২০১২ সালে মুক্তি পেয়েছিল রিংগো বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচালিত ছবি ‘ন হন্যতে’। এই ছবিতে অভিনয় করে কেরিয়ার শুরু করেছিলেন সায়নি দত্ত। কেন্দ্রীয় দুই নারী চরিত্রের মধ্যে একটিতে অভিনয় করেছিলেন রূপা গঙ্গোপাধ্যায় এবং অন্যটিতে সায়নি। রূপার পাশাপাশি, তাঁর মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করে সায়নিও কিছুটা জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন এই ছবিটির মাধ্যমে। এই সুবাদে রিংগো তাঁর পরবর্তী ছবি ‘সাদা কালো আবছা’-তেও অভিনয়ের সুযোগ দিয়েছিলেন সায়নিকে। ছবিটিতে প্রথমে সায়নিকে দেখা গিয়েছিল এক গ্রাম্য মেয়ের  চরিত্রে এবং পরে এক বার ডান্সার-এর চরিত্রে।

সায়নি অভিনীত সাদা কালো আবছা ছবিটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবেও জায়গা করে নিয়েছিল। তাই, সায়নির অভিনয়-সফরের পথ অনেকটাই মসৃণ হয়ে গিয়েছিল সূচনাপর্বে। রিংগো আবারও সায়নিকে কাস্ট করেছিলেন তাঁর ‘এক যে আছে শহর’ ছবিতে। এভাবেই ধীরে ধীরে টলিউডে নিজের পায়ের নীচের মাটি শক্ত করেছিলেন সায়নি।

এখনও পর্যন্ত ১১টি বাংলা ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। প্রতিটি ছবিতেই দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সমর্থ হয়েছেন এই অভিনেত্রী। কিন্তু এখন তিনি বলিউডে মনোনিবেশ করেছেন। গত বছরই ওটিটি প্ল্যাটফর্ম জি-৫-এ মুক্তি পেয়েছিল সায়নি অভিনীত ছবি ‘দ্য ওয়াইফ’। সরমদ খান পরিচালিত এই ছবিতে গুরমিত চৌধুরির বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন সায়নি। সম্প্রতি গৃহশোভার প্রতিনিধিকে সায়নি জানালেন তাঁর অভিনয় সফরের কাহিনি।

অভিনেত্রী হওয়ার আগে সহকারী পরিচালক হিসাবে কাজ করেছিলেন। পরিচালনার বদলে অভিনয়ে সিদ্ধান্ত কেন?

দেখুন, আমি সবসময়ই ভালো কাজ করতে চেয়েছি। স্কুল-কলেজে অনেক নাটকে অভিনয় করেছি। মমতা শঙ্করের কাছে নাচ শিখেছি। কিন্তু অভিনয়ের জগতে কীভাবে এগিয়ে যেতে হবে, তা জানা ছিল না। এরপর হঠাৎ-ই আমার পরিচয় হয় প্রখ্যাত মঞ্চাভিনেত্রী সোহাগ সেন-এর সঙ্গে। ওঁর থেকে আমি অনেক কিছুই শিখেছি। উনিই আমাকে অভিনয়ের আগে সহকারী পরিচালক হিসাবে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। ওঁর পরামর্শ মেনে কাজ করে আমি উপকৃত হয়েছি।

সোহাগ সেন-ই আমাকে এক নির্দেশকের কাছে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু দুঃখের বিষয়, যে-ছবিতে আমি প্রথম সহকারী পরিচালক হিসাবে কাজ করেছি, সেই ছবিটি আজও মুক্তি পায়নি। ওই পরিচালক দ্বিতীয় কোনও ছবিও তৈরি করতে পারেননি। কিন্তু তা সত্ত্বেও বলব, তাঁর কাছ থেকে আমি অনেক কিছুই শিখেছি।

৭-৮ বছরের অ্যাক্টিং কেরিয়ারের অভিজ্ঞতা কেমন?

গত ৭-৮ বছরে আমি অনেক কিছুই শিখেছি। আর ওই অভিজ্ঞতাকে পাথেয় করে বলিউডে কেরিয়ার গড়তে এসেছি। আমি মনে করি, গত কয়েক বছরে নিশ্চয়ই ভালো কাজ করে দেখাতে পেরেছি, তাই হয়তো বলিউডে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। প্রতিটি ছবিতেই ভিন্ন ধরনের চরিত্রে অভিনয় করে অভিনেত্রী হিসাবে নিজেকে মজবুত করতে সমর্থ হয়েছি। এই সুবাদেই হয়তো আমি হিন্দি ছবি ‘দ্য ওয়াইফ’-এ অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছি। তবে যাই করি না কেন, আমার কেরিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট ছিল আমার প্রথম বাংলা ছবি ‘ন হন্যতে’। ওই সময় রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো প্রখ্যাত অভিনেত্রীর সহশিল্পী হিসাবে অভিনয় করে আমিও পরিচিতি পাই সিনেমাপ্রেমীদের কাছে।

হিন্দি হরর ফিল্ম ‘দ্য ওয়াইফ’-এ অভিনয় করার বিশেষ কোনও কারণ ছিল কী?

সত্যি বলতে কী, অনেকদিন ধরেই হিন্দি ছবিতে অভিনয়ের প্রবল ইচ্ছে ছিল মনে। অবশ্য শুধু হিন্দি ছবিই নয়, যদি ইংরেজি বা ফ্রেঞ্চ ভাষার ছবিতে অভিনয় করার সুযোগ পাই, তাও করব। কারণ, বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির থেকে অনেক বড়ো ইন্ডাস্ট্রি বলিউড এবং হলিউড। আসলে আঞ্চলিক ক্ষেত্র থেকে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে নিজের প্রতিভা প্রদর্শন করতে চেয়েছি আমি। তাই এখন হিন্দি ছবিতে অভিনয় করতে শুরু করেছি। হয়তো, হিন্দি ছবি নতুন করে পরিচয় করাবে আমাকে।

কিন্তু শোনা যাচ্ছে, ‘দ্য ওয়াইফ’ ছবিটি নাকি সেভাবে দর্শকচিত্ত জয় করতে পারেনি। কী বলবেন এই প্রসঙ্গে?

দেখুন, এই ছবিতে আর্যা নামে এক নারী চরিত্রে অভিনয় করেছি আমি। চরিত্রটি দারুণ! একেবারে ভিন্ন ধারার। ছবিটি হয়তো কিছুটা ধীরগতির। এটা তো পরিচালকের নিজস্ব শৈলী কিন্তু আমার চরিত্রটি দর্শকচিত্ত জয় করেছে। অনেক প্রশংসা এবং উৎসাহ পেয়েছি। শুধু তাই নয়, এই ছবিতে অভিনয় করার পরই আমি নতুন আরও একটি হিন্দি ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছি।

প্রেক্ষাগৃহের পরিবর্তে ওটিটি-তে প্রদর্শিত হয়েছে আপনার হিন্দি ডেবিউ ফিল্ম ‘দ্য ওয়াইফ’। কতটা সন্তুষ্ট আপনি?

সিনেমা হল ছাড়া ছবি রিলিজ করব না, এমন যদি জেদ ধরে থাকতেন প্রযোজক-পরিচালক, তাহলে হয়তো ওটিটি-তে রিলিজ করার সুযোগও হাতছাড়া হয়ে যেত। এই ভুল করে এখন অনেকেই ছবি রিলিজ করতে পারছেন না। ছবিটি সিনেমা হলে মুক্তি পেলে হয়তো আরও ভালো লাগত। কিন্তু কী আর করা যাবে, কোভিড সবকিছু বদলে দিয়েছে।

বাঙালি হয়ে আপনি ভালো হিন্দি বলেন। কোথাও শিখেছেন হিন্দি?

কলকাতায় আমার বেশিরভাগ বন্ধুই বাঙালি। তবে কিছু অবাঙালি বন্ধুবান্ধবও আছে। আমি ছোটো থেকে ওই অবাঙালিদের সঙ্গে হিন্দিতে কথা বলতে বলতে হিন্দি ভাষাটা রপ্ত করতে পেরেছি। আসলে আমার বাড়িতে শুধু বাংলা এবং ইংরেজি ভাষাতে কথা হয়। কারণ আমার মা ইংরেজি সাহিত্যের শিক্ষিকা। তাই হিন্দি শিখতে হয়েছে খুব কষ্ট করে।

এমন স্বপ্নের চরিত্র আছে, যে-চরিত্রে অভিনয় করতে পারলে আপনি খুশি হবেন?

খুব ব্যক্তিত্বময়ী পুলিশ অফিসারের চরিত্রে অভিনয় করতে চাই। এছাড়া আমার একটি পছন্দের ছবি ‘হম দিল দে চুকে সনম’। এই ছবিতে ঐশ্বর্য রাই বচ্চন যে-চরিত্রে অভিনয় করেছেন, সেই চরিত্রটিতে অভিনয় করতে চাই। আমি মনে করি, ওই চরিত্রটি খুব চ্যালেঞ্জিং।

বাংলা ছবিতেও অনেক চ্যালেঞ্জিং নারী চরিত্র আছে। এমন কোনও বাংলা ছবির নারী চরিত্র আছে, যা হিন্দিতে তৈরি হলে আপনি অভিনয় করতে চাইবেন?

ঠিকই বলেছেন, বাংলা ছবিতে এমন অনেক নারী চরিত্র আছে, যা খুবই চ্যালেঞ্জিং। তবে, বাঙালি হয়ে আমি চাইব না, ওই ছবিগুলির রিমেক হোক হিন্দিতে। কারণ, বাংলার একটা নিজস্ব ধারা আছে, যা অন্য ভাষাতে রূপান্তির হলে ভালো লাগবে না।

বাঙালি হিসাবে আপনি কাদের জন্য গর্ব অনুভব করেন?

প্রতিভা এবং মনুষত্বের জন্য যে-বাঙালিরা জাতীর মান উন্নত করেছেন, তাঁদের প্রত্যেকের জন্য আমি গর্বিত, বাঙালি হিসাবে।

অভিনয় এবং কত্থক নাচ ছাড়া আর কী কী শখ আছে আপনার?

ছোটোবেলা থেকেই ছবি আঁকার শখ আছে আমার। অবসর পেলেই ছবি আঁকি। অনেক প্রশংসাও পেয়েছি ছবি এঁকে। আর এই অনুপ্রেরণা থেকে যখন কোনও কিছু দেখে আমার মনে গেঁথে যায়, সুযোগ পেলেই তা ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলি। আসলে আমি মনে করি, নাচ, গান, অভিনয়, ছবি আঁকা এ সবই তো আসলে অনুভবের বহিঃপ্রকাশ।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...