মেক ইন ইন্ডিয়ার অধীনে নির্মিত নৌকা তারিণী-তে চড়ে ৬ জন মহিলা অফিসার একটি সাহসী অভিযান চালিয়েছিলেন। আইএনএস নৌকায় যাত্রা শুরুর সেই দিনটি ছিল ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭। অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন ঐশ্বর্য রাই, এস বিজয়া, বর্তিকা জোশী, প্রতিভা জামওয়াল, পি স্বাতী এবং পায়েল গুপ্তা। ১৯ মে, ২০১৮ সালে ২১,৬০০ নটিক্যাল মাইল অর্থাৎ ২১৬ হাজার নটিক্যাল মাইল দূরত্ব অতিক্রম করার পর ফিরে এসেছিলেন তাঁরা। এই অভিযানে প্রায় ২৫৪ দিন লেগেছে এবং এর সঙ্গে এই ৬টি নৌবাহিনীর নারী অফিসাররাও ইতিহাসের পাতায় নাম লিখিয়ে নিয়েছেন।
২১ মে, ২০১৮ সালে তাঁরা অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, পোল্যান্ড এবং দক্ষিণে ছিলেন, তারপর আফ্রিকা হয়ে গোয়া পৌঁছেছেন। আসলে তাঁরা পুরুষদের মতো একই চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন এবং সাফল্য পেয়েছেন। এটাই আজকের নারীর পরিবর্তিত চিত্র অর্থাৎ ঝুঁকি নিয়ে এগিয়ে চলা আজ নারীদের মূলমন্ত্র।
ভারত স্বাধীন হওয়ার ৭৫ বছর হয়ে গেছে। স্বাধীনতার সাত দশকেরও বেশি সময় পরে দেশের নারীদের জীবনযাত্রায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। তাদের অবস্থার উন্নতি হয়েছে। তারা অনেক অধিকার পেয়েছেন, অনেক শৃঙ্খল থেকে মুক্তি পেয়েছেন, অনেক ধরনের অধিকারের জন্য লড়াই করেছেন, অনেক জায়গায় সাফল্যের পতাকা তুলেছেন এবং অনেক ক্ষেত্রে তারা পুরুষদের ছাড়িয়ে গিয়েছেন। কিন্তু এটা বলা যায় না যে, এখন তাদের জীবন সম্পূর্ণ জটমুক্ত। এখনও তারা অনেক ক্ষেত্রে নির্যাতনের শিকার। আজও তারা সম্পূর্ণ মর্যাদা পান না, আজও তারা শারীরিক ভাবে লাঞ্ছিত হচ্ছেন এবং আজও তারা ভয়মুক্ত নন। চলুন দেখে নেওয়া যাক এই ৭৫ বছরে নারীদের জীবনে কী ধরনের পরিবর্তন এসেছে।
ইতিবাচক পরিবর্তন: সমাজ ও পরিবারে নারীর মর্যাদায় ধীরে ধীরে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন আসছে।
নারী শিক্ষিত হয়েছে
নিজের অস্তিত্বকে স্বীকৃতি দেওয়া এবং নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করা প্রয়োজন। আসলে, একজন নারীকে শিক্ষিত হতে হবে। নিজের অধিকার জানতে হবে এবং নিজের কর্তব্য পালন করতে হবে ও ভয় না পেয়ে এগিয়ে যেতে হবে। নারীর উন্নয়নে শিক্ষার থাকে সবচেয়ে বড়ো ভূমিকা। স্বাধীনতার পর নারীরা যাতে সমান অধিকার পায় সেই চেষ্টা চলছে এবং এখান থেকেই বদলে যেতে শুরু করেছে পৃথিবী। শিক্ষার কারণে নারীর চেতনা জাগ্রত হয়েছিল। সীমাবদ্ধ এবং প্রাচীন দৃষ্টিকোন থেকে বেরিয়ে এসে নিজের অধিকার সম্পর্কে এখন সচেতন হয়েছেন নারীরা।
পুরুষ শাষিত সমাজে চাকরির জন্য ঘর থেকে বেরিয়েছেন মেয়েরা এবং আজ তারা অনেকটা আর্থিক ভাবে সুরক্ষিত। নারীরা এখন শুধু গৃহিণীর ভূমিকায় নেই, তারা ঘরের বাইরেও নানা ভূমিকায় কর্তৃত্ব করছেন। শুধু তাই নয়, সংসার চালাতে আর্থিক সহযোগিতা করছেন স্বামীকে। তাদের ভিতরে আত্মবিশ্বাসের জন্ম হয়েছে এখন। তারা শুধু স্বামীর উপর ভরসা না করে, নিজেরা আর্থিক ভাবে স্বনির্ভর হয়ে পরিবার, পিতামাতা এবং স্বামীকে আর্থিক ভাবে সহায়তা করতে শুরু করেছেন। যে-নারীরা বেশি শিক্ষিত নয়, তারাও তাদের মেয়েদের ভালো শিক্ষা দিতে শুরু করেছেন। সেইসঙ্গে কিছু একটা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাইছেন। এর একটি ইতিবাচক দিক আছে অবশ্যই।
গত সাত দশকে নারীদের কর্মসংস্থানের হার উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আজ অনেক মহিলা, কোম্পানির সিইও এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর হচ্ছেন, সর্বোচ্চ পদেও বসে আছেন। তারা কেবল পুরুষদের কাঁধ থেকে নয়, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হাঁটছেন।
জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষার সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, শিক্ষা ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মেয়েদের প্রবেশাধিকার ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক দশক আগের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, শিক্ষাক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ ছিল ৫৫.১ শতাংশ যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৮.৪ শতাংশে। অর্থাৎ ১৩ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তিও নারীর জীবনে শিক্ষার মাধ্যম হয়ে উঠেছে। বড়ো বড়ো স্কুল-কলেজ থেকে মেয়েরা ঘরে বসেই পড়াশোনা করছেন। বিশাল অনলাইন কোম্পানিতে যোগদান করে পণ্য বিক্রিও করছেন। নিজের অধিকারের জন্যও সচেতন হচ্ছেন।