নিরন্তর ধর্মপ্রচারের ফল হল সমস্ত দেশে হিন্দু রিলিজিয়াস টুরিজম-এর প্রচার ও প্রসার। চারধাম যাত্রা, কাশি করিডোর, তিরুপতি, বৈষ্ণোদেবী তো আছেই, সেই সঙ্গে প্রচুর অখ্যাত দেবদেবীর দোরেও বেশ ভিড় বাড়ছে। ঝাড়খণ্ডের দেওঘরে রোপওয়ে দুর্ঘটনা, এমন এক ভিড়ের ফল, যেখানে পূণ্যার্থী টানার জন্যই ব্যবহার করা হয়েছিল রোপওয়েগুলি।
এমনই ভক্তের ভিড় লেগে থাকত দেওঘরে যে, রোপওয়ে ট্রলিগুলি সারানোর পর্যন্ত ফুরসত পাওয়া যায়নি। বহু মানুষের প্রাণ চলে গেল এই অসতর্কতার ফলে।
আমাদের দেশে ধর্মপ্রচার এতই জোরদার ভাবে করা হয় যে, পর্যটন ও তীর্থ এখন সমার্থক হয়ে দাঁড়িয়েছে। টেলিভিশনের ভক্তি চ্যানেল, মন্দিরে পান্ডাদের রমরমা সবই পরোক্ষ ভাবে তীর্থযাত্রীর সংখ্যা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে।
দেবদেবীর উপর এই বিশ্বাসই ভারতের আপামর মানুষকে ঘরছাড়া করে তীর্থস্থানে পুণ্যার্জনের জন্য। দানদক্ষিণা, উপবাস, কী করলে যে পাপস্খলন হবে, তা ঠাওর করতে পারে না সাধারণ মানুষ। কখনও ব্যাবসার ডুবে যাওয়া হাল সামলাতে, কখনও সংসারের অশান্তি নিরাময়ের উপায় হিসেবে পুণ্যলোভী মানুষ তীর্থস্থানে ঘুরে বেড়ান।
মহিলাদের লক্ষ্য করেই এইসব তীর্থস্থানের মাহাত্ম্য প্রচার করা হয়। বাড়িতে ঠাকুরঘর থাকা সত্ত্বেও বৃহত্তর পুণ্যার্জনই যখন উদ্দেশ্য হয়ে ওঠে তখনই হয় পান্ডা-পুরোহিতদের পোয়াবারো। সাধারণ ধর্মভীরু মানুষদের পকেট থেকে অর্থ বের করে নেওয়ায় এইসব মানুষগুলো সিদ্ধহস্ত।
ক্রিশ্চানরা রবিবার আর কোনও কাজ করুন বা না করুন চার্চে যাওয়াটা বাধ্যতামূলক। পাদরির ধর্মপ্রচার ও ভাষণের টানে সকলেই হাজির হন চার্চে। আমেরিকাতেও আজ বর্ণবিদ্বেষ, বিত্তবান ও গরিবদের মধ্যেকার ফারাক বড়ো প্রকট। অর্থাৎ কিনা কোনও ধর্ম এই ভেদাভেদ মোটেই দূর করতে পারেনি। এদিকে রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের বলি কিছু ধর্মান্ধদের সেন্টিমেন্ট-কে কাজে লাগানো হয়েছে বৃহত্তর স্বার্থসিদ্ধির জন্য।
আবার আফগানিস্তানে ইসলামি প্রচারতন্ত্রের বোঝা চেপেছে সেখানকার মহিলাদের কাঁধে। শ্রীলংকার বৌদ্ধ-সিংহলি বনাম হিন্দু-তামিলদের বিদ্বেষ যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। অতিরিক্ত ধর্মের বশবর্তী হয়ে ওঠার ফল এখন মহিলাদের বিশ্বের সর্বত্র ভোগ করতে হচ্ছে। নবরাত্রিতে মহিলাদের বিশেষ ব্যঞ্জন প্রস্তুত করতে হিমসিম খেতে হবে এও যেমন পূর্বনির্ধারিত, তেমনই মন্দিরে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে দেব-দেবী দর্শনের জন্য, এও তাদের ভবিতব্য।