স্বাধীনতার ৭৫ বছর অতিক্রম করার পর কী কী ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে মেয়েদের জীবনে. আসুন দেখে নেওয়া যাক৷
নারীরা মন থেকেও স্বাধীন হয়েছেন
নারীরা এখন তাদের নিজের কথা ভাবেন। সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধাও করেন না। অর্থাৎ তারা এখন মন থেকেও স্বাধীন হচ্ছেন। সাহসী, কঠিন এবং সফল ভাবে কিছু করার জন্য নিজের মনে সংকল্পও নিয়ে থাকেন আজকের মহিলারা। নতুন কিছু করে দেখাতেও শিখেছেন। দশ বিশ বছর আগেও পুরুষরা যা কল্পনাও করতে পারতেন না, আজ নারীরা সেইসব-ই করে দেখাচ্ছেন। তারা একে অপরের দ্বারা অনুপ্রাণিত হচ্ছেন। এই স্বাধীন ভারত নারীর উদীয়মান ছবি-ই তুলে ধরছে।
নিজেকে প্রমাণ করেছেন
একটি দেশের উন্নয়ন নির্ভর করে তার মানব সম্পদের ওপর। এক্ষেত্রে পুরুষ এবং নারী উভয়ে সমান ভূমিকা নিয়ে থাকেন। স্বাধীনতার পর আমাদের দেশেও নারী-পুরুষকে সমান অধিকার দেওয়ার চেষ্টা জারি থাকার কারণে, উন্নয়নের পথ খুলে দিয়েছে। নারী প্রতিটি ক্ষেত্রেই নিজের যোগ্যতা ও মেধার প্রমাণ দিয়েছেন। তা সে বিজ্ঞান, রাজনীতি, কর্পোরেট জগৎ, অভিনয় বা সামরিক ক্ষেত্র যাই হোক, মেডিসিন হোক বা ইঞ্জিনিয়রিং সবখানেই নারীরা তাদের যোগ্যতা দেখিয়ে চলেছেন। আজ পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে দায়িত্বেও আছেন নারীরা। রাষ্ট্রপতির আসনও অলংকৃত করছেন। শুধু তাই নয়, ঝুঁকিপূর্ণ কাজ যেমন ফাইটার পাইলট হয়ে দেশের প্রতিরক্ষার দায়িত্বও পালন করছেন। এইসব পরিবর্তন খুবই ইতিবাচক। বাবা হোক, ভাই হোক বা স্বামী হোক নারীর অবদানকে গুরুত্ব দিতে এবং সহযোগিতা করতে চাইছেন এখন বাড়ির পুরুষরাও।
ইচ্ছে মতো জীবনযাপন
বিশেষ করে মুম্বই এবং দিল্লির মতো ভারতের মেট্রো এবং বড়ো শহরগুলিতে বসতি গড়ে তোলার কাজেও অগ্রণী ভূমিকা নিচ্ছেন মেয়েরা। বলতে গেলে, নারীদের অবস্থার অনেক পরিবর্তন ঘটছে এখন। নারীদের আজ শারীরিক পুষ্টি ও মানসিক বিকাশে সমান সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। গভীর রাতে কাজ সেরে বাড়িও ফিরছেন তারা। নির্ভয়ে নিজের পছন্দ মতো পোশাক পরে এখন আনন্দে থাকতেও জানেন। নিজের ইচ্ছেমতো সঙ্গী বেছে নেওয়ার অধিকারও পেতে শুরু করেছেন।
পারিবারিক সম্মান
শিক্ষা ও সচেতনতা পারিবারিক জীবনেও প্রভাব ফেলেছে এখন। অবস্থার পরিবর্তন ঘটছে এখন। দাম্পত্য জীবনে হিংসার শিকার হওয়া নারীর হার ৩৭.০২ থেকে ২৮.৮ শতাংশে নেমে এসেছে। এই তথ্যও পাওয়া গেছে যে, শুধুমাত্র ৩.৩ শতাংশ গর্ভাবস্থায় নিপীড়িত হচ্ছেন। একটি সমীক্ষায় আরও জানা গেছে যে, ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সিদের মধ্যে ৮৪ শতাংশ পারিবারিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। ২০০৫-০৬ সালে এই সংখ্যা ছিল ৭৬ শতাংশ। সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী আরও জানা গেছে যে, এখন প্রায় ৩৮ শতাংশ মহিলা একা বা যৌথভাবে বাড়ির বা জমির মালিকানা ভোগ করেন।
আজকের পরিবর্তিত পরিবেশে নারীরা যেভাবে পুরুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছেন, সব মিলে উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সমাজ এবং এটা দেশের জন্যও গর্বের বিষয়। ব্যাবসা, রাজনীতি, প্রযুক্তি, নিরাপত্তাসহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই মহিলারা নিজেদের প্রতিষ্ঠা করে চলেছেন এবং সাফল্যও পাচ্ছেন। এখন এমন কোনও জায়গা নেই, যেখানে আজকের নারীদের উপস্থিতি নেই।
সম্প্রতি নারীর ক্ষমতায়নের দিকে অভূতপূর্ব পদক্ষেপ নিয়েছে ভারত সরকার। সংসদ ও রাজ্যের আইনসভায় নারীদের অংশগ্রহণও চোখে পড়ার মতো। প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। অবশ্য মুদ্রার অন্য দিকটিও বিবেচনা করার মতো। যেখানে আজও নারীদের ঘরের বাইরে যেতে দেওয়া হয় না। ধর্ষণ যখন ঘটে তখন আমাদের সমাজ নারীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা জোগায়। শুধু কন্যা-ভ্রূণ হত্যার মতোই বিষয়ই নয়, আজও অনেক ক্ষেত্রে নারীদের প্রয়োজন মতো এগিয়ে আসতে দেওয়া হচ্ছে না। আর এর সবচেয়ে বড়ো কারণ হল আমাদের সমাজ পুরুষ শাসন থেকে পুরোপুরি মুক্ত হয়নি।
এখনও অনেকে নারীকে পুরুষের ভোগ-বিলাসের বস্তু হিসেবে বিবেচনা করেন। বিজ্ঞাপন, চলচ্চিত্রের মতো ক্ষেত্রে অশ্লীল ভাবে তাদের প্রদর্শন করা হয়। আমরা যদি ভারতের কথা বলি, তাহলে দেখতে পাব যে, আমাদের দেশেও নারীদের অবস্থার আরও উন্নতি ঘটাতে হবে। উন্নত শিক্ষা-ই এর মাধ্যম হতে পারে।
আসলে, নারীর ক্ষমতায়নের দিকটি উন্নত হচ্ছে, তবে এখনও এমন কিছু ক্ষেত্র রয়েছে যেখানে আরও প্রচেষ্টার প্রয়োজন। শহরাঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা বিস্তৃত হয়েছে, তাই হয়তো শহরে মাতৃমৃত্যুর ঘটনা কমেছে কিন্তু গ্রামের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার খুব একটা পরিবর্তন হয়নি এখনও। ইউনিসেফের মতে, ভারতে সন্তান প্রসবের সময় মৃত্যুর হার কমলেও, তা এখনও দুশ্চিন্তামুক্ত করতে পারেনি। দেশে প্রতি বছর প্রায় ৪৫ হাজার মহিলা প্রসবের সময় মারা যায়।