গত ২ দশক ধরে ফোটোগ্রাফি ও ভিডিয়োগ্রাফির কারিগরিতে প্রভূত উন্নতি ঘটেছে। কিন্তু সেই উন্নতির অপপ্রয়োগও ক্রমাগত বাড়ছে। ভিডিয়ো তৈরি করে কারও রাজনৈতিক কেরিয়ারে কলঙ্কের দাগ লাগানো এখন যতটা সহজ, ততটাই সহজ কারও চরিত্র হনন করা। ক্ষমতায় থাকা মানুষজন রাজনৈতিক ভাবে এর যথেষ্ট ফায়দা লুঠছেন। হিন্দু-মুসলিম বিদ্বেষ তৈরি করেই হোক কিংবা গোষ্ঠিদ্বন্দ্ব, সবেতেই ব্যবহার করা হচ্ছে এই ভিডিয়োগুলো। অধিকাংশই যা বিকৃত ভাবে উপস্থাপন করা হয় টেকনোলজির সাহায্যে।
এইসব ফোটো ও ভিডিয়োকে লোক সমক্ষে আনার এখন সহজতর উপায় হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া। এর ফলে যে-কোনও মানুষ যেমন রাতারাতি বিখ্যাত হতে পারেন, আবার এক রাতেই তার ভাবমূর্তিকে কালিমালিপ্তও করে দেওয়া যায় জাল ভিডিয়োর সাহায্যে।
এই টেকনোলজির অপব্যবহারের সবচেয়ে বড়ো শিকার এখন মহিলারা। দেশের নানাপ্রান্তে ঘটছে এমন নানা ঘটনা যা তাদের সম্ভ্রমকে ধুলোয় মিশিয়ে দিচ্ছে। সম্প্রতি দিল্লির গাজিয়াবাদের এক টেক্সটাইল কোম্পানির নামি অফিসারের স্ত্রীয়ের মুখ, একটি নগ্ন মহিলার ভিডিয়োর সঙ্গে কারিগরির সাহায্যে যুক্ত করে দেওয়া হয়। তারপর ওই অফিসারের নম্বর-সহ তাঁর পরিচিতের কাছে ফোনের সাহায্যে পৌঁছে দেওয়া হয় ওই অশ্লীল ভিডিয়ো। এই লোকলজ্জা থেকে বাঁচতে ভদ্রলোককে ৫ লক্ষ টাকা দিতে হয় দুষ্কৃতকারীদের। জানা যায়, তাঁর স্ত্রী বস্তুত নিজের খারাপ হয়ে যাওয়া মোবাইলটি কোনও দোকানে সারানোর জন্য দিয়েছিলেন, সেখান থেকে ডেটা কপি করে বাধানো হয়েছে এই বিপত্তি।
আসলে আমরা কেউই সুরক্ষিত নই এই অন্তর্জালের দুনিয়ায়। কার মুখ কার নগ্ন শরীরে বসিয়ে ভিডিয়ো ভাইরাল করে দেওয়া হবে তা কোনও নারীই জানেন না। আসলে দেশের কারিগরিকে উন্নত করা হয়েছিল একটি সাধু উদ্যোগ নিয়ে আর এখন তার সম্পূর্ণ অপপ্রয়োগ ঘটছে।
কারিগরি উন্নতির আর কত মাশুল আমাদের দিতে হবে জানা নেই। তবে এর সবচেয়ে বড়ো ক্ষতি যে মহিলাদেরই হচ্ছে, এতে কোনও সন্দেহ নেই। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে অপরাধী চিহ্নিত করতে হবে আর শাস্তির ব্যবস্থাও করতে হবে কঠোরতর।