আমাদের ড্রাইভার বলেছিল যে, রোটাং পাস ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল সাদা বরফের চাদরে আবৃত থাকে। অধিকমাত্রায় বরফ পড়লে গাড়ি যেতে পারে না। সম্পূর্ণ রাস্তা ব্লক হয়ে যায়। অল্পস্বল্প বরফ এখানে পর্যটকরা ভীষণ উপভোগ করেন। এখানে স্কিং, স্লেজিং, প্যারাগ্লাইডিং ইত্যাদি নানারকম অ্যাডভেঞ্চার ক্রিয়াকলাপ পর্যটকদের জন্য রাখা হয়। যেহেতু আমরা অক্টোবরের শুরুতে গিয়েছিলাম, তাই বরফের দেখা মেলেনি। বরফ না মিললেও সবুজের চাদরে আবৃত রোটাং পাস দু-চোখকে ভীষণ ভাবে আরাম দিচ্ছিল।
ড্রাইভার যথাস্থানে গাড়ি পার্ক করল। গাড়ি থেকে নেমে দেখলাম কিছু পর্যটক এটিভি বাইক ভাড়া করছেন রোটাং লেক এবং পাহাড়ের উপরের ভিউ পয়েন্টে যাওয়ার জন্য। আমরাও তাদের দেখে এটিভি বাইক ভাড়া করলাম। দরদাম করে মাথাপিছু ১০০০ টাকা ভাড়া ঠিক হল। রাস্তা এখানে বড্ড খারাপ। চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আধ ঘণ্টার মধ্যেই গাড়ি সেই ভিউ পয়েন্টে নিয়ে এল। বাইকচালক জানাল যে, ভিউ পয়েন্ট থেকে ফেরার পথে লেক দেখিয়ে নিয়ে যাবে।

বেশ জমজমাট ভিড় উপরে। সকলেই প্রায় বাইক থেকে নেমে ছবি তুলতে ব্যস্ত। রৌদ্রোজ্জ্বল দিন। সূর্যের সোনালি আলো পাহাড়ের গায়ে পড়ে যেন পিছলে যাচ্ছে। পায়ের তলায় ঘাসের সবুজ গালিচা, উপরে নীল উন্মুক্ত আকাশ, সবুজ গাছগাছালিতে ঘেরা উপত্যকা, নাম না জানা পাহাড়ি ফুলের মেলা, কত শত কোটি বছর ধরে মেঘ গায়ে মেখে হিমালয়ের অসীম শূন্যতাকে ছুঁতে চাওয়ার প্রচেষ্টা— এই দৃশ্য এককথায় অবর্ণনীয়। চোখে না দেখলে সে তৃপ্তির আস্বাদ অসম্ভব। কিছু মুহূর্তকে আমরা লেন্সবন্দি করলাম। ঠান্ডা হিমেল বাতাস প্রাণে ছুঁয়ে যাচ্ছে।
আমরা চারিদিকটা অবিন্যস্ত ভাবে ঘুরে এটিভি বাইকে উঠলাম রোটাং লেকে যাওয়ার জন্য। বিস্তীর্ণ ধূলিধূসর পাথুরে পথ ধরে বাইকচালক আমাদের নিয়ে এল রোটাং লেকে। পাহাড়ের উপর থেকে নেমে আসার পর সূর্যালোক কমে যাওয়ায় ঠান্ডাটা প্রবল থেকে প্রবলতর হয়েছে। বাইকচালক জানাল, লেকে যে-পরিমাণ জল থাকে, এই অক্টোবরে জল কিছুটা কম। শীতকালে বরফে জমে যায়। এই লেক। জলে নীল আকাশের প্রতিচ্ছবি পড়ে আরও মোহময়ী করে তুলেছে লেকটিকে। আমরা লেকের চারিদিক ঘুরে বাইকে করে নেমে এলাম, যেখানে আমাদের পূর্বের ড্রাইভার অপেক্ষা করছিল।





