অসম্ভব উল্লাসে কস্তুরীকে পিষে ফেলা হচ্ছে। ডানপায়ে যে অংশটা একটু আগে কাচে বিঁধে গেছিল সেটাও একটু একটু করে অবশ হয়ে যাচ্ছে। কেউ কি নেই ওকে উদ্ধার করে? ধারালো দাঁত দিয়ে টেনে ছিঁড়ে খাচ্ছে কস্তুরীর বুকের পেলব নরম মাংস।

হা ঈশ্বর! কস্তুরী ওর শেষ অস্ত্র দুহাত দিয়ে শয়তানটার মাথায় মুখে নখের আঁচড় দিয়ে চলেছে। কিন্তু কেন? কেন সরাতে পারছে না দানবটাকে? কেন আগেই কস্তুরী এখান থেকে চলে গেল না? মনে হচ্ছে অবশ পায়ের পাতার কাছটাতে গলগল করে কিছু একটা বেরিয়ে যাচ্ছে…। রক্ত। রক্ত বেরিয়ে যাচ্ছে কাটা অংশটা দিয়ে।

লোকটার হাত ক্রমশ কস্তুরীর শরীরটাকে ঘেঁটে চলেছে, ছিঁড়ে চলেছে। পৈশাচিক টানাহেঁচড়ার মধ্যে সজোরে হ্যাঁচকা একটা টান দিয়ে প্যান্টের দড়িটা খুলে দেয় লোকটা। কস্তুরী চিত্কার করছে। কিন্তু ওর চিত্কার অস্পষ্ট গোঙানি হয়ে ঘরের মধ্যেই ঘুরছে। বাইরের পৃথিবীর কাছে পৌঁছোচ্ছে না।

একটা কঠিন অংশ কোনও বাধা না পেয়ে ওর শরীরের নরম অংশে আঘাত করতে করতে ঢুকে যাচ্ছে। বারবার ঢুকে যাচ্ছে।

কস্তুরীর মাথাটা অদ্ভূত ভাবে হেলে আছে। বুজে আসা চোখের কোণায় জড়ো হয়ে আছে একতাল শুকনো জল।

( ৯ )

চোখের কোণের জলের দাগগুলো মুছে কস্তুরী বলে, ও তো আমাকে জানাতে পারত? আপনাকে জানাল আর আমাকে…।

তমালের হয়তো বাধোবাধো ঠেকেছে। আর তাছাড়া বাড়িতেও তোমাকে নিয়ে অশান্তি তো কম হয় না…। শৈবালের কথাগুলো কানে আসছিল কিন্তু কোনও কিছুরই স্পষ্ট করে মানে খুঁজে পাচ্ছিল না কস্তুরী।

কে তমালের মনে বিষ ঢোকাচ্ছে। কে হতে পারে? ফেসবুকে তমালকে খুঁজে বের করেছে। কস্তুরী যে তমালের স্ত্রী সেই বা কী করে জানবে। পায়েলের সঙ্গেও তো বহু বছর আর যোগাযোগ নেই। কস্তুরীর বিয়েতেও ওর দিদি আসেনি। তাই সেদিক থেকেও যে-কোনও খারাপ ইঙ্গিত আসবে এমনটাও তো মনে আসছে না। তবে?

স্ট্রেঞ্জ!

কিন্তু কস্তুরীকে এত নিখুঁত ভাবে কে চেনে? শৈবালের মুখে নিজের শরীরের এতটা ডিটেইল শুনতে শুনতে মানসিক লজ্জা, যন্ত্রণায় মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছিল কস্তুরীর। তমালকে কেউ এসব কথা খুঁটিয়ে ফেসবুক মেসেঞ্জারে জানিয়েছে। আর তমাল বলেছে শৈবালকে। কীভাবে পারল তমাল একটা বাইরের লোককে…?

তমাল এখন গুমরে থাকে মনের মধ্যে। দশটা কথা বললে বড়ো জোর একটা কথার উত্তর দেয়। ওর মনের তল পাওয়া বড়োই কঠিন। তবে ইদানীং যে আরও কম কথা বলছে সেটা ও লক্ষ করেছে। এর পেছনে যে এই নির্দিষ্ট কারণটা আছে তা তো জানত না তখন।

কী হল কী ভাবছ? হঠাৎই বিপরীত দিকের চেয়ার থেকে হাত বাড়িয়ে কস্তুরীর আঙুলটা ছুঁয়ে বলে শৈবাল।

না ভাবছি না কিছু…। হাত সরিয়ে নেয় কস্তুরী।

ভাবছ তো নিশ্চয়ই। তোমার চোখ দেখে বোঝা যাচ্ছে। টেনশন কোরো না। ভেবে আর কী করবে বলো? আমি একটা না একটা উপায় ঠিক বের করে দেব। যদিও আমি বাইরের লোক। আমার মতামত তুমি নাও নিতে পারো। কিছুটা অভিমানের সুরে বলে শৈবাল।

তা ঠিক নয়, আসলে…।

আসলে আমাকে ঠিক বিশ্বাস করে উঠতে পারো না তাই তো…? নিজের চেয়ার থেকে উঠে সোজা একেবারে ঘেঁষাঘেঁষি চেয়ারে এসে বসে শৈবাল।

তোমাকে একটা কথা বলব? সরাসরি প্রশ্ন করে।

বলুন…। আমরা কথা বলছি প্রায় এক ঘন্টারও বেশি হয়ে গেল। এবার আমি উঠব। কস্তুরী ব্যাগ কাঁধে উঠে দাঁড়ায়।

শৈবালের তাকানোটা কেমন অন্যরকম লাগছে। অস্বস্তি অনুভব করছে।

হুম আমারও মিটিংটা অ্যাটেন্ড করতে হবে। জাস্ট ওয়ান মিনিট প্লিজ। যে কথাটা বলছিলাম। তোমাকে আজকে অসম্ভব সুন্দর দেখাচ্ছে। তোমার ওই চোখদুটো…। তুমি কি করে জানলে আমার ফেভারিট কালার কমলা। তোমার শাড়ির রংটাও হুবহু। ঠিক যেন… ঠিক… তোমাকে শাড়ি পড়লে অদ্ভুত মায়াময় লাগে। তবে কস্তুরী আমি বুঝতে পারি তুমি মনে মনে খুব কষ্টে আছ। এত কষ্ট নিজের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছ কেন বলো তো? মন খুলে বাঁচো। এই পৃথিবীতে কেউ তোমার জন্য কিচ্ছু করবে না। তাই কারুর জন্য নিজের ভালোলাগাগুলোকে এভাবে বাদ দিও না। প্লিজ! আমার খারাপ লাগবে। আচ্ছা একটা জব তো অন্তত জয়েন করতে পারো, ঘরে বসে বোর না হয়ে আর তমালেরও খানিকটা হেল্প হবে। ভেবে দেখতে পারো।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...