স্বাধীনতার ৭৫ বছর কেটে গেলেও  ভারতীয় মেয়েরা কি আদৌ সমাজে স্বাধীন হতে পেরেছে? আসুন খতিয়ে দেখা যাক৷

বিয়ের পর কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার স্বাধীনতা

ভারতে বহু সংখ্যক মহিলাই এখনও গৃহবধূ হয়ে জীবন অতিবাহিত করেন। এর মধ্যে অনেকেই হয়তো স্বেচ্ছায় এই সিদ্ধান্ত মেনে নেন কিন্তু এমনও বহু মহিলা আছেন যারা চাইলেও বেছে নিতে পারেননি চাকরি করার অপশন। বহু পরিবারই চান না, তাদের ঘরের বউ কর্মক্ষেত্রে পদার্পণ করুক। বিয়ে পর চাকরি করার স্বাধীনতা তাই বহু নারীরই খর্ব হয়।

ইচ্ছেমতো পোশাক চয়নের স্বাধীনতা

কিছুদিন আগেই বিতর্ক উস্কে তুলেছিলেন উত্তরাখণ্ডের মুখমন্ত্রী তীর্থ সিংহ রাওয়াত। তাঁর বক্তব্য ছিল হাঁটু দেখিয়ে ফাটা জিন্স পরা, মেয়েদের সংস্কারের বিপক্ষে। শুধু তীর্থই নয়, ভারতীয় সমাজে মেয়েরা কী ধরনের পোশাক পরবেন, তাও ঠিক করে দেন পুরুষ অভিভাবকরা। এই যদি আমাদের চিন্তাধারা হয়, তাহলে স্বাভাবিক ভাবেই নিজের পোশাক চয়নের অধিকার মেয়েদের থাকে না।

স্ত্রী শরীরের প্রতি পুরুষের অধিকারবোধ

সত্যি কথা বলতে কী, আজ মেয়েরা যেটুকু অগ্রসর হয়েছে, তা তাদের আত্মবিশ্বাস, পরিশ্রম আর ইচ্ছের জোরেই। কারণ সমাজ এখনও লিঙ্গ বৈষম্যকেই প্রাধান্য দেয়। মন নিয়ে কেউ ভাবিত নয়। শুধুই শরীর। স্ত্রীকে নিজের সম্পত্তি ভাবার হক পুরুষরা নিজগুণে অর্জন করে নিয়েছেন এমনটাই প্রকট হয়। শহরে মহিলাদের অগ্রসর হওয়ার ঘটনা দেখা গেলেও, এখনও ভারতের নানা প্রান্তে, প্রত্যন্ত গ্রামে মহিলারা শুধুই সন্তান উত্পাদনের একটি আধার।

বিশ্বের নানা সংসদে মহিলাদের অংশীদারিত্বের নিরিখে ভারতীয় মহিলাদের স্থান ১০৩ নম্বরে। অথচ সংসদে যোগদান করা মহিলাদের সংখ্যা আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র নেপাল, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানেরও যথেষ্ট বেশি।

লক্ষ্য এখনও অধরা

স্বধীনতার ৭৫ বছর পরেও ভারতে মহিলাদের অবস্থান খুব সন্তোষজনক নয়। আধুনিকতার বিস্তার হয়েছে ঠিকই কিন্তু কতটা তা মন ও মানসিকতায়, সে প্রশ্ন থেকেই যায়। আজও মেয়েরা নানা ধর্মীয় রীতিরেওয়াজ, যৌন শোষণ, লিঙ্গ বৈষম্য, অশিক্ষা, ম্যাল নিউট্রিশন, সামাজিক সম্মানহানির শিকার।

এই প্রতিকূলতার মধ্যেও বহু নারী সম্মানের শিখরে পেঁছেছেন। ইন্দিরা গান্ধি, প্রতিভা পাতিল, সুষমা স্বরাজ, নির্মলা সীতারমণ, মহাদেবী ভর্মা, সুভদ্রা চৌহান, অমৃতাপ্রীতম, মহাশ্বেতা দেবী, লতা মঙ্গেশকর, আশা ভোঁসলে, মায়াবতী, জয়ললিতা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মেধা পাটেকর, অরুন্ধতী রায়, চন্দা কোচর, পি টি উষা, সাইনা নেহওয়াল, সানিয়া মির্জা, সাক্ষী মালিক, পি ভি সিন্ধু, হিমা দাস, ঝুলন গোস্বামী, মিতালি রাজ, হরমনপ্রীত কউর, গীতা ফোগট, মেরি কম এমনই অসাধারণ নারীদের মধ্যে অন্যতমা।

৭০-এর দশকের গোড়া থেকেই ভারতে ফেমিনিজম শব্দের চর্চা। বেসরকারি সংগঠনগুলিও অগ্রণি ভূমিকা নিয়েছে মহিলাদের কাজে নিয়োগ করা ও আর্থিক ভাবে স্বশক্তিকরণের ক্ষেত্রে। হরিয়ানা, রাজস্থান, পশ্চিম-উত্তরপ্রদেশ কন্যাভ্রূণ হত্যার ঘটনায় রাশ টেনে, পুরুষ-নারীর পরিসংখ্যানে ভারসাম্য আনার প্রয়াস করা হয়েছে। কেন্দ্র সরকারের বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও, প্রচারে মেয়েদের সামাজিক অবস্থানেও শিক্ষায় উন্নতি করার প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে।

বর্তমানে মহিলাদের সমান অধিকার প্রদান, সুযোগ সুবিধার ক্ষেত্রে প্রসার ঘটানো ও বেতনে সামঞ্জস্য আনার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। পণের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ, রাষ্ট্রীয় মহিলা আয়োগের অন্তর্গত ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স-এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা, কর্মস্থলে যৌন হয়রানি রোখা প্রভতি বিষয়গুলির মধ্যে দিয়ে নারীকে সুরক্ষিত করার চেষ্টা শুরু হয়েছে। বেশ কিছু রাজ্যের গ্রাম ও নগর পঞ্চায়েতে মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণও করা হয়েছে।

আসলে সময় হয়েছে বোঝার, একটি দেশ তখনই অগ্রসর হতে পারে, যখন সে দেশের মহিলারা আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হন ও সামাজিক সম্মানের অধিকারী হয়ে ওঠেন। রাত ৯টার পর বাড়ির মেয়েদে বাইরে যেতে দিতে এখনও বহু পরিবারেরই বুক কাঁপে। মেয়েরা যতদিন না সুরক্ষিত হচ্ছে এবং পারিবারিক হিংসার কারণ থেকে বেরোচ্ছে কোনও সমাজ যথাযথ ভাবে স্বযংসম্পূর্ণ হয়েছে বলে দাবি করতে পারবে না।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...