স্বাধীনতার পর কেটে গেছে ৭৫টা বছর. কিন্তু সব ভালো জিনিসে কি অধিকার জন্মেছে মেয়েদের? সামাজিক ভাবে তারা এখনও কী কী বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার? আসুন জেনে নেওয়া যাক৷
বেতনে অসামঞ্জস্য
চ্যারিটি সংগঠনগুলির আন্তর্জাতিক স্তরের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা অক্সফেম-এর রিপোর্ট অনুসারে, ভারতে পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে বেতনের অসামঞ্জস্য রয়েছে। এটি পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলির তুলনায় সবচেয়ে বেশি প্রকট। মনস্টার স্যালারি ইন্ডেক্স (MSI)-এর বিচারে পুরুষ ও মহিলা উভয়ই একই ধরনের কাজের বিনিময়ে পুরুষরা মহিলাদের তুলনায় ২৫ শতাংশ বা তার অধিক পারিশ্রমিক পেয়ে থাকেন।
ভারতীয় সমাজে মহিলাদের উপর অত্যাচারের ঘটনা অত্যন্ত বেশি। বর্তমান সমাজে এই অপরাধ প্রবণতা এতটাই লাগামছাড়া যে, মহিলাদের সঠিক আচরণ বিধি শেখানোর পরিবর্তে পুরুষদের শেখানো দরকার মহিলাদের সম্মান করুন।
দেশের পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার কারণে ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স-এর ঘটনা ক্রমবর্ধমান। বিবাহের পর শ্বশুরবাড়িতে এসে স্বামী ও তার পরিবারের হাতে হেনস্থা হওয়া প্রায় নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা, সমাজের নানা স্তরে। একটি সার্ভের মাধ্যমে ৫৭ শতাংশ পুরুষ ও ৫৩ শতাংশ মহিলাদের অভিমত, স্বামীর হাতে স্ত্রীয়ে নির্যাতন বৈধ ও অতি সাধারণ একটি ঘটনা। হায় রে স্বাধীনতা, ৭৫ বছরেও মহিলাদের উপর অত্যাচার একটি স্বীকৃত সমাজ অনুমোদিত ঘটনা বলেই প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে আমাদের সমাজে!
২০১৫ থেকে ২০১৬-র মধ্যবর্তী সময়ে করা একটি সার্ভে অনুযায়ী জানা গেছে, ৮০ শতাংশ কর্মরত মহিলা, তাদের স্বামীর দ্বারা নির্যাতিত হন। ভারতীয় সেনায় মহিলাদের অংশগ্রহণ খুবই অল্প সংখ্যায় পরিলক্ষিত হয়। সাম্প্রতিক সময়ে এই অংশ গ্রহণের প্রবণতা আরও কমে গেছে বলে জানা গেছে। মহিলাদের সংখ্যা এক্ষেত্রে মাত্রই ০.৩৬ শতাংশ।
স্বাধীনতার ৭৫ বছর পেরিয়ে গেলেও মহিলারা মুক্তি পাননি কোন বিশেষ জিনিসগুলি থেকে, আসুন তা এবার দেখে নেওয়া যাক। বস্তুত স্বাধীনতার অর্থ প্রতিটি মানুষের কাছেই, অর্থাৎ পুরুষ-নারী নির্বিশেষে গুরুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত। কিন্তু মহিলারা আজও সামাজিক ভাবে নানা ক্ষেত্রে শৃঙ্খলিত। সমাজের নানা নিয়ম ও আচরণবিধির জিগির তুলে, বস্তুত তাদের বিকলাঙ্গ করে রাখা হয়। এদেশে জনসংখ্যার ৪৯ শতাংশ যেখানে মহিলা, সেখানে তাদের তো সংখ্যালঘু বলা চলে না। তবু সুরক্ষা, নির্বিঘ্নে যত্রতত্র গমন, আর্থিক স্বাবলম্বিতা, স্বেচ্ছায় বিবাহ করা বা না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং পিতসত্তাকেই সর্বাগ্রে স্বীকার করে নেওয়ার প্রবণতা থেকে মেয়েরা এখনও মুক্ত নয়। সিদ্ধান্ত নিতে তারা আজও অপারগ, সমাজে তাদের বক্তব্যকে প্রাধান্য দেওয়ার রেওয়াজ আজও নেই।