আমেরিকার পাদরি, প্রিস্ট, বিশপ প্রমুখের তুলনায় ভারতের গুরু, স্বামী, ধর্মাচার্য, মহন্ত, পণ্ডিত কিংবা পূজারিরা অনেক ভালো আছেন। ভারতেও হয়তো যৌন নিগ্রহের ঘটনা ঘটে কিন্তু দক্ষিণ আমেরিকার চার্চ-এর পাদরি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ এখন চরমে উঠেছে। ২০০০ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রায় ৭০০ পাদরির বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহের ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে এবং এই তালিকা আরও দীর্ঘায়িত হতে দেখা যাচ্ছে। আর বিগত কয়েক বছরে এই তালিকায় বারবার যুক্ত হতে দেখা গেছে সাউদার্ন ব্যাপটিস্ট কনভেনশন চার্চ-এর নাম। তবে এই ঘটনা জনসমক্ষে যাতে না আসে, সেই চেষ্টাও করা হচ্ছে যাজক মহলে।
২০২২ সালে এই যৌন নিগ্রহের রিপোর্ট জনসমক্ষে আসে টিভির মাধ্যমে৷ এরপর চার্চ-এর পক্ষ থেকে কুকীর্তি ধামা চাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয় । চার্চ-এর পক্ষ থেকে নিপীড়িতাদের ন্যায় বিচার পাইয়ে দেওয়ার অঙ্গীকার করা হয়েছে।
চার্চ, গুরুদুয়ারা, মঠ কিংবা মন্দির সবকিছুরই পিছনে আসলে এক অশুভ শক্তি নেতৃত্ব দেয়। আর ওই অশুভ শক্তি আলাদা আলাদা ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠীকেন্দ্রিক এবং এরা ক্ষমতা প্রয়োগ করে অসাধু উপায়ে প্রচুর অর্থ-সম্পত্তির মালিক হয়। সবচেয়ে মজার কথা হল এইসব ধর্মস্থান ঈশ্বর চালিত করেন না, চলে টাকার জোরে এবং ওই অর্থ উপার্জন করা হয় ভক্তের দান-দক্ষিণা থেকে। শুধু তাই নয়, চার্চ কিংবা যে-কোনও ধর্মস্থানে আবাসিক মহিলা ভক্তদের নিজস্ব সম্পত্তি ভেবে তাদের সঙ্গে যৌনক্রিয়া চলে প্রায় ক্ষমতাবলে। ক্যালিফোর্নিয়ার চার্চের প্রায় ৭০০ পাদরির বিরুদ্ধে যৌনহেনস্থার অভিযোগ উঠেছে ইতিমধ্যেই।
ভারতে ধর্মের দোকানদাররা যৌন নিগ্রহের অভিযোগ থেকে গা বাঁচিয়ে থাকেন কিছু ক্ষমতাবানের প্রশ্রয়ে। আশারাম বাপু অবশ্য শাস্তি পেয়েছেন কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ধর্মগুরুদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ বেশিদূর গড়ায় না। মামলা যদি আদালত পর্যন্ত যায়ও, তাহলেও বিচারক ধর্ম-অদর্ম, পাপ-পুণ্যের কথা ভেবে ঘাবড়ে যান এবং মামলার শুনানি পিছোতে থাকে কিংবা উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে মামলা বন্ধ করে দেন।
ধর্ম-ব্যবসায়ীরা ভক্তদের ঈশ্বরের কোপে পড়ার ভয় দেখিয়ে এমনভাবেই আচ্ছন্ন করে রাখে যে, ভক্তরা অপরাধীদের বিরুদ্ধে লড়ার মানসিক শক্তি হারিয়ে ফেলে। শুধু তাই নয়– কোনও কোনও ভক্ত তো গুরুকে ভগবানের প্রতিনিধি ভেবে সব আবদার মেনে নেয় অসহায় ভাবে।
ভক্তদের এভাবেই মগজধোলাই করা হয় যে, পুণ্যার্জন করতে হলে তোমার শরীর, মন, অর্থ- সবই সমর্পণ করতে হবে ঈশ্বরের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে। এর ফলস্বরূপ ঈশ্বরে অন্ধবিশ্বাসী ভক্তদের ধারণা হয়, বাস্তবের আইন-আদালত নয়, অপরাধীর বিরুদ্ধে ঈশ্বরের আদালতে অভিযোগ জানালে ন্যায়বিচার পাওয়া যাবে, অপরাধী শাস্তি পাবে। আর ভক্তদের মনে এই ধ্যান-ধারণা জাগিয়ে নির্দ্বিধায় অপরাধ-কর্ম সম্পন্ন করে চলেছেন বিশ্বব্যাপী বকধার্মিকরা।