযথ ফিজ রাখবেন। নিজের পরিশ্রমের সঠিক মূল্য কী হবে আগেই সিদ্ধান্ত নেবেন
  • যে-বিষয়ে কোচিং দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেবেন সেটার সম্পূর্ণ জ্ঞান আপনার থাকা দরকার। প্রতিটা ক্লাসে কী পড়াবেন তা আগে থেকেই ঠিক করে রাখতে হবে, যাতে বিষয়টি সম্পর্কে অর্ধেক জেনেই স্টুডেন্টদের সামনে আপনাকে হাজির না হতে হয়
  • যে-ঘরে বসে কাজ করবেন তার ইন্টিরিয়র-এর সম্পূর্ণ খেয়াল রাখুন যাতে ব্যাকগ্রাউন্ড দেখতে ভালো লাগে
  • ভালো ভাবে আগে রিসার্চ করুন যাতে ব্যাবসায় সাফল্য পান
  • Earning from Home বাড়াবার জন্য অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে মার্কেটিং করুন।

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...